Home ইতিহাস ও জীবনী ভাগনারের প্রিগোজিনের শেষ দিনগুলো…

ভাগনারের প্রিগোজিনের শেষ দিনগুলো…

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতেই জীবনের শেষদিনগুলোয় ব্যস্ত ছিলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। সে ভবিষ্যৎ তিনি দেখেন স্বদেশ থেকে অনেকদূরে আফ্রিকায়, যেখানে ভাগনারের প্রায় প্রায় ৫ হাজার ভাড়াটে যোদ্ধা কর্মরত আছে।

এর আগের সপ্তাহের শুক্রবার, তার প্রাইভেট জেট মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে অবতরণ করে। আফ্রিকায় যেসব দেশের সরকার ভাগনারের প্রথমদিকের গ্রাহক– তাদের মধ্যে অন্যতম মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র। প্রিগোজিনের এ সফরের উদ্দেশ্য ছিল, পুরোনো ক্লায়েন্টের সাথে ব্যবসার পুনরুদ্ধার। একইসঙ্গে, সংঘাত-কবলিত দেশটির সরকারের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

দেশটির রাজধানী বাঙ্গুইয়ে নদীতীরে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। প্রিগোজিন সেখানে প্রেসিডেন্ট ফঁস্তোয়া আঁঞ্জ তোদুঁয়ার সাথে এক বৈঠক করেন। গত জুনে রাশিয়ায় বিদ্রোহ করে, শেষপর্যন্ত তাতে ক্ষান্ত দেন প্রিগোজিন। এনিয়ে গ্রাহকদের উদ্বেগ আছে। প্রিগোজিন তোদুঁয়াকে আশ্বস্ত করে বলেন, বিদ্রোহের ঘটনা আফ্রিকায় ভাগনারের অংশীদারদের জন্য রাশিয়া থেকে নতুন যোদ্ধা ও বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে বাধা হবে না।

বৈঠক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে আলোচনার বিষয়বস্তু জেনেছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল।

বৈঠক শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি অবতরণ করে ভাগনারের একটি হেলিকপ্টার। এর আরোহী ছিলেন সুদানের র‍্যাপিড সাপোর্ড ফোর্সের (আরএসএফ) পাঁচজন কমান্ডার। সুদানের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আরএসএফ সরকার-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য ভাগনারের সহায়তার ওপর নির্ভর করছে। প্রিগোজিন তাদেরকে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছিলেন। তার কৃতজ্ঞতা জানাতে সুদানের দারফুর অঞ্চল থেকে বাঙ্গুই আসে এই প্রতিনিধিদল, প্রিগোজিনের জন্য নিয়ে আসে স্বর্ণের বার। যুদ্ধ-কবলিত দেশটির বেশকিছু স্বর্ণখনি দখলে আরএসএফকে সহায়তা করেছে ভাগনার।

আফ্রিকায় ভাগনারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী কার্যক্রম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। বিদ্রোহের পর ক্রেমলিন ভাগনারের বিশাল বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ককে সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ভাগনার যোদ্ধাদের নিয়োগ ও অপারেশনকেও সরাসরি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। প্রিগোজিনের বিদ্রোহের পেছনে যা অন্যতম কারণ ছিল। এক কথায়, ভাগনারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রিগোজিনের সাথে রুশ সরকারের দ্বন্দ্ব চলছিল।

এই অবস্থায়, প্রিগোজিন যখন মধ্য আফ্রিকায়, তখন মহাদেশের আরেক প্রান্ত লিবিয়ায় ভাগনারের ক্লায়েন্টদের জন্য ভিন্ন বার্তা দেয় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ক্রেমলিন সেখানে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়, যার নেতৃত্ব দেন উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউনুস-বেক ইয়েভকুরভ। গত ২৪ জুনের বিদ্রোহের সময় ভাগনারের সেনারা রুশ বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় সদর দপ্তর রোস্তভ শহর দখল করে। এসময় সদর দপ্তরে ইউনুস বেক উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে আলাপ করেন ভাগনার প্রধান। এসময় এই মন্ত্রী প্রিগোজিনকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করায়, তাকে তিরস্কার করেছিলেন প্রিগোজিন।

রুশ সরকারের প্রতিনিধি দল যখন লিবিয়ায় পৌঁছেছে, তখনই বিমানে করে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রিগোজিন। পথিমধ্যে বিরতি দেন মালিতে। ফিরতি পথে আফ্রিকার যেসব দেশের আকাশসীমার উপর দিয়ে উড়েছে প্রিগোজিনের বিমান, তাদের সরকারগুলো ভাগনারের গ্রাহক। প্রিগোজিন যাদের ক্রেমলিনের নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত করতে চাইছিলেন।

৬২ বছরের প্রিগোজিন তখনও জানতেন না আফ্রিকায় এটাই ছিল তার বিদায়ী যাত্রা।

এরপর গত বুধবার রাশিয়ায় ভূপাতিত করা হয় প্রিগোজিনকে বহনকারী এমব্রায়ার লিগ্যাসি-৬০০ মডেলের প্রাইভেট জেট। এর মধ্যে দিয়েই আফ্রিকায় ভাগনারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্রেমলিনের সাথে তার প্রতিযোগিতার অবসান হয়। যে প্রতিযোগিতা বিদ্রোহের পর থেকে গত দুই মাস ধরে গোপনে চলছিল।

বিপদকে সঙ্গী করে বহু বছর কাটিয়েছেন প্রিগোজিন। শত্রুদের চোখে ধুলো দিতে ছদ্মবেশে ভ্রমণ করেছেন। তারপরেও পশ্চিমাদের চাপে তার বিমানকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া বিমানবন্দরের সংখ্যা কমে আসছিল বিশ্বব্যাপী।

পশ্চিমা ও আফ্রিকান দেশগুলোর কর্মকর্তারা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ভাগনার এবং তাদের সংশ্লিষ্ট শত শত কোম্পানি ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহের জন্য বেশি পরিচিতি লাভ করলেও, প্রিগোজিনের জীবনের শেষদিকে অর্থায়ন, নির্মাণ, সরবরাহ ও লজিস্টিকস, খনি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবসায় সম্প্রসারিত হয়েছিল। এমনকী উন্নত জাতের রেসের ঘোড়া প্রজননের খামার, রেসের ঘোড়া ব্যবস্থাপনার ব্যবসাও শুরু করেন প্রিগোজিন, এই ব্যবসাটির দেখাশোনা করতেন তার মেয়ে পলিনা।

সুদানের খনিগুলো থেকে উত্তোলন করা স্বর্ণ রাশিয়ায় বিক্রি এবং মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের হিরে ও দামি কাঠ- চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্রি করা ছিল ভাগনারের আয়ের অন্যতম উৎস।

প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর এসব ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একসময় তার ব্যক্তিগত কর্তৃত্বে থাকা এই অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ককে জাতীয়করণ করতে চায় ক্রেমলিন।

প্রিগোজিনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার একদিন পর– বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনায় (!) নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করেন পুতিন। এসময় তিনি প্রিগোজিনকে এমন ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন, যার জীবনকাহিনি বেশ জটিল– তবে রাশিয়ার স্বার্থরক্ষায় যার অবদানও অনেক।

পুতিন বলেন, ‘জীবদ্দশায় তিনি গুরুতর কিছু ভুল করেছিলেন। আমি যতদূর জানি, গতকালই তিনি আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছিলেন।’ অথচ পুতিনই একসময় প্রিগোজিনকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক পদকে ভূষিত করেছিলেন।

প্রিগোজিনের অবর্তমানে ভাগনারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজ মতামত জানান যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ডেভিড লুইস। তিনি পূর্বাভাস দেন, ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী হয়তো ভাগনারের আকর্ষনীয় সব ব্যবসায়ীক চুক্তি নিজ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে, হয়তো তারা নতুন প্রক্সি বাহিনীও গঠন করবে। বহু দেশে বিস্তৃত এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় প্রিগোজিন বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন, কিন্তু তিনি অপরিহার্য নন।’

সিরিয়া থেকে মালি পর্যন্ত বহু দেশের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভাগনারের ভাড়াটে যোদ্ধাদের ওপর নির্ভর করে। গত মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা নাইজারের জান্তা সরকারকেও সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রিগোজিন।

