Home ইসলাম তাওবাঃ গুনাহ থেকে মুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

তাওবাঃ গুনাহ থেকে মুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়

।। মুহাম্মদ আল আমিন ।।

তওবা অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, দূর থেকে নিকটবর্তী হওয়া অর্থাৎ গুনাহ থেকে আনুগত্যের দিকে এবং গাফলত থেকে আল্লাহর স্মরণের দিকে ফিরে আসা। বান্দা যেহেতু নাফরমানি করে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়, আর তওবা করলে আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন হয় এবং আল্লাহর নিকটবর্তী হয়—এই জন্যই তওবাকে তওবা বলা হয়। আর ইস্তেগফার অর্থ ক্ষমা চাওয়া অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। (ইলমে তাযকিয়াহ্ ১৬ পৃষ্ঠা, ফাযায়েলে যিন্দেগী, আহকামে যিন্দেগী)।

মানুষের জীবনে কম-বেশি গুনাহ হতে পারে। কিন্তু গুনাহ নিয়ে বসে থাকা একদমই অনুচিত। কারণ, গুনাহের কারণে আমাদের ওপর বালা-মুসিবত নাযিল হয়। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন- ظَہَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَہُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ. “স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (আর-রুম, আয়াত: ৪১)।

হাদীসে আছে: “নিশ্চয় ব্যক্তি গুনাহের কাজ করার কারণে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।” (জাযাউল আমাল, মুসনাদে আহমাদ)।

অন্য হাদীসে আছে:হযরত ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন: “হে মুহাজির সম্প্রদায়! পাঁচটি বিষয় এমন রয়েছে যে, যখন তোমরা এগুলোতে লিপ্ত হও, তখন তোমরা ভীষণ বিপদে পড়বে। আমি আল্লাহর নিকট দোয়া করি, তোমরা যেন তাতে লিপ্ত না হও।

১. কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন প্রকাশ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ পাবে, তখন তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্লেগ, মহামারী এবং এমন কঠিন ব্যাধিসমূহ দেখা দেবে, যা তাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।

২. কোনো সম্প্রদায় যখন পরিমাপ ও ওজনে কম দেবে, তখন তারা দুর্ভিক্ষ, দুর্মূল্য ও শাসকের অত্যাচারের শিকার হবে।

৩. কোনো সম্প্রদায় যখন নিজেদের সম্পদের যাকাত বন্ধ করে দেবে, তখন আকাশ থেকে বারিপাত বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি চতুষ্পদ জন্তুগুলো না থাকত, তবে তারা বৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়ে যেত।

৪. কোনো সম্প্রদায় যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, আল্লাহ তখন তাদের উপর তাদের বাইরে থেকে শত্রু চাপিয়ে দেবেন, ফলে শত্রুরা তাদের সহায়-সম্পদ ছিনিয়ে নিবে।

৫. কোনো সম্প্রদায়ের শাসকগণ যখন মহান আল্লাহর কিতাব অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা না করবে এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের অনুসরণ না করবে, আল্লাহ তখন তাদের মধ্যে অন্তরদ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করে দেবেন।” (জাযাউল আমাল, ইবনে মাজাহ শরীফ)।

তাই যখনই শয়তান বা নফসের প্ররোচনায় কোনো গুনাহ হয়ে যাবে, তখনই তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আর আল্লাহ তাআলা তওবাকারীকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। এক হাদীসে আছে:

হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার তওবায় আনন্দিত হন, যখন সে তাঁর নিকট তওবা করে, তোমাদের মধ্যকার সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি, যার বাহন একটি মরুপ্রান্তরে তার নিকট থেকে ছুটে পালায়, আর উহার উপর থাকে তার খাদ্য ও পানীয়। এতে সে হতাশ হয়ে যায়। অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে উহার ছায়ায় শুয়ে পড়ে, সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এই অবস্থায় সে হঠাৎ দেখে, বাহন তার নিকট দাঁড়ানো। সে উহার লাগাম ধরে এবং আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে, ‘হে খোদা, তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু!’ সে ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে।” (কারণ প্রকৃত কথাটা হবে এরূপ: ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার খোদা, আর আমি তোমার গোলাম।’) (মা’আরিফুল হাদীস ৫ম খণ্ড ৩০৫-৩০৬ পৃষ্ঠা, ২৯১ নং হাদীস, মিশকাতুল মাসাবীহ, মুসলিম)।

অর্থাৎ, এরকম পরিস্থিতিতে মানুষ যেমন খুশি হয়, ঠিক তেমনি বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তাআলা আরও বেশি খুশি হন।

তওবা-ইস্তেগফারের ফযীলত:

১. মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো।” (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)।

২. তওবার দ্বারা আল্লাহ তাআলা বান্দাকে মহব্বত করেন এবং পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে, তাদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা বাকারা: ২২২)।

৩. গুনাহ করার পর বান্দা যখন নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে সত্যিকার তওবা করে, তখন আল্লাহ তাআলা শুধু তার সেই গুনাহকে ক্ষমা করেন না; বরং তার গুনাহকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: “তবে কেউ তওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে, আল্লাহ এরূপ লোকদের পাপরাশিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা ফুরকান: ৭০)।

অর্থাৎ, কাফের অবস্থায় তারা যেসব পাপ কাজ করেছে, তাদের আমলনামা থেকে তা মুছে ফেলা হবে এবং ইসলাম গ্রহণের পর নেক কাজসমূহ তদস্থলে ঠাঁই পাবে। (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন)।

৪. তওবা জান্নাত লাভের একটি বিরাট মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা তওবার বিনিময়ে জান্নাত দান করার ওয়াদা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: “মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করো, আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।” (সূরা তাহরীম: ৮)।

৫. আল্লাহ তাআলা তওবাকারীকে দুনিয়াতেই নগদ পুরস্কারস্বরূপ জীবন ধারণের উত্তম উপায়-উপকরণ দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে: “আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন। আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাকো, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।” (সূরা হুদ: ৩)।

৬. তওবার অছিলায় আল্লাহ তাআলা প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি দান করেন এবং ঈমান, আমল ও দুনিয়াবি কাজের শক্তিও বৃদ্ধি করে দেন। হযরত হুদ (আ.)-এর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, হুদ তার সম্প্রদায়ের লোকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন: “হে আমার কওম! নিজেদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তারই দিকে রুজু হও। তিনি তোমাদের প্রতি আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের বর্তমান শক্তির সাথে বাড়তি আরও শক্তি যোগাবেন। সুতরাং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।” (সূরা হুদ: ৫২)।

৭. তওবা ও ইস্তেগফারের বরকতে আল্লাহ তাআলা বান্দার পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণ করেন। তাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধি দান করেন। হযরত নূহ (আ.)-এর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, নূহ তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলেছিল: “আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।” (সূরা নূহ: ১০-১২)।

ব্যাখ্যা: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ‘ইস্তিগফার’কে অর্থাৎ তওবাকে আবশ্যকীয় করে নেয়, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিপদ থেকে তার নাজাতের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেন, প্রত্যেক চিন্তা থেকে তাকে মুক্তি দান করেন। আর এমন স্থান থেকে তার রিযক পৌঁছান, যা সম্বন্ধে তার কোনো ধারণাই হয় না।”

৮. তওবা ও ইস্তেগফার দ্বারা পেরেশানি দূর হয়, বিপদ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং রিযক বৃদ্ধি পায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) করবে, আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৫১৮)।

আরও পড়তে পারেন-

৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তি যখন কোনো গুনাহ করে তখন তার অন্তরে (হৃদয়ে) একটা কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর সে যদি তওবা করে এবং সে কাজ ছেড়ে দেয়, আর মাগফিরাত কামনা করে, তাহলে তার অন্তর সাফ করে দেওয়া হয়। যদি সে আরও গুনাহ করে, তাহলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায়, (এমনকি সমগ্র অন্তর কালো-কালিমায় ছেয়ে যায়)। এই জংয়ের কথাই আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন: كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ অর্থাৎ, কখনোই নয়; তাদের অন্তরে নিজেদের (বদ) কৃতকর্মের কারণে মরিচিকা পড়েছে।” (ফয়যুল কালাম ২৩৩ পৃষ্ঠা, ২৭৯ নং হাদীস, আহমদ, তিরমিযী, মিশকাত)।

১০. হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা রাত্রিকালে তাঁর হাত প্রসারিত করে রাখেন, যেন দিনের বেলায় যারা গুনাহ করেছে তারা তওবা করে। আর দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করে রাখেন, যাতে রাতের বেলায় যারা গুনাহ করেছে, তারা তওবা করে।”

ব্যাখ্যা: হাত প্রসারিত করার অর্থ তওবা করতে আহবান করা ও তওবা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকা। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ৩য় খণ্ড ২০৩ পৃষ্ঠা, ১৬০৪ নং হাদীস)।

১১. হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক আদম সন্তানই কমবেশি গুনাহের কাজ করে থাকে। তবে গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরা উত্তম।” (আত-তারগিব ওয়াত-তারহীব ৩য় খণ্ড ২০৫ পৃষ্ঠা, ১৬১০ নং হাদীস)।

১২. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর কোনো এক বান্দা একটি গুনাহ করে। তারপর সে বলল, ‘প্রভু, আমি একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার সেই গুনাহটি মাফ করে দিন।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা কি জানে যে, তার একজন মালিক আছেন, তিনি তার গুনাহ মাফও করে দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে তাকে পাকড়াও করতে পারেন?’ আমি আমার বান্দার গুনাহ মার্জনা করে দিলাম এবং তাকে মাফ করে দিলাম। তারপর আল্লাহ তাআলা যতদিন চাইলেন, সেই ব্যক্তি গুনাহ থেকে বিরত রইলো। তারপর একসময় আবার গুনাহ করে বসল। তারপর আবার বললো: ‘প্রভু, আমি একটি গুনাহ করে ফেলেছি, আপনি তা মার্জনা করে দিন।’ তখন আল্লাহ তাআলা আবার বলেন, ‘আমার বান্দা কি জানে যে, তাঁর একজন রব আছেন, তিনি তাকে মার্জনাও করতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে এজন্য তাকে পাকড়াও করতে পারেন?’ আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। তারপর আল্লাহ তাআলা যতদিন চাইলেন, সেই ব্যক্তি গুনাহ থেকে বিরত রইলো। তারপর একসময় আবার আরেকটি গুনাহ করে বসল। তারপর আবার বলে উঠলো: ‘প্রভু, আমি আরেকটি গুনাহ করে বসেছি। আমার সেই গুনাহটি মার্জনা করে দাও।’ তারপর আল্লাহ তাআলা আবার বললেন, ‘আমার বান্দা কি জানে যে, তাঁর একজন মনিব আছেন, যিনি তাকে মার্জনাও করতে পারেন আবার তাকে পাকড়াও করতে পারেন?’ আমি আমার বান্দার গুনাহ মার্জনা করে দিলাম। এবার সে যা ইচ্ছা তাই করুক।” (মা’আরিফুল হাদীস ৫ম খণ্ড ২৮৪ পৃষ্ঠা, ২৭৫ নং হাদীস, বুখারী ও মুসলিম)।

১৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং (গুনাহের জন্য) তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশ’ বার তওবা করে থাকি।” (রিয়াযুস সালেহীন, তওবা অধ্যায়, মুসলিম)।

ব্যাখ্যা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইস্তেগফার করতেন, তা গুনাহের কারণে নয়; বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় একমাত্র আল্লাহ তাআলার ধ্যানে নিবিষ্ট ও তন্ময় হয়ে থাকতে চাইতেন। এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর মন যেন ওই ধ্যান থেকে বিচ্যুত না হয়, এ চেষ্টায় সর্বদা মগ্ন থাকতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পানাহার করা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সময় কাটানো ইত্যাদি কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহর ধ্যান থেকে হৃদয় একরকম বিচ্যুত হয়ে যায়। আর এ কারণে তাঁর পবিত্র হৃদয়ে একধরনের আচ্ছন্নতা সৃষ্টি হতো; তাই তিনি ইস্তেগফারের মাধ্যমে তা পরিষ্কার করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে আমাদের কেমন সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি যদি দৈনিক ১০০ বার ইস্তেগফার করেন, তাহলে আমাদের কতবার করা উচিত, তা একটু ভেবে দেখা দরকার। কেউ কেউ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মুহূর্তে মর্যাদার স্তরসমূহ অতিক্রম করতেন। পরবর্তী স্তরের তুলনায় পূর্ববর্তী স্তরসমূহ তাঁর নিকট হেয় ও তুচ্ছ মনে হতো। আর সেই স্তরে অবস্থান করার কারণে তিনি অনুতপ্ত হয়ে ইস্তেগফার করতেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইস্তেগফারের অর্থ হলো, আল্লাহর সকাশে নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা। (ফয়যুল কালাম ২৩৪ পৃষ্ঠা, ২৮১ নং হাদীসের ব্যাখ্যা)।

১৪. হযরত আবু বুরদা ইবনে আবু মুসা তার পিতা আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের জন্য দু’টো নিরাপত্তা অবতীর্ণ করেছেন: এক. আমার অবস্থান। দুই. ইস্তেগফার।”

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ. “আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন অথচ তিনি তাদের শাস্তি দিবেন; এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দিবেন।” (আনফাল ৮: ৩৩)।

“আমি যখন চলে যাব, তখন কিয়ামত পর্যন্ত তাদের জন্য ‘ইস্তিগফার’-এর উপায়টি রেখে যাব।” (ফয়যুল কালাম ২৩৩-২৩৪ পৃষ্ঠা)।

নিরাপত্তার প্রথম বিষয়টি যদিও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি, কিন্তু দ্বিতীয় বিষয়টি তো আমরা পেয়েছি। তাই এই দ্বিতীয় বিষয় তথা ইস্তিগফারের মূল্যায়ন করা চাই।

তওবার বিভিন্ন স্তর:

১ম স্তরের তওবা:তওবার প্রথম স্তর হলো, কুফর থেকে তওবা করে ঈমান আনা। সর্বাপেক্ষা কঠিন গুনাহ হলো কুফরী কর্ম, অর্থাৎ কেউ যদি কোনো কুফরী কর্মে লিপ্ত থাকে, যেমন আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, দীনের কোনো বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা ইত্যাদি। অতঃপর বুঝতে পারে যে, তার দ্বারা অমুক কুফরী কাজটি হয়ে গেছে, অথবা আগে থেকেই সে কাফেরদের দলভুক্ত থাকে এবং নাস্তিক, ইহুদী, খ্রিস্টান, মূর্তিপূজারী, কাদিয়ানী ইত্যাদি ঘরানার লোক হয়ে থাকে, তবে তার কর্তব্য এই কুফরী অবস্থা পরিত্যাগ করে খাঁটি মনে ঈমান আনা ও মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া।

এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর মহান হজের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা করো, তবে তা তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও।” (আত্তাওবাহ্ – ৩)।

২য় স্তরের তওবা: ২য় স্তরের তওবা হলো, কুফর-শিরকের নিচের স্তরের গুনাহ যেমন চুরি করা, মিথ্যা বলা, গীবত করা, চোগলখুরি করা, অবৈধ সম্পর্ক করা, চাঁদাবাজি করা ইত্যাদি কাবিরা গুনাহ পরিহার করে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করা। অর্থাৎ কোনো মুসলিম ব্যক্তির দ্বারা কুফরের নিম্নপর্যায়ের কোনো অবাধ্যতা ও নাফরমানি হয়ে গেলে তার কর্তব্য তৎক্ষণাৎ তা পরিহার করে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া ও একজন বাধ্য অনুগত বান্দায় পরিণত হয়ে যাওয়া।

৩য় স্তরের তওবা: ৩য় স্তরের তওবা হলো: সমস্ত সগীরা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে সুন্নতসম্মত জীবনযাপন করা। অর্থাৎ শরিয়তের অনুগত কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি সর্বদা তাকওয়ার সাথে চলতে সচেষ্ট থাকে, কখনও কোনো কাবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়, কিন্তু অসতর্কতাবশত কোনো সগীরা গুনাহ তার দ্বারা হয়ে যায়, তবে সে ব্যাপারেও তার উচিত খাঁটি মনে তওবা করা এবং সেই সগীরা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে তাকওয়ার উচ্চতর স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো সগীরা গুনাহ বার বার করতে থাকলে তা আর সগীরা থাকে না; বরং কাবিরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়। এমনিভাবে সগীরা গুনাহকে তাচ্ছিল্য করলে বা ঔদ্ধত্যের সাথে তাতে লিপ্ত হলেও তা কাবিরা গুনাহ হয়ে যায়। তাছাড়া-

