Home ইসলাম পরিবারের সঙ্গে বসবাস নিয়ে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

পরিবারের সঙ্গে বসবাস নিয়ে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

জাওয়াদ তাহের   

অনেক সময় পরিবার-পরিজন থেকে নানা কষ্ট আর ব্যথার কারণে সব ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে। অন্যের উপকার করে কষ্ট পোহানোর চেয়ে নীরবে আর নিভৃতে থাকাই নিজের কাছে শ্রেয় মনে হয়। তার জন্য এসব কষ্ট সহ্য করা দুষ্কর হয়ে যায়। সে জন্য এ আকাঙ্ক্ষা মাঝেমধ্যে জেগে ওঠে যে চলে যাই নির্জন নিবাসে।

হ্যাঁ, কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ঈমান-আমল হিফাজতের জন্য অভিজ্ঞ কোনো আল্লাহওয়ালার তত্ত্বাবধানে নির্জন জায়গায় চলে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।

এ ছাড়া অন্যদের জন্য কষ্ট হলেও মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকাই উত্তম। তবে এটা কাউকে একবাক্যে বলে দেওয়া যাবে না। তার বাস্তব অবস্থার নিরিখে বলা যাবে তার জন্য কোনটা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে মুসলিম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে, সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৫০৭)

নিম্নে আমরা জনবিচ্ছিন্ন না থেকে লোকালয়ে থাকার কিছু ফায়দা আলোচনা করব—

শেখা ও শেখানো

সবার সঙ্গে থাকার বড় একটি লাভ হলো, নিজে শিক্ষা লাভ করা বা অন্যকে শিক্ষা দেওয়া। উভয়টি লাভজনক। আবু উমামা আল-বাহিলি (রা.) বলেন, দুজন ব্যক্তির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আলোচনা করা হলো। তাদের একজন আবেদ (সাধক) এবং অন্যজন আলেম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির ওপর আমার যতখানি মর্যাদা, ঠিক তেমনি একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের ওপর। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত ওই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৫)

আরও পড়তে পারেন-

সবচেয়ে ভারী ভবনের পাশাপাশি আরও একটি রেকর্ডের অধিকারী প্যালেস অফ পার্লামেন্ট

তা ছাড়া মানুষের অভ্যাস একে অন্যকে দেখে বিভিন্ন শিষ্টাচার শেখে। অন্যের সঙ্গে তুলনা করে নিজের ভেতর নিয়ে ভাবে, নিজেকে পরিশুদ্ধ ও পরিচর্যা করে। সে জন্য নিজের আত্মাকে সংশোধন করা, প্রবৃত্তি দমিয়ে রাখা, ধৈর্য ধারণ করা ইত্যাদি যে মহান গুণ আছে, এগুলো একে অন্য থেকেই শিখতে হয়। আর সব মানুষ একে অপরকে দেখেই নিজের মধ্যে আনতে পারে খুব সহজেই।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ

মানুষ যখন সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে তখন সে অন্যায় দেখলে বাধা প্রদান করতে পারবে। আবার মানুষকে সৎপথে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাআলা ‘আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকারে’র আদেশ দিয়েছেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিহ্বা দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হলো সবচেয়ে দুর্বল ঈমান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮১)

উপকৃত হওয়া এবং উপকৃত করা

সবার সঙ্গে থাকার অন্যতম একটি ফায়দা হচ্ছে, নিজে উপকার লাভ করা এবং অন্যকেও উপকৃত করা। মানুষের কাছ থেকে লেনদেন-প্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হওয়া। তেমনি নিজের সম্পদ, শরীর ও সামর্থ্যের মাধ্যমে অন্যকে উপকৃত করে তার প্রয়োজন পূরণ করা। কিন্তু নির্জনতার কারণে সে এসব কাজ করতেই পারবে না।

সওয়াব অর্জন

একসঙ্গে বসবাসের কারণে নিজে বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারবে, তেমনি অন্য কেউ সওয়াব অর্জনের সুযোগ পাবে। জানাজায় অংশগ্রহণ করা, অসুস্থ ব্যক্তির সেবাশুশ্রূষা করা, মানুষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া—এগুলো অন্যকে খুশি করার কারণ। এবং এতে আছে বিপুল সওয়াব। তেমনি অন্য ব্যক্তিও আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমার সেবা-শুশ্রূষা করে সওয়াবের অধিকারী হতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, এসবের সওয়াবের আশায় মানুষের সঙ্গে মিশলে যদি তার লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে নির্জনতাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

(মুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদিন অবলম্বনে)

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকবেন।