Home শীর্ষ সংবাদ ‘ঐক্যের মাধ্যমে এই জালেম সরকারের পতন হবে ইনশাআল্লাহ’: মতবিনিময় সভায় আল্লামা কাসেমী

‘ঐক্যের মাধ্যমে এই জালেম সরকারের পতন হবে ইনশাআল্লাহ’: মতবিনিময় সভায় আল্লামা কাসেমী

জাতীয় প্রেসক্লাবে জমিয়তের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

উম্মাহ সংবাদদাতা: জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তাফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করতে হবে। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সকল উদ্যোগ বন্ধসহ ইভিএম ক্রয়ের জন্য সরকারী বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। সাথে সাথে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এসব দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আধিপত্যবাদ বিরোধী সকল দল ও ব্যক্তিকে এক কাতারে এসে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে  ২০ দলীয় জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলসমূহের নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্বাগতঃ বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী।

আরো বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, মুসলিমলীগের মহাসচিব কাজি আবুল খায়ের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন আহমদ মনি প্রমূখ।

মতবিনিময়সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন দলের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, অর্থ সম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান ও দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার ছয়ঘরীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর জমিয়ত, যুব জমিয়ত ও ছাত্র জমিয়ত নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকে জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আজকে গোটা জাতিকে যে সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, এটা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সকলকে জোরদারভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। আমার আত্মবিশ্বাস, আজ জাতি জেগে ওঠেছে। আজ জাতি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের জন্য একতাবদ্ধ হয়েছে। এই ঐক্য টিকে থাকবে। এই ঐক্যের মাধ্যমে এই জালেম সরকারের পতন হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, এর জন্য আমরা মাঠে নেমেছি। এর জন্য আমরা সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের কর্মসূচী চালিয়ে যাব। আমরা প্রথমে চেষ্টা করব, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে। শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান করা না হয়, বিরোধী দল অপারগ হবে রাস্তায় নামতে এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। আমাদেরকে বাধ্য করবেন না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।

আল্লামা কাসেমী বলেন, সরকারকে আমি বিশেষভাবে এই আহবান জানাচ্ছি, আমদের কথা স্পষ্ট। দেশের প্রতিটি মানুষের জান, মাল, ইজ্জত, আব্রু, এটা তার মৌলিক অধিকার। তার জান, মাল, আব্রু, ইজ্জত হরণ বা ক্ষতি সাধন করার অধিকার কারো নেই। বিশেষ করে সরকারের দায়িত্বে পড়ে- প্রতিটি নাগরিকের জান, মাল, ইজ্জত, আব্রুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে মানুষ গুম হচ্ছে, নির্বিচারে খুন হচ্ছে, মানুষের জীবনের আজ নিরাপত্তা নেই, বাক স্বাধীনতা নাই, মিটিং মিছিলের কোন সুযোগ নাই। এভাবেই জাতিকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এভাবে একটা দেশ, একটা সমাজ চলতে পারে না।

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই। নির্বাচন অতি নিকটে এসে গেছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রায় আসন্ন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্ষমতাসীন দল একগুঁয়েমি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আয়ত্বে রেখে একতরফাভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে স্পষ্টতই মনে হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের সম্পূর্ণরূপে আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। অপরদিকে বিরোধী প্রায় সকল রাজনৈতিক দল চলতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে স্বচ্ছভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে অনঢ় অবস্থান নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে সংকট আরো ঘনিভূত হয়ে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা জেগেছে। এমন অপ্রত্যাশিত ও সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে ‍উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা উল্লিখিত দাবীসমূহ তুলে ধরছি। সরকার জনমতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করলে এটা সকলের জন্যই কল্যাণকর।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করছি সকল রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে একটা দৃঢ় অবস্থান নিতে পারলে ক্ষমতাসীন দল ষড়যন্ত্রের পথ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হবে এবং সংঘাতমুখর পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে।

জমিয়তের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখানে অনেক ভুক্তভোগী আছেন, যারা অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখানে এমন অনেকেই আছেন, যারা তাদের সতীর্থদেরকে হারিয়েছেন একটা ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের কারণে। এখানে অনেকে আছেন, যারা নিজেদের সহকর্মীদের রক্তও দেখেছেন।

তিনি বলেন, এই একটা পরিস্থিতি বাংলাদেশে বর্তমানে সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে আমরা একটা ভয়াবহ দুঃশাসনের যাঁতাকলে পাড়ে আমাদের জনগণের সকল আশা আকাঙ্খা, আমাদের জনগণের সকল স্বপ্ন ও আশাকে ধুলিস্ম্যাত করে দেওয়া হয়েছে।  আমরা বার বার বলেছি, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসে জাতি। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, কোন একজন ব্যক্তিবিশেষ বা কোন নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। কোন ব্যক্তি বিশেষ বা নির্দিষ্ট দলকে বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়। বা কোন দেশকে বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। আমরা সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, সকল মানুষের বাক স্বাধীনতা, তার মৌলিক অধিকার প্রয়োগ, তার জীবিকার জন্য তার কাজ করার স্বাধীনতা, একটা উন্নয়নমূলক বাংলাদেশ, কল্যাণমুখী বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য আমদের, আজকে ৪৭ বছর পরে এসে সেই বাংলাদেশের কোন্ চেহারা আমরা দেখতে পাচ্ছি? সেই বাংলাদেশের কোন অবয়ব আমাদের সামনে ভেসে উঠছে? আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে কোন দৃষ্টান্ত আমরা সৃষ্টি করেছি?

বন্ধুগণ, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, েএকটা ভয়াবহ দুঃশাসনের যাঁতাকলে এই দেশের জনগণ নিষ্পেষিত হচ্ছে।

বক্তব্যে আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন,  নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, এই কমিশন তাদের কথাই শুনবে। অন্য কারো কথা শুনবে না। নতুন করে কিছু বলার নাই। আমরা ৪টা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দেখেছি। আমরা তো পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনে তো যেতেই হবে আমাদেরকে। কারণ, আমরা তো রাজনৈতিক পার্টি। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের পরিবর্তন চাই। করতে হবে তাই। কিন্তু কোন নির্বাচন? যে নির্বাচনে কথা বলার সুযোগ থাকবে না, ক্যাম্পেইন করার সুযোগ থাকবে না, ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না, জনগণ নিজের ভোট দিতে পারবে না, সেই নির্বাচন কি নির্বাচন হবে? হবে না।

তিনি  বলেন, আমরা কিছু দিন আগে একটা সরকারী প্রজ্ঞাপন দেখেছি। সেই প্রজ্ঞাপনে পুলিশকে বলা হয়েছে, তোমরা প্রিজাইডিং অফিসার, এসিসটেন্স প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার; তাদের নাম তালিকা করে পাঠাও। কি চমৎকার কথা। নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন নাই, পুলিশ এসব তালিকা করে পাঠাবে। কি চমৎকার, যারা এখন বিরোধী দলের শক্তিশালী নেতা আছে, তাদের নাম তালিকা করে পাঠাও, আমরা তাদেরকে আগেই গ্রেফতার করে রাখব। এখন শুরু হয়ে গেছে সেই প্রক্রিয়া।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এভাবে নির্বাচন হবে না। খুব পরিষ্কার কথা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সবার আগে মুক্তি দিন। নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করুন। সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মী, যাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, গ্রেফতার করেছেন, মামলা প্রত্যাহার করুন, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিন। এবং সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করুন। নির্বাচন কালীন সময়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটা নির্দলীয় সরকার গঠন করুন। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে পুনর্গঠন করুন। এই সমস্ত ভাঙা লোক দিয়ে নির্বাচন হবে না। সাহসী লোক লাগবে। পুলিশ দেখলেই ভয় পায়, তারা নির্বাচন পরিচালনা করবে কীভাবে?  সুতরাং এই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, নির্বাচনের সময়ে অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে। আমরা বলেছি, সকল দলকে সমান স্পেস দিতে হবে। আর ইভিএম চলবে না। কেন চলবে না? কারণ, ইভিএমে এক কে দশ বানানো যায়, একশতও বানানো যায়।

মতবিনিময় সভায় স্বাগতঃ বক্তব্যে জমিয়ত সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, বিগত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে জাতীয় সংসদের যে নির্বাচন করেছে, পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন, ইদানিংকালে খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের যে চিত্র দেখা গেছে, এতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ বহাল রেখে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষতা এবং তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কি আদৌ আশা করা যায়? অবশ্যই না।

তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল সংবিধানের দোহাই দিয়ে থাকে। সংবিধান কি কোন অকাট্য বিষয় যে, তাতে পরিবর্তন আনা যাবে না? অথচ তারা নিজেদের প্রয়োজনে যখন তখন সংবিধান কাটাছেঁড়া করে আসছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সনে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আওয়ামী লীগ কি ভূমিকা রাখেনি? বরং শুধুমাত্র একটি ধারা পরিবর্তনের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ১৫ই ফ্রেব্রুয়ারী নির্বাচন করা হয়েছিলো। তখন পারলে এখন কেন পারা যাবে না? এখন তো জাতীয় সংসদ বহাল আছে। তাই এই সংবিধানের দোহাই দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পাঁয়তারা কি দুরভিসন্ধি মূলক নয়?

মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের অব্যাহত বেপরোয়া গুম-খুন, নির্যাতন ও অর্থ কেলেংকারী- যা সকল মাত্র ছাড়িয়ে গেছে, গণস্বার্থ উপেক্ষা করে তাদের এই অপশাসনের পিছনে খুঁটির জোর কোথায়, তা চিহ্নিত করার কি সময় আসেনি?

তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনে ইভিএম যন্ত্র ব্যবহারে নেতিবাচক মতামত পেয়েছেন। এতদসত্ত্বেও সরকারের নিকট বাজেট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকার বাজেট অনুমোদনও করেছে। এছাড়া বর্তমান কমিশনের অধীনে যে কয়টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। বরং ভোট জালিয়াতি ও পেশী শক্তির সহযোগিতা করে গেছে। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার আদৌ কি কোন বাস্তবতা আছে?

বিশেষ অতিথি মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এবং বাকী যেসব আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে আমরা দেখেছি ভোটারের উপস্থিতি ছিল না, কুকুর ঘুমিয়েছে। আজকেও বর্তমান সরকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন। সন্ত্রাস আর গুমের রাজত্ব কায়েম করেছেন। ধর্ষনের রাজত্ব কায়েম করেছেন। দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন। এই সমস্ত দুর্নীতি করে, সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। যেসব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আজকে এখানে হাজির হয়েছেন এবং যারা উপস্থিত হননি, তাদের সকলের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বৃটিশবিরোধী আন্দোলন করেছে। আজকে একশত বছর যাবত, সকল বাতিলের বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে লড়াই করেছেন। বর্তমান জালেম সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য জমিয়ত আপনাদের পাশে আছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।

মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব আরো বলেন, আজকে যে সকল রাজনৈতিক দল সরকারের জুলুম-নির‌্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, যে সকল রাজনৈতিক দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছেন, যেসকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করার কথা বলছেন, যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কথা বলছেন, যে সকল রাজনৈতিক দল ইভিএম এর বিরোধীতা করেছেন, তাদেরকে অনুরোধ করব, ঐক্যব্ধভাবে আপনারা সকলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুললে বর্তমান সরকার পালানোর পথও খুঁজে পাবে না।

মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব বলেন, একজন স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, একজন সেনাপ্রধানের স্ত্রী, তিন তিন বার দেশের সফল একজন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে একটি পরিত্যক্ত কারাগারে নির্লজ্জভাবে বন্দী করে রেখেছেন। তাঁর চিকিৎসার অধিকারটুকু পর্যন্ত হরণ করা হয়েছে। কোন রাষ্ট্রে বাস করছি আমরা! তাঁর চিকিৎসার অধিকার- এটা তার নাগরিক অধিকার। এটা তার ব্যক্তি অধিকার। এটা গোটা বাংলাদেশের ১৮ কোটি নাগরিকের দাবীতে পরিণত হয়েছে। আজকে তাঁকে পরিত্যক্ত সেই কারা প্রকোষ্ঠে যেভাবে রাখা হয়েছে, এভাবে কোন সাধারণ মানুষকেও রাখা হয় না। আজকে এই সভা থেকে দাবি জানাতে চাই, অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, মুক্তি দিতেই হবে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, আজকে দেশ এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, রাস্তায় নামা যায় না। রাজপথে কোন মিটিং করা যায় না। এমনকি, মানব বন্ধনের মতো একটি নিরীহ কর্মসূচীও পুলিশের অনুমতি ছাড়া করা যায় না। তারা যাকে ভাল লাগে অনুমতি দেন, যাকে ভাল লাগে না অনুমতি দেন না। আজকে দেশে  গণতন্ত্র বন্দী। মানুষের বিবেক আজ বন্দী হয়ে আছে। কথা বলা বন্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না।

ড. আহমদ আব্দুল কাদের আরো বলেন, আজকে সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। ২০ দলীয় জোট এবং ১৪ দলের বাইরে অন্য সকল দল, জোট ও সাধারণ মানুষ বলছে, দলীয় সরকারের অধিনে কোন নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন। আমরা বার বার জানিয়েছি, এখনো করছি, ইলেকশন করতে হলে নির্দলীয় সরকার গঠন করতে হবে। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রাকীব বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, এই দেশ আপনার একার নয়। ৬৯ এর পাত্রিকাগুলো পড়েন, আপনি জানতে পারবেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সহ আপনার বাবাকে কারা মুক্ত করে এনেছে। আমরা আপনি যদি শেখ মুজিবের কন্যা জনগণের হক না মেরে আজীবন প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন আপত্তি করবো না। কিন্তু আপনি মানুষের অধিকারকে এমনভাবে আত্মসাত করেছেন, মানুষের ভোটাধিকার, যেটা গণতান্ত্রিক দেশের মানুষের একটা ন্যূনতম অধিকার, আপনি সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। এটা গণতন্ত্রের নামে দুঃশাসন ছাড়া কিছু নয়।