Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর

ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর

।। জবাব লিখেছেন- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী ।।

রফিকুল ইসলাম সেলিম, কানকিপুর, কবিরহাট, নোয়াখালী।

প্রশ্ন: স্বাভাবিক অবস্থায় কবরের উপর কবর দেওয়া জায়েয আছে কি? স্বাভাবিক অবস্থায় জায়েয না হলে কোন্ অবস্থায় জায়েয?

উত্তর: ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের ভাষ্য মতে অতিশয় পুরাতন কবর, যে কবরের লাশ পচেগলে মাটির সাথে মিশে গেছে, সে কবরের উপর মাটি ফেলে তারপর নতুন করে কবর দেওয়া যেমন জায়েয, তেমনি জায়েয সে কবর পুনঃখনন করে তাতেই দাফন করা। কিন্তু লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার আগে সে কবরেই নতুন লাশ দাফন করা নাজায়েয। তবে স্থানাভাব বা এধরনের বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পুরাতন কবরের লাশ মাটির সাথে মিশে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হোক বা না হোক, মাটি ফেলে উঁচু করে তার উপর নতুন করে কবর দেওয়া জায়েয। (সূত্র- ফাতওয়ায়ে শামী-১/৮৩৫, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যা-১/১৬৭, বাহরুর রায়েক্ব-২/১৯৫, আল-মাওছূআতুল ফিক্বহিয়্যা-২১/১৯, আল্ ফিক্বহিল ইসলামী-২/৫৩২, গুনিয়াতুল মুস্তামলী-৬০৭ পৃঃ, আহ্সানুল ফাতওয়া-৪/২৫০, ফাতওয়ায়ে মাহমূদিয়্যা-৭/২৩৫)।

রাশেদুল ইসলাম, পূর্ব ধলা, নেত্রকোনা।

প্রশ্ন: আমাদের এলাকার কয়েকটি মাদ্রাসার মসজিদে প্রতিদিন যোহর নামাযের পর সূরা ইয়াসীন এবং ইশার নামাযের পর সূরা মুলক নিয়মিত তিলাওয়াত করা হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এ নিয়মটা শরীয়ত সম্মত কি-না।

উত্তর: ছাত্রদের শিক্ষা প্রদান ও শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যদি এসব মাদ্রাসার মসজিদগুলোতে সকল ছাত্রদের মাঝে মাঝে সম্মিলিতভাবে এসব সূরা পড়ার নিয়ম চালু করা হয়ে থাকে, তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি একটি ভাল কাজ। কেননা, প্রতিদিন এসব সূরা তিলাওয়াত করার প্রতি হাদীস শরীফে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্য ছাড়া এভাবে সকলে সম্মিলিতভাবে তিলাওয়াত করাকে জরুরী মনে করে করা মাকরূহ্ হবে। কারণ কুরআন তিলাওয়াত করলে তা শ্রবণ করা ওয়াজিব, যা এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য ছাড়া এটাকে স্থায়ীভাবে জরুরী কোন নিয়মে পরিণত করে নেওয়া জায়েয হবে না। কেননা কোন মুস্তাহাব কাজকে জরুরী মনে করে একত্রি হয়ে আদায় করা নাজায়েয। (সূত্র- মুহীত-৫/৩১৭, দুররুল মুখতার-২/১২০, ফাতওয়ায়ে শামী-২/১২০, আহ্সানুল ফাতওয়া-১/৩৩৮, ইমদাদুল মুফতিয়্যীন-২৫৪ পৃঃ)।

মাওলানা জসিম উদ্দীন, সাহাইল মাদ্রাসা মসজিদ, টঙ্গিবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ।

প্রশ্ন: খুর/ব্লেড দিয়ে দাড়ি সেভ করলে নাকি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কলিজায় আঘাত লাগে। এ ধরনের কোন হাদীস আছে কি?

উত্তর: আমাদের জানা মতে সরাসরি এ ধরনের কোন হাদীস নেই। তবে হাদীসের ভাবার্থে এর সমর্থন পাওয়া যায়। দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দায়েমী সুন্নাত। কেউ যদি দাড়ি কর্তনের গুনাহ্য় লিপ্ত হয়, তাহলে তার আমলের ফিরিস্তী যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করা হবে, তখন তিনি অবশ্যই ব্যথিত হবেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে কথাটি যথার্থ। কথিত আছে, জনৈক বুর্যুগ এক লোককে দাড়ি কাটতে দেখে আশ্চর্য হয়ে বল্লেন, তুমি একি করছো! দাড়ি কাটছো? লোকটি বল্ল, হ্যাঁ দাড়ি কাটছি। কিন্তু কোন মুসলমানের হৃদয়ে আঘাত দিইনা। বুযুর্গ বল্লেন, মুসলমানের মনে আঘাত দাওনা বটে, কিন্তু স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয়ে আঘাত দিচ্ছো। (সূত্র- ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যা-৬/২৪২)।

মিস ফাতেমা আক্তার রিপা, গোয়াইনঘাট, সিলেট।

প্রশ্ন: আমরা জানি মাতা-পিতার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত। মনে করুন কোন মাতা-পিতা তাদের বিয়ের উপযুক্ত ছেলেমেয়ে ঘরে রেখে পরস্পরের সাথে ঝগড়া করে রাগ-অভিমান করে আছেন। এখন এই রাগ ভাঙ্গিয়ে তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে কীভাবে বেহেশত লাভ করা যাবে?

উত্তর: প্রশ্নোল্লিখিত ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে তাদের কোন কথা বা আচরণ নিয়ে যদি মাতা-পিতার মাঝে মনোমালিন্য হয়ে থাকে, তাহলে ছেলেমেয়েদের উচিত- যে কোন উপায়ে মাতা-তিপার রাগ ভাঙ্গিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করা। মাতা-পিতা অসন্তুষ্ট থাকলে ছেলেমেয়েদের দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হওয়াসহ আরও অনেক আযাবের কথা কুরআন-হাদীসে এসেছে। তাই যেভাবেই হোক না কেন, তাদের রাগ-অভিমান ভাঙ্গিয়ে সন্তুষ্ট করতেই হবে।

তদুপরি তারা যদি তাদের নিজেদের ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করে অভিমান করে থাকেন, তাহলে ছেলেমেয়েদের কোন দোষ নেই। তবুও যতদূর সম্ভব মাতা-পিতার রাগ ভাঙ্গিয়ে গৃহে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত। সে চেষ্টা ফলপ্রসূ না হলে তাদের কিছু করার নেই। আর এতে কোন ক্ষতিও হবে না। (সূত্র- মিশকাত শরীফ-২/৪১৮, ৪১৯ ও ৪২১, হাশিয়া নং- ৪)।

জবাব লিখেছেন- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী। ফাযেলে দারুল উলূম দেওবন্দ (দাওরা ও ইফতা)। মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা। উপদেষ্টা সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ডটকম।

নোটঃ উম্মাহ ২৪ডটকম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে আপনিও চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন অবশ্যই ইসলাম ধর্মবিষয়ক হতে হবে। প্রশ্নের আকার ছোট হতে হবে এবং একক বিষয়বস্তুর হতে হবে। প্রশ্ন পাঠানোর জন্য editor@ummah24.com এই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।