Home ইসলাম যে কারণে মহানবী (সা.)-এর পরিবারের বিশেষ মর্যাদা

যে কারণে মহানবী (সা.)-এর পরিবারের বিশেষ মর্যাদা

।। মাওলানা মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান ।।

‘আহলে বায়ত’ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের একটি পরিভাষা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বায়ত হলেন হেদায়েতের সূর্য এবং মুমিনদের ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদিসে সাহাবাদের ব্যাপারে যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন অনুরূপ আহলে বায়তের ভালোবাসার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন। আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক কিয়ামতের দিনও নাজাতের অসিলা হবে।

আহলে বায়তের পরিচয়

আহল শব্দটি একবচন। এর আভিধানিক অর্থ স্ত্রী-সন্তান, পরিবার। সাধারণভাবে একই ঘরে বা একই ছাদের নিচে যারা বসবাস করে তাদের আহল বলা হয়। রূপকার্থে নিকটাত্মীয়রাও আহলের অন্তর্ভুক্ত।

আহল শব্দটি কোরআন শরিফে ১২৬টি স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। বায়ত শব্দের অর্থ হলো ঘর, যেখানে মানুষ রাত যাপন করে। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে আহলে বায়ত বলতে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র স্ত্রী, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (রা.)-কে বুঝানো হয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৪২৪)

তাঁরা ছিলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ও মর্যাদাবান পরিবারের সম্মানিত সদস্য। আহলে বায়ত হলেন নিষ্কলুষ জীবন চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিসত্তা। মহান আল্লাহ তাঁদের সব নাপাকি ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রেখেছেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.), মুজাহিদ (রহ.), কাতাদা (রহ.)সহ একদল তাবেয়ির থেকে বর্ণিত হয়েছে, আহলে বায়ত বলতে আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু, খাতুনে জান্নাত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা, হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)-কে বুঝানো হয়েছে।

আহলে বায়তের মর্যাদা

রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতি আপনজন, যাঁরা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অধিকারী, সদকা গ্রহণ থেকে মুক্ত, প্রত্যেক নামাজে যাঁদের প্রতি দরুদ শরিফ পড়া আবশ্যক এবং স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁদের অনুসরণকে হেদায়েতের মাপকাঠি করে দিয়েছেন তাঁরাই হলেন আহলে বায়ত। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের পাপ পঙ্কিলতা থেকে দূরে রাখতে এবং সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র করতে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)

এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু, খাতুনে জান্নাত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা, হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)-কে একই চাদরের নিচে ঢেকে নিলেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়ত। সুতরাং তাদের অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখুন এবং তাদের পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১, ৩৭৮৭)

আরও পড়তে পারেন-

রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে উপরোক্ত ব্যক্তিদের আহলে বায়ত বলে সম্বোধন করতেন এবং সালাম দিতেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, যখন মহানবী (সা.) ফজরের নামাজের জন্য বের হতেন, তখন তিনি ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার দরজা দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলতেন, ‘হে আহলে বায়ত, সালাত আদায় করুন।’ তারপর তিনি পবিত্র কোরআন থেকে সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩২০৬)

হাদিসের ভাষায় আহলে বায়ত বলতে তাঁদের বুঝানো হয়েছে, যাঁদের ওপর সদকা গ্রহণ করা হারাম। তাঁরা হলেন আকিল, আলী, জাফর ও আব্বাস (রা.)-এর বংশধররা। (মুসলিম, হাদিস : ৬১১৯)

আহলে বায়তের ভালোবাসা

ইসলামী শরিয়তে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বায়তকে ভালোবাসা ও অনুসরণ করা জরুরি। যারা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান ও ভালোবাসার দাবিদার তাদের জন্য জরুরি যে নবীজির কারণেই আহলে বায়তকে ভালোবাসবে এবং তাঁদের অনুসরণ করবে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘বলুন, আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে আত্মীয়তার সৌহার্দ্য ছাড়া অন্য কোনো প্রতিদান চাই না। যে উত্তম কাজ করে আমরা তার এতে কল্যাণ বাড়িয়ে দিই। নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ২৩)

আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, যখন এই আয়াত নাজিল হলো তখন সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কারা আপনার নিকটাত্মীয়? যাঁদের মুয়াদ্দাত (ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে ফরজ করা হয়েছে।’ জবাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইনের মুয়াদ্দাত (ভালোবাসা)।’ (তাফসিরে মাজহারি, ১১/৬৩)

আহলে বায়তকে ভালোবাসা ঈমানের দীপ্তিমান একটি শাখা আহলে বায়তকে ভালোবাসা ঈমানেরই বহিঃপ্রকাশ। কেননা এটি ঈমানের ৭০টি শাখার মধ্যে দীপ্তিমান একটি শাখা। হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ৭০ বা ৬০টির বেশি শাখা আছে। এর সর্বোত্তম শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই) বলা। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকারক আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, ঈমানের ৭০টির বেশি শাখার মধ্যে ১১ নম্বর শাখা হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধরদের ভালোবাসা। (উমদাতুল কারি শরহে সহিহিল বুখারি ১/৩৩৪)

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তুষ্টি তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্জন করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৭৯)

অতএব, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বায়তকে ভালোবাসতে হবে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আহলে বায়তের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জীবন পরিচালনা করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা)

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।