Home ওপিনিয়ন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হোক সম্মান আর ভালোবাসার!

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হোক সম্মান আর ভালোবাসার!

|| খাতুনে জান্নাত কণা ।।

আমরা একটু বাড়াবাড়ি করছি কি না ভেবে দেখা উচিত । এখন ভিকারুন্নেসার বিরুদ্ধে, এখানকার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, এতদিন কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও শোনা যায়নি। শিক্ষকদের সমালোচনা করতে গিয়ে আমাদের সন্তানদের অনৈতিক উপায়ে পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে উৎসাহ যোগাচ্ছি নাতো? আত্মহত্যা প্রবণতাকে উৎসাহিত করছি নাতো?

এমনিতেই এখন সন্তানদের আদব কায়দা শেখানো বেশ কঠিন হয়ে গেছে। প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার তাদের সুকুমার বৃত্তিগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। তার উপর শিক্ষকদের শাসনকে যদি তাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিই, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আর কি অবশিষ্ট থাকবে?

কেউ বাড়াবাড়ি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজ আমাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় শাসন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের বাইরে শিক্ষকরা অনেকটা দ্বিতীয় জন্মদাতার ভূমিকা পালন করে থাকেন। সব শিক্ষক সমান নন। অনেক ভালো শিক্ষক আছেন- এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে।

এমন অনেক মা-বাবা আছেন, যারা সন্তানকে এমনভাবে গড়ে তুলছেন, যারা বড়দের প্রতি সম্মান দিতে জানে না । অথচ, তার সন্তান সম্পর্কে কেউ কিছু বললে, শাসন করলে উল্টো বিরক্ত হন। অরিত্রির জায়গায় যদি আমার মা-বাবাকে ডাকা হতো, তাহলে তারা নিজেরাই আমার শাস্তির ব্যবস্থা করতেন । শিক্ষককে বলতেন যত কঠিন শাস্তি সম্ভব, আমাকে যেন তা দেয়া হয় । মেয়ের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না ।

সন্তানকে শুধু লুতুপুতু আহ্লাদ দিয়ে লালন-পালনের পক্ষপাতি আমি নই। সন্তানের অপরাধের জন্য মা-বাবাকেও আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদেহি হতে হবে । তাই, আদর দিয়ে বুঝাতে না পারলে অবশ্যই তাকে শাসন করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না চলে যায় ।

আমার কথাগুলো অনেকের কাছে ভালো লাগবে না জানি । সবার মতামতে ভিন্নতা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। সবার সন্তান ভালো থাকুক। শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হোক সম্মান, শ্রদ্ধা, পারস্পরিক ভালোবাসা আর স্নেহের।

শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন কোমল ও মহানুভব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ আমাকে কঠিন ও রূঢ় করে পাঠাননি। বরং পাঠিয়েছেন সহজ-সরল শিক্ষক হিসাবে”। (সহীহ মুসলিম)।

সাহাবী মুয়াওবিয়া বিন আল হাকাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি একবার সালাতের মধ্যে কথা বলেছিলাম। সালাত শেষে তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, সালাতের মধ্যে কথা বলা ঠিক নয়। সালাত তো হলো তাসবীহ, তাকবীর আর কুরআন তিলাওয়াতের জায়গা।’

আমার পিতা কুরবান হোক, আমি তাঁর আগে বা পরে এমন উত্তম শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে ধমক দিলেন না, মারলেন না, এমনকি কটু কথাও বললেন না।’ (সহীহ মুসলিম)।

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) তাঁর শিক্ষক যায়িদ বিন সাবিত (রাযি.)এর উটের লাগাম ধরে হাঁটতেন আর বলতেন, শিক্ষক ও মুরুব্বীগণের সাথে এমন আচরণ করাই আমরা শিখেছি।

ইমাম আবু হানীফা (রাহ.) তাঁর শিক্ষক হাম্মাদ (রাহ.)এর বাড়ির দিকে পা প্রসারিত করতেন না। তিনি বলেছেন, আমার শিক্ষক হাম্মাদ (রাহ.)এর ইন্তেকালের পর আমি যত সালাত আদায় করেছি, সকল সালাতের পর তাঁর ও তাঁর পিতামাতার জন্য দু‘আ করেছি। ইমাম শাফিয়ী (রাহ.) বলেন, আমি ইমাম মালিকের সামনে খুব আস্তে বইয়ের পাতা উল্টাতাম, যেন তিনি শব্দ শুনতে না পান।

– খাতুনে জান্নাত কণা, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

নারীর দায়িত্বশীল ভূমিকা নারী নির্যাতন অনেকটাই কমাতে সক্ষম