Home ওপিনিয়ন পাকিস্তানে আইএমএফের নতুন রূপ!

পাকিস্তানে আইএমএফের নতুন রূপ!

।। মনোয়ারুল হক ।।

পাকিস্তানের অর্থনীতির স্থবিরতা কাটাতে দেশটিকে তিন বিলিয়ন ডলারের যে প্যাকেজ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে তার জন্য ক্ষমতার বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর গ্যারান্টি চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই প্রথম বিশ্বের কোনো দেশে এ ধরনের অর্থায়নের জন্য সেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিটিং করল তারা।

পাকিস্তানের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক নেতা ইমরান খানের বাসভবনে তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। এছাড়াও ইমরান খান নিজেও এক ভিডিও বার্তায় এই প্যাকেজকে সমর্থন করেছেন। বক্তব্যে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এই অন্তর্বর্তীকালীন অর্থায়নের বিষয়টি মোকাবেলা করবে। এর অর্থও দ্বিমাত্রিক।

আসন্ন নির্বাচন কবে হবে, সে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে—তার কোনটাই এই মুহূর্তে আঁচ করা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন মোর্চা ইমরান খানের বাসভবনের এই মিটিং সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। আইএমএফ আলাদাভাবে পিপিপি বা পিপলস পার্টির সঙ্গেও সভা করেছে। তারা ভবিষ্যৎ-পাকিস্তানের রাজনীতি কিভাবে আবর্তিত হবে সেই গ্যারান্টি চাচ্ছে, তাদের এই সভার ভেতর থেকে।

পাকিস্তানের একজন উল্লেখযোগ্য অর্থনীতিবিদ হাসান এ বিষয়টিকে খুবই অদ্ভুত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ ইতিপূর্বে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোথাও কোথাও আইএমএফ এ ধরনের ঋণ চুক্তির আগে স্টেকহোল্ডার ব্যাংক, লিডার অর্গানাইজেশন চেম্বার অভ কমার্স ইত্যাদির সাথে বৈঠক করেছে—কিন্তু কখনোই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের কোনো ইতিহাস তাদের নেই।

পাকিস্তান দেশটি রাজনৈতিকভাবে চূড়ান্ত খণ্ডিত। দেশটিতে প্রতিদিনই উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের হামলা চলছে, যারা পশ্চিমা জনগোষ্ঠীর তীব্র বিরোধী। প্রতিদিনই রক্ত ঝরছে পাকিস্তানের আনাচে-কানাচে এই উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীদের হামলায়।

পাকিস্তানের এক অংশে এখনও ভিন্ন আইন বহাল রয়েছে। দেশটির শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই দেশের একটি অংশকে আলাদা আইনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের অন্য অংশে প্রচলিত আইন কার্যকর নয়।

ইমরান খানের সঙ্গে আইএমএফের আলোচনায় আরও একটা জিনিস সামনে এসেছে। তা হলো: ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ইমরানের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছে গত ৯ মে-র ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ইমরানকে আইনের আওতায় আনা হবে, সামরিক আইনে বিচার করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এ ঘটনা আস্তে আস্তে চাপা পড়ে গেছে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে। সরাসরি সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে গণ অভ্যুত্থানের হামলায় যেখানে সদর দপ্তরে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছিল, তা নিয়ে সেনাবাহিনী প্রকারান্তে এখন নিশ্চুপই হয়ে গেছে।

আরও পড়তে পারেন-

দীর্ঘকালের সেনা শাসন এবং এই কর্তৃত্ববাদী সেনাবাহিনী জাতীয় অর্থনীতির প্রধান অংশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার ভেতর থেকে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ফলে তারা আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব সরাসরি নিতে চাইছে না, যদিও সেই ঘটনায় কয়েকজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের অফিসারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সামরিক আইনের আওতায় বিচার করার কথা বলে, তা আপাতত স্থগিত বলেই মনে হচ্ছে। ইমরানের দল এ বিষয়ে সবসময় সোচ্চার ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, সেনাবাহিনী ইমরানের সঙ্গে চূড়ান্ত কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তাদেরকে সেই সাহস জোগাচ্ছে না।

রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনা করার মধ্য দিয়ে একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের ইতিহাস সৃষ্টি করল আইএমএফ। এ ঘটনা অতীতে বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত একটি ধারণাকেই সমর্থন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গড়ে ওঠা এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেই নয়া উপনিবেশিকতা বলা হয়েছে। নয়া এই উপনিবেশিকতা ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর অর্থনীতি তাদের নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করে। ঋণ প্রদান করা হয় তাদের নিজেদের স্বার্থে। আইএমএফকে নিয়ন্ত্রণ করে ইউরোপের দেশগুলো আর বিশ্ব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র। কাজেই এ কথা বলতে হয়, গত শতাব্দীর সেই নয়া উপনিবেশিকতার যে ব্যাখ্যা পৃথিবীব্যাপী আছে তারই সুস্পষ্ট প্রমাণের ঘটনা ঘটল পাকিস্তানে।

পাকিস্তানের জনগোষ্ঠী যদি ধর্মীয় এই উগ্র জাতীয়তাবাদের ধারণা থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে দেশটির সেনাবাহিনীর এই অসীম ক্ষমতা অনন্তকাল টিকে থাকবে। অর্থনৈতিকভাবে দেশটি পঙ্গুত্ব থেকে বেরোতে পারবে না। পাকিস্তানের মতো এই ধরনের ব্যবস্থা আরও দু-একটি দেশে সৃষ্টি হয়েছে যেসব দেশের কর্তৃত্ববাদ দেশের বহু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে এবং আগামী দিনে অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থতার দিকে হাঁটছে। এসব দেশকে এই নয়া উপনিবেশিকতার হাত থেকে বের হতে হলে দেশের আভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, কাটিয়ে উঠতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।