সালেহীনদের তওবা হলো বাতেনী (গুপ্ত) গুনাহ ও খারাপ স্বভাব ছেড়ে দেওয়া।
মুত্তাকিনদের তওবা হলো সন্দেহযুক্ত হলে বিরত থাকা।
মহিব্বীনদের তওবা হলো অলসতা ও গাফলতি ছেড়ে দেওয়া।
আরেফীনদের তওবা হলো তার মাকাম থেকে উচ্চ মাকাম লাভ করা। (ইলমে তাযকিয়াহ্ ১৯ পৃষ্ঠা)।

তওবার শর্তসমূহ:

তবে তওবা করতে হবে খাঁটিভাবে। আর খাঁটি তওবার জন্য চারটি শর্ত। যদি চারটি শর্ত পাওয়া যায়, তাহলে খাঁটি তওবা হবে এবং গুনাহ মাফ হবে। চারটি শর্ত হলো-

১. অতীতের সমস্ত গুনাহের কাজ ও ভুল-ত্রুটির জন্য মনে মনে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।

যে, আসলে আমি অন্যায় করে ফেলেছি। আমার বড় ভুল হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলার কাছে কী জবাব দিব? আল্লাহ তাআলা মাফ না করলে আমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এরকম অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাইতে হবে। গুনাহের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে শুধু মুখে মুখে তওবার শব্দ আওড়ালে খাঁটি তওবা হয় না। গুনাহের প্রতি লজ্জিত বা অনুতপ্ত হওয়া তওবার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এক হাদীসে আছে: হযরত হুমায়দ আত-তাবীল (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবন মালিক (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন যে, লজ্জিত হওয়া তওবা স্বরূপ? তিনি বললেন: জ্বী, হ্যাঁ। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহীব)।

২. যে গুনাহ থেকে তওবা করতে হবে, সেই গুনাহের কাজ এখনি বন্ধ করতে হবে।

গুনাহ চালু রেখে তওবা করলে বা কয়েকদিন পর থেকে গুনাহটা ছেড়ে দেবো—এ রকম হলে খাঁটি তওবা হবে না।

৩. অন্তরে সেই গুনাহের প্রতি ঘৃণা রেখে সেগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য এরাদা করতে হবে।

মনে মনে পাকাপোক্ত নিয়ত করতে হবে যে, সেই গুনাহ আর কোনো দিন করব না।

৪. যে গুনাহ থেকে তওবা করব, এই গুনাহটা যদি কোনো বান্দার হক নষ্ট হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে বান্দার হক আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

অর্থাৎ বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে, যেমন – কারো অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকলে, কারো গীবত করে থাকলে, কাউকে অন্যায়ভাবে মারধর করে থাকলে, কারো উপর জুলুম করে থাকলে ইত্যাদি।

এভাবে বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে, তাহলে বান্দার হক আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি মাল বা টাকা-পয়সা হয়ে থাকে, তা মালিককে ফেরত দিতে হবে। মালিক মারা গেলে বা পাওয়া না গেলে তার ওয়ারিশদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি ওয়ারিশও না পাওয়া যায়, তাহলে মালিকের নামে সেই পরিমাণ অর্থ সদকা করে সওয়াব পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে মালিক খুশি হয়ে কিয়ামতের দিন মাফ করে দিবে।

অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিতে হবে। আর যদি মাফ চাইতে গেলে অবস্থা ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার জন্য নফল ইবাদত করে সওয়াব পৌঁছাতে হবে, এতে আশা করা যায় কিয়ামতের দিন সওয়াব পেয়ে খুশি হয়ে মাফ করে দিবে। (ফাযায়েলে যিন্দেগি ৪১১-৪১২ পৃষ্ঠা)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর যুলুম করেছে, সে যেন তা থেকে আজই মাফ চেয়ে নেয়, তার ভাইয়ের জন্য তার কাছ থেকে নেকী কর্তন করে নেওয়ার পূর্বে। কেননা সেখানে (হাশরের ময়দানে) কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি নেকী না থাকে, তবে তার (মযলূম) ভাইয়ের গুনাহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।” (বুখারী)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সাথে ঐসব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারো উপরে অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ঐসব পাওনাদারকে ঐ ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (ফয়যুল কালাম ৪৭৪-৪৭৫ পৃষ্ঠা, ৮০২ নং হাদীস, মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।

আর গুনাহ যদি আল্লাহ তাআলার হক নষ্ট করা সংক্রