Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ফতোয়া প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতা একটি দ্বীনি অপরাধ

ফতোয়া প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতা একটি দ্বীনি অপরাধ

।। আল্লামা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ ।।

বর্তমানে ফাতওয়া নিয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। নেই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, নেই প্রয়োজনীয় তাহকীক। এরপরও ফাতওয়া দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যেন ফাতওয়ার ‘বাজার’। খান্দা-নাখান্দা সবাই সেখানে মুফতি। একই বিষয়ে দ্বিমুখী, ত্রিমুখী বরং বহুমূখী ফাতওয়ার অভাব নেই। স্ববিরোধী ফাতওয়ারও কমতি নেই। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফাতওয়ার উপর আস্থা বিলোপ পাচ্ছে। ইমাম রবীআতুর রায় রাহ. এর যুগের সেই চিত্র আজ আরও প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। ইমাম মালেক রাহ. বলেন-

أخبرني رجل ” أنه دخل على ربيعة بن أبي عبد الرحمن فوجده يبكي، فقال له: ما يبكيك؟ وارتاع لبكائه فقال له: أمصيبة دخلت عليك؟ فقال: لا، ولكن استفتي من لا علم له وظهر في الإسلام أمر عظيم، قال ربيعة: ولبعض من يفتي ها هنا أحق بالسجن من السراق”. (جامع بيان العلم وفضله لابن عبد البر২৪১০ ، المعرفة والتاريخ للفسوي ১/৬৭০)

অর্থাৎ- “আমাকে এক ব্যক্তি জানালেন যে, তিনি রবীআ ইবনে আবু আবদুর রহমানের নিকট গেলেন। তখন তাঁকে ক্রন্দনরত দেখতে পেলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কেন কান্না করছেন? তার ক্রন্দনঅবস্থা দেখে আগমনকারী শঙ্কাবোধ করলেন। বললেন, আপনি কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন? উত্তরে রবীআ রাহ. বললেন, না। কিন্তু অযোগ্য ব্যক্তির নিকটও ফাতওয়া তলব করা হচ্ছে। এতে ইসলামে এক বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে! তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো কোনো ফাতওয়া প্রদানকারী চোরের চেয়েও বেশি কারাশাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত।”

আরও পড়তে পারেন-

ইমাম বরীআতুর রায় রাহ. তো স্বর্ণযুগের ঘটনা বলেছেন। প্রায় ১৪শত বছর গত হয়েছে। অবনতি ও অবক্ষয় হয়েছে আরও বেশি। সে তুলনায় আমরা কতটুকু ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আছি তা বলাই বাহুল্য।

তাখাস্সুস ফিল ফিকহ পড়লেই কেউ মুফতি বনে যায় না

অধুনা আরও একটি উপসর্গ যোগ হয়েছে। ‘তাখাস্সুস ফিল ফিকহ’ পড়েই নিজেকে ফাতওয়া দেওয়ার যোগ্য ভাবা। মূলত ফিকহ বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করার জন্যই এ বিভাগটি খোলা হয়েছে। এ বিভাগে পাশ করা আর ফাতওয়া দেওয়ার যোগ্য হয়ে যাওয়া বা মুফতি বনে যাওয়া- এক কথা নয়। দুটি দুই বিষয়। দুটির শর্ত ও মূল্যায়ন ভিন্ন। বর্তমানে তাখাস্সুসের যে অবনতি ও অবহেলার শিকার তা কোনো অপ্রকাশ্য ব্যাপার নয়। সবারই জানা। ভর্তি নেওয়া হয় ঢালাওভাবে; যোগ্য-অযোগ্য যাচাই ছাড়াই। ইল্লা মাশা আল্লাহ। আর পড়াশোনা ও অনুশীলনের যে বেহাল দশা, তাতে কিতাব বোঝার যোগ্যতাই অপূর্ণ থেকে যায়। ফাতওয়ার বুঝও তৈরি হয় না। সেখানে কিছু তামরীন করেই ফাতওয়া দেওয়ার যোগ্য ভাবা হয় কীভাবে?

হ্যাঁ, যদি কেউ বিজ্ঞ ও স্বীকৃত কোনো মুফতির নেগরানীতে থেকে দীর্ঘ দিন তামরীন করে তাঁর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং তিনিও তার ফাতওয়ার ব্যাপারে শাহাদা দেন, তখন ফাতওয়ার কাজে নিয়োজিত হতে আপত্তি নেই। কিন্তু এমন নিয়ম ও পদ্ধতি কতটুকু পালিত হচ্ছে!

[সূত্র- ফাতাওয়া মুঈনুল ইসলাম, ১/৬২-৬৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্ট্রব্য]

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।