।। এম কাউছার হামিদ ।।
কারো উপার্জন হালাল। কারোটা হারাম। উপার্জনে সামান্য হারাম প্রবেশ করলে সব বরকত নষ্ট হয়ে যায়। বাহ্যত সে সম্পদের অধিকারী হলেও ধীরে ধীরে সে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তাকে এর মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৩১১)
তাই একজন মুসলমানের জন্য হালাল উপার্জন করা অপরিহার্য দায়িত্ব।
অবৈধ উপার্জন ইসলামে নিষিদ্ধ
অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা এবং কারো অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও তার সম্পদ গ্রহণ করা আল্লাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৯)
সুদ, ঘুষ, জুয়া, লটারি, জুলুমের সম্পদ ইত্যাদি অবৈধ উপার্জন অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ ভক্ষণের অন্তর্ভুক্ত। তা ছাড়া সুদ ও জুয়া স্বতন্ত্রভাবেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৬৭৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের অন্তরের সন্তুষ্টি ছাড়া তার মাল অন্য কারো জন্য হালাল নয়।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৭৬৬২)
ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত হালাল উপার্জন
হারাম ভক্ষণকারী ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না।
ফরজ আদায় হয় ঠিকই। কিন্তু সওয়াব ও নৈকট্য লাভ হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা উত্তম খাবার ভক্ষণ করো এবং নেক আমল করো।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
এখানে নেক আমল করার পূর্বে হালাল খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাসুলগণ দ্বারা উম্মতের সব ঈমানদারই উদ্দেশ্য।
হালাল খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র হালাল খাবার ভক্ষণ করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১২৪)
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া কবুল হয় না
দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রোজগার ও হালাল ভক্ষণ। যে হারাম কামাই করে তার দান-সদকাও আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তার দোয়াও আল্লাহ কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। অতঃপর নবীজি (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি-ধূসরিত রুক্ষ্ম কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রতিপালক, অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কিভাবে কবুল করতে পারেন? (মুসলিম, হাদিস : ২২৩৬)
কামাই-রোজগারের ব্যাপারে সাবধানতা
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মানুষ হালাল উপার্জনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং যথেচ্ছ হারাম উপার্জন করছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষের কাছে এমন এক জামানা আসবে যখন সে কোনো পরোয়া করবে না, সে কোথা থেকে উপার্জন করছে, হালাল থেকে, নাকি হারাম থেকে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৮৩ )
আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