Home ফিকহ ও মাসায়েল উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমআপূর্ব চার রাকআত নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা

উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমআপূর্ব চার রাকআত নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা

।। মুফতি রেজাউল করিম আবরার ।।

মুহতারাম কামাল উদ্দিন জাফরি হাফি. এর একটি বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ তিনি এক কথায় জুমআর পূর্বের সুন্নাতকে অস্বীকার করে দিয়েছেন!

আমি তার বক্তব্য নিয়ে ভিডিওতে লম্বা পর্যালোচনা করব ইনশাআল্লাহ৷ আজকে শুধু সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলব৷

উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমআর পূর্বের চার রাকআত নামায হলো সুন্নাতে মুআক্কাদা৷ কামাল উদ্দিন জাফরি হাফি. এর জন্মের ৭৫০ পূর্বে ইমাম ইবনে রজব হাম্ভলি রাহি. “ফাতহুল বারী” তে এ মাসআলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷ তিনি লিখেন-

وقد اختلف في الصلاة قبل الجمعة : هل هي من السنن الرواتب كسنة الظهر قبلها ، أم هي مستحبة مرغب فيها كالصلاة قبل العصر ؟ وأكثر العلماء على أنها سنة راتبة ، منهم : الأوزاعي والثوري وأبو حنيفة وأصحابه ، وهو ظاهر كلام أحمد ، وقد ذكره القاضي أبو يعلى في ” شرح المذهب ” وابن عقيل ، وهو الصحيح عند أصحاب الشافعي .

ইমামরা এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে,জুমার পূর্ববর্তি সুন্নাত জোহরের পূর্বের চার রাকাতের মত মুয়াক্কাদা, নাকি আছরের আগের সুন্নাতের মতো মুস্তাহাব? অধিকাংশ ইমামদের মত হলো, জুমআর পূর্বের সুন্নাত হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এটি ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান ছাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ রাহি. এর মতও হলো এমন। কাজী আবু ইয়ালা “শারহুল মুহাযযাব” এ এবং ইবনূ আক্বিল বলেছেন, জুমআর পূর্বের সুন্নত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হওয়ার মত হলো ইমাম শাফেয়ী রাহি. এর৷ (ফাতহুল বারী,৫/৫৪৪.দারু ইবনিল জাওযী)।

উম্মাহর স্বীকৃত এতজন ইমাম জুমআর পূর্বের সুন্নতকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে গেছেন! কিন্তু জাফরি সাহেব কীভাবে এক কথায় নজদি প্রো ম্যাক্স সালাফিদের মতো অস্বীকার করে দিলেন!

ইমামগণ নসের আলোকেই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন৷ হাদীস নিয়ে ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করব৷ এখানে শুধু কয়েকটি হাদীস পড়ুন৷ আবু আব্দুর রহমান সূলামী থেকে বর্ণিত:তিনি বলেন-

كان عبد الله يأمرنا أن نصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا

অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৫৫২৫ ই’লাউস সুনান: ১৭৬২৷)

হাদীসটি সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন- رجاله ثقات”

অর্থাৎ- উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীগণ হলেন বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। (আদ দিরায়াহ- ১/১১৩)। আলী রাযি. থেকে বর্ণিত-

كان رسول الله يصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا يجعل التسليم في آخرهن ركعة

অর্থাৎ- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নাত পড়তেন। (আল মু’যামুল আওসাত- ১৬১৭, ই’লাউস সুনান- ১৭৬২)।

উক্ত হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস সাহমী। তার সম্পর্কে ইমাম ইবনে আদী বলেন: আমার নিকট তার বর্ণনায় কোন অসুবিধা নেই।

এছাড়া ইমাম ইবনে হিব্বান রাহি. গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের জীবনী সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন,যা “কিতাবুস ছিক্বাত” নামে প্রসিদ্ধ।সেখানেও তিনি আব্দুর রহমান আস সাহমীর জীবনি উল্লেখ করেছেন। (লিসানুল মিযান- ৫/২৪৫)।

আরও পড়তে পারেন-

বাকী বর্ণনাকারী সকলেই হলেন “ছিক্বাহ”৷ এজন্যই মোল্লা আলী ক্বারী রাহি. বলেন-

”وقد جاء بإسناد جيد كما قال العراقي:أنه عليه السلام كان يصلي قبلها أربعا“

অর্থাৎ- হাদীসটি জায়্যিদ তথা হাসান সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,যেমনটি ইমাম যাইনুদ্দীন ইরাকি রাহি. এর বক্তব্য যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়েছেন৷ (মিরকাত- ২/১১২)।

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত-

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يركع قبل الجمعة أربعاً وبعدها أربعاً لا يفصل بينهن

অর্থাৎ- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নাত পড়েছেন। (আল মু’যামুল কাবীর, ১২৬৭৪, মাযমাউয যাওয়ায়িদ, ৩১৯০)।

ইবরাহীম নাখায়ী থেকে বর্ণিত- كانوا يصلون قبلها أربعا অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা- ৫৪০৫)।

আপনি জুমআর পূর্বে সুন্নত না পড়লে নাই৷ আপনার হিসাব আপনার৷ কিন্তু যারা পড়ে তাদের কাছে এ কথা বলা যে এটি হাদিসে নেই! এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিনা তৈরী করে৷ আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন৷

লেখক: তরুণ জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক, মুফতি এবং সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামেয়া আবু বকর যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।