Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গগুলো কি একই? টিকা কি এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম?

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গগুলো কি একই? টিকা কি এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম?

- প্রতিকী ছবি।

সারা বিশ্বেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ, এটি প্রাথমিকভাবে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ নামেই পরিচিতি পায়। ধারণা করা হচ্ছে, 
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রায় সব করোনা সংক্রমণের জন্য দায়ী এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই অন্যান্য দেশেও মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এই ভ্যারিয়েন্ট। ১৮ জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রায় ৭৬ হাজার মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। 

দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার গ্লোবাল হেলথ টিম এ ভ্যারিয়েন্ট, টিকা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশ্নোত্তর পর্বের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে। 

ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কী?

করোনাভাইরাসের এই ধরনটি প্রথমে ভারতে শনাক্ত হয়। এটি বি.১.৬১৭.২ নামেও পরিচিত। সারা বিশ্বের জন্যই করোনার এ ধরনটি ‘বিপজ্জনক’। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আরও দুটো ভেরিয়েন্টের নিকটাত্মীয়—বি.১.৬১৭ ও বি.১.৬১৭.৩। শেষ দুটো ভ্যারিয়েন্টও প্রথমে ভারতে শনাক্ত হয়।

ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট কী?

২২ জুন মূল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পরিবর্তিত রূপকে ভারত ‘ডেল্টা প্লাস’ নাম দেয়। মহারাষ্ট্র, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশে ৪০টি কেস শনাক্ত হওয়ার পর পরিবর্তিত ধরনটির এই নাম দেওয়া হয়।

ভারতের জিনোম সিকোয়েন্সিং সংস্থা ‘ইনসাকগ’ জানিয়েছে, ডেল্টা প্লাসের সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। এটি ফুসফুসের কোষের সঙ্গে আরও সহজে আটকে যায়। এবং এই ধরন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির সাহায্যে করা চিকিৎসা প্রতিরোধেও সক্ষম।

১৬ জুন পর্যন্ত ১০টি দেশে ডেল্টা প্লাস ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ভারতসহ বিশ্বজুড়ে এই ধরনের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে। 

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, যেসব এলাকায় এই ধরন শনাক্ত হবে, সেখানে নজরদারি, করোনা পরীক্ষা, টিকা প্রদানের হার বাড়ানো উচিত।

উপসর্গ কি আলাদা?

কিছু ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে নতুন এই ধরনের উপসর্গ করোনার পুরনো উপসর্গ—জ্বর, কাশি ও স্বাদ-গন্ধ হারানোর চেয়ে কিছুটা আলাদা।

৪০ লাখের বেশি মানুষের ওপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে নতুন ডেল্টা প্লাস ধরনটিতে মাথাব্যথা, গলাব্যথা, সর্দি এসব উপসর্গ বেশি দেখা যায়। 

তবে সব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণেই মাথাব্যথা দেখা গেছে। তাই সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন। কাজেই, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, সন্দেহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট করানো উচিত।

ডেল্টা প্লাস ধরন কতো দ্রুত ছড়ায়? 

ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠার মূল কারণ হচ্ছে, এই ধরনটি অন্যান্য ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচি)-এর ড. সুজান হপকিন্স বলেছেন, ঠিকমতো বিধিনিষেধ আরোপ করা না হলে ধরনটির রিপ্রডাক্টিভ নাম্বার ৭ পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এর মানে, এই ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত প্রতি ব্যক্তি ৭ জন করে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারবেন। অথচ করোনার মূল ভাইরাসের রিপ্রডাক্টিভ নাম্বার ছিল ৩-এর কাছাকাছি। আর আলফা ভ্যারিয়েন্টের রিপ্রডাক্টিভ নাম্বার ৪ থেকে ৫। 

পিএইচই জানিয়েছে, আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।

সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি কেনো?

করোনাভাইরাস প্রোটিনের স্পাইকে আবৃত থাকে। এই প্রোটিন স্পাইকগুলো গিয়ে মানুষের শরীরের কোষের সঙ্গে আটকে যা। এভাবেই করোনা সংক্রমিত হয়। করোনার আগের ধরনগুলোর স্পাইক নিখুঁত ছিল না। সেগুলো সবসময় মানব কোষের প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারতো না। 

কিন্তু এল৪৫২আর নামের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মূল পরিবর্তনই হয় এর স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইকগুলো পরিবর্তিত হতে হতে ডেল্টা ধরনে এসে প্রায়-নিখুঁত হয়ে উঠেছে। ফলে এই ধরনের স্পাইক খুব সহজে মানবকোষের প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। এ কারণেই ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি।

টিকা কি এই ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে?

এক কথায় উত্তর দিতে হলে—হ্যাঁ। তবে একটু বিস্তারিত জবাব দিলে—হ্যাঁ, পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে টিকাকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে একটু কম কার্যকর মনে হয়েছে, বিশেষ করে এক ডোজের পর।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড-এর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, আলফা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকার এক ডোজ ৪৯ শতাংশ কার্যকর, এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৩১ শতাংশ কার্যকর। 

দুই ডোজের পর টিকা অবশ্য আলফা ও ডেল্টার বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৮৮ ও ৮০ শতাংশ কার্যকর।

এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে কি মহামারির তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে?

যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধরনটি যদি আসলেই ততটা সংক্রামক হয় তবে সংক্রমণের হার এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ, তখন সংক্রমণের গতির সঙ্গে সমান তালে টিকা দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাবে না। কাজেই এই ভেরিয়েন্টের কারণে মহামারির তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

নিরাপদ থাকার জন্য করণীয় কী? 

টিকা নিন—দুই ডোজ টিকাই নিন। এবং আশপাশের সবাইকেও টিকা নিতে উৎসাহিত করুন। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।