Home ইসলাম আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতি

আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতি

।। আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা ।।

মহান আল্লাহ তাঁর কর্তৃত্ব ও পরিচয় প্রকাশ করতে অসংখ্য নিদর্শন তৈরি করেছেন এবং বান্দাকে সেই নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সম্মান প্রদর্শনের অর্থ হলো—হৃদয়ে এমন তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, যেন নিদর্শনাবলিসংক্রান্ত তাঁর বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করা যায়।

আল্লাহর নিদর্শনাবলি : আরবি ‘শাআয়ির’ শব্দটি ‘শায়িরাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ বিশেষ চিহ্ন বা নিদর্শন। শাআয়িরিল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শনাবলি হলো দ্বিনের বিশেষ চিহ্নসমূহ, অর্থাৎ ইসলামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিধান, যা দ্বারা একজন মুসলিমের স্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিত্ব বিশেষভাবে প্রকাশ পায় এবং অন্য ধর্মাবলম্বী থেকে তাকে সহজে পৃথক করা যায়।

আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন : আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা মূলত হৃদয়ে আল্লাহভীতির পরিচায়ক। যার অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি থাকে, সে-ই এসবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে পারে। এই সম্মান প্রদর্শন হৃদয়ের অভ্যন্তরে তাকওয়ার ফলাফল এবং মানুষের মনে যে কিছু না কিছু তাকওয়া রয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ। পক্ষান্তরে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন হৃদয়ে আল্লাহভীতি না থাকারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ বলেন, ‘এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে এটা তার হৃদয়ের তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)

আল্লাহর নিদর্শনাবলির নানা রূপ : আল্লাহর নিদর্শনাবলির নানা রূপ আছে—

১. স্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত নিদর্শন। যেমন—মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা, মসজিদ-ই-নববী, সাফা-মারওয়া পাহাড়, আরাফা, মুজদালিফা, মিনা প্রান্তর ইত্যাদি।

২. কালের সঙ্গে সম্পর্কিত নিদর্শন। যেমন—রমজান মাস, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, জুমার দিন, শবেবরাত, শবেকদর ইত্যাদি।

৩. আল্লাহর নির্দেশনার সঙ্গে সম্পর্কিত নিদর্শন। যেমন—আজান, নামাজ, পুরুষের সুন্নতি দাড়ি-টুপি, নারীর আচ্ছাদন ইত্যাদি।

আজান : আল্লাহর নির্দেশনার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যতম একটি নিদর্শন হলো আজান। আজানে আছে আল্লাহর মহত্ত্ব, একাত্মবাদ, ইবাদতের উপযুক্ততা, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর রিসালত, নামাজের সময় হওয়ার ঘোষণা এবং জামাতে নামাজ আদায়ের আহ্বান। এ জন্য আজান ঈমানদারদের জন্য প্রেমময় ও পছন্দের হলেও শয়তান ও তার বন্ধুদের কাছে অপছন্দের। শয়তান আজান শুনে পালিয়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যখন নামাজের আজান দেওয়া হয় তখন শয়তান পেছন ঘুরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায়, যেন আজানের শব্দ শুনতে না পায়। আজান শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৮২)

মুয়াজ্জিনের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে—মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরাই হবে মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ গর্দান বিশিষ্ট। অর্থাৎ সর্বাধিক সম্মানিত। (মুসলিম, হাদিস : ৮৭৮)

আরও পড়তে পারেন-

সাফা-মারওয়া : স্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যতম একটি নিদর্শন হলো সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়। ইবরাহিম (আ.) ইরাকে জন্মগ্রহণ করলেও আল্লাহর নির্দেশে সিরিয়ায় হিজরত করেন। সেখানে সন্তান লাভের পর স্ত্রী হাজেরা ও শিশু ইসমাঈলকে নিয়ে সেখান থেকে স্থানান্তরের নির্দেশ পান। জিবরাঈল (আ.) তাঁদের নিয়ে শুকনা পাহাড় ও উত্তপ্ত বালুকাময় এক প্রান্তরে পৌঁছে দেন। সেখানে মহান আল্লাহ তাঁর ঘর বাইতুল্লাহ নির্মাণ ও মক্কা নগরী প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করে রেখেছেন। এবার ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশমতো স্ত্রী-সন্তানকে সেখানে রেখে সিরিয়া ফিরে যান। হাজেরা (আ.) দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জনশূন্য এই প্রান্তরে অবস্থান করতে থাকেন।

একসময় কঠিন পিপাসায় পানির খোঁজে বের হতে বাধ্য হন। তিনি সাফা-মারওয়া পাহাড়ে বারবার দৌড়ান। সাতবার ছোটাছুটির করেও পানির সন্ধান না পেয়ে শিশুর কাছে ফিরে আসেন। আল্লাহর নির্দেশে জিবরাঈল (আ.) শুষ্ক মরুভূমিতে পানির একটি ঝরনাধারা (জমজম কূপ) প্রবাহিত করেন। পানির সন্ধান পেয়ে জীবজন্তু আসা শুরু করে। ক্রমান্বয়ে মানুষ এসে বসতি গড়তে থাকে। একসময় গড়ে ওঠে নিরাপদ মক্কা নগরী। সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়কে মহান আল্লাহ নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ কাবাগৃহের হজ বা ওমরাহ সম্পন্ন করে এই দুটির মধ্যে সাঈ করলে তার কোনো পাপ নেই। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৮)

রমজান মাস : সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যতম একটি নিদর্শন হলো রমজান মাস। এই মাস আল্লাহ তাআলার অপূর্ব রহমতের বারিধারায় সমৃদ্ধ, ইবাদতের বসন্ত এবং মহান আল্লাহর সান্নিধ্যলাভের সুবর্ণ সুযোগ সংবলিত মহিমান্বিত মাস। রমজান মাসের মর্যাদা অপরিসীম। মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোরআন মজিদ রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

আসলে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য রমজান মাস দান করেন। কিন্তু যে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে পারে না তার ধ্বংস অনিবার্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলি ধূসরিত হোক; যার কাছে রমজান মাস এসে চলে যায় অথচ তার পাপগুলো মাফ করিয়ে নিতে পারে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

আল্লাহর নিদর্শনাবলির অনন্য বহিঃপ্রকাশ ইসলাম ধর্ম, যা কিয়ামত অবধি চলমান রয়েছে। আল্লাহর নিদর্শনাবলির মূল ভিত্তি পবিত্র কোরআন, যা সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমিই এর সংরক্ষক। ’

(সুরা : হিজর, আয়াত : ৯)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

উম্মাহ২৪ডটকম:এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।