আরও পড়তে পারেন-

তবে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা- জিআরইউ পরিচালিত নতুন কয়েকটি মার্সেনারি সংস্থা ভাগনারের এসব চুক্তিগুলো পাওয়ার প্রতিযোগিতা করছিল। যেমন প্রিগোজিনের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট তোদুঁয়াকে ব্যক্তিগতভাবে বলেন পুতিন। গত মাসে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ নগরীতে আফ্রিকান নেতাদের সাথে রাশিয়ার এক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আসা তোদুঁয়ার সাথে সেলফি তুলতে চান এই রুশ যুদ্ধপতি, কিন্তু তাতে রাজি হননি তোদুঁয়া।

ডাকাতির অভিযোগে যৌবনে জেলখাটা প্রিগোজিন এসব ঘটনা যে আসন্ন মৃত্যুর ইঙ্গিত, তা ধরতে পারেননি। অসম্ভব গোঁয়ার বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও দৃঢ়সংকল্প ছিলেন।

গত বুধবার তার একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে ভাগনার সংশ্লিষ্ট একটি চ্যানেল- গ্রে জোন। তবে ভিডিওটি কবে রেকর্ড করা, তার উল্লেখ ছিল না। ভিডিওতে প্রিগোজিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা সবাই জাহান্নামে যাব। কিন্তু, জাহান্নামেই আমরা সেরা হব।’

প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল আফ্রিকার প্রায় এক ডজন দেশের সরকারি, সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ভাগনার-ত্যাগকারী ব্যক্তি, অধিকারগোষ্ঠীর সাথে কথা বলে ঘটনার এই বিবরণ প্রস্তুত করেছে। একইসঙ্গে, আফ্রিকা ও রাশিয়ার মধ্যে প্রিগোজিনের বিমান চলাচলের তথ্য ও বাণিজ্যিক সফরসূচিও বিশ্লেষণ করেছে জার্নাল।

আফ্রিকায় প্রিগোজিনের সর্বশেষ ফ্লাইটের বিষয়টি বিমানবন্দর কর্মীদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত করেছেন রুশ বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা গ্লেব ইরিসভ।

প্রিগোজিনের বেশিরভাগ শেল কোম্পানিগুলো অস্পষ্ট সব বিধিমালায় পরিচালিত হয়। মূলত আইনি এসব অসচ্ছতার কারণেই ক্রেমলিন এতদিন ভাগনারের সাথে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকারের সুযোগ পেয়েছে। একইসঙ্গে, ভাগনারের মাধ্যমে আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের সুযোগও পায়। ভাগনারের বিরুদ্ধে অনেক নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তাদের দমানো যায়নি।

নিষেধাজ্ঞার জাল এড়াতে অনেক দেশের সরকারই প্রিগোজিনের সাথে মৌখিক চুক্তি করে। এসব চুক্তির বিস্তারিত সম্পর্কে জানতেন শুধু প্রিগোজিনের বাছাই করা ভাগনারের শীর্ষ জনাকয়েক কর্মকর্তা। তাদেরই একজন ছিলেন প্রিগোজিনের বিমানে থাকা সাবেক জিআরইউ কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে উটকিনও নিহত হয়েছেন।

প্রিগোজিন তার অধীন হাজার হাজার কর্মী, ভাড়াটে যোদ্ধা, পাচক, খনি বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য পেশাজীবীদের সরাসরি নগদ অর্থে বেতন দিতেন। সরকারগুলোর থেকে বকেয়া টাকা সংগ্রহে অনেক সময় নিজের প্রাইভেট জেটই পাঠিয়ে দিতেন।

ফলে এই ব্যবসার আগামাথা ধরে ওঠাই মুশকিল। গত জুন থেকে সে চেষ্টাই শুরু করে ক্রেমলিন। প্রিগোজিনের প্রধান শত্রু– রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু লিবিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকারের কাছে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে তাদেরকে জানান, এখন থেকে তারা যেন সরাসরি রাশিয়ার সাথে ব্যবসা করে।

এদিকে বিদ্রোহের পর– বেলারুশের প্রেসিডেন্টের মধ্যস্ততায় পুতিনের সাথে এক সমঝোতা হয় প্রিগোজিনের। যার আওতায়, অনুগত ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়ে বেলারুশে অবস্থানের সুযোগ পান তিনি।

কিন্তু, নীরবে অবসরে যাবার পাত্র ছিলেন না প্রিগোজিন। বরং এই অবসরে ব্যবসায়িক সম্পর্কগুলো ধরে রাখতে পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করেন। এ সময়েই অডিওবার্তার মাধ্যমে নাইজারের জান্তা সরকারকে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহের প্রস্তাব দেন। এরপর মালিতে ধারনকৃত তার একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে যুদ্ধের পোশাক-সজ্জিত প্রিগোজিন জানান, ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে অগ্রাহ্য করে ভাগনার গ্রুপ নতুন ভাড়াটে সেনা নিয়োগ চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে রাশিয়ার অবস্থানকে আরো দৃঢ় করা যায়, আফ্রিকাকে আরো মুক্ত (পশ্চিমা প্রভাব থেকে) করা যায়।

পলাতক জীবন

প্রায় ৩০টি দেশের সরকারের নিষেধাজ্ঞা ছিল প্রিগোজিনের ওপর। এমনকী তার সন্ধানদাতাকে এক কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়া ঘোষণাও দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে সবসময়েই সতর্ক থাকতে হতো প্রিগোজিনকে। গ্রেপ্তার বা হত্যাচেষ্টা এড়াতে এক জায়গায় বেশি সময় অবস্থান করতেন না বিদেশ সফরকালে।

তার বিমানের ট্রান্সপন্ডার বা অবস্থানের সংকেত প্রেরক যন্ত্র প্রায় সময়ই বন্ধ রাখা হতো। এমনকি পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ যেসব দেশের সরকার তার চলাচলের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিতে পারে, সেসব দেশের আকাশসীমা পারতপক্ষে এড়িয়ে চলতো।

একবার জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় সাহারা মরুভূমির মাঝখানে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয় তার বিমান।

অনেক সময় বিমানবন্দরের রানওয়েতেই ক্লায়েন্টদের সাথে বৈঠক করতেন।

বেশিরভাগ সময় জাল পাসপোর্টে ভ্রমণ করতেন প্রিগোজিন। তিনি কোথাও যাওয়ার আগে, ভাগনারের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সেখানে পাঠানো হতো, যাতে তারা আড়িপাতার কোনো যন্ত্র আছে কিনা- তা খুঁজে বের করেন।

সামাজিক মাধ্যমের ফলোয়ারদের সাথে বেশিরভাগ সময়েই অডিও বার্তায় সম্বোধন করতেন তিনি। ফলে জিওলোকেট করে তার সন্ধান পাওয়া ছিল অসম্ভব। ভিডিও বার্তা দিলেও তা এমন জায়গা থেকে দিতেন- যা সহজে শনাক্ত করা যেত না।

প্রিগোজিনের বিধ্বস্ত বিমানের দৃশ্যমান প্রমাণ থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে সেটি ভূপাতিত করা হয়নি, বরং বিমানে বোমা পেতে রাখে হয়েছিল অথবা অন্য কোনো উপায়ে এর ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ স্যাবোটাজ করা হয়।

হাজারো সতর্কতার পরও নিজ দেশে অরক্ষিতই ছিলেন প্রিগোজিন। জুনের ব্যর্থ বিদ্রোহের পর থেকেই রাশিয়ার ক্ষমতাসীনদের চোখে তিনি শত্রু হয়ে উঠেছিলেন।

যার মধ্যস্ততায় এই বিদ্রোহের অবসান হয়, সেই লুকাশেঙ্কো পরে বলেছিলেন, পুতিনকে তখন প্রিগোজিনকে হত্যার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প মনে হয়েছিল। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, পরে তিনিই ফোন করে পুতিনকে সিদ্ধান্ত বদলাতে রাজি করান। কিন্তু, দিনশেষে প্রমাণ হয়েছে, দৃঢ়চেতা পুতিনের সিদ্ধান্ত টলানো যায়নি। অপেক্ষা ছিল শুধু সঠিক সময়ের।

সূত্র- দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, ভায়া- টিবিএস।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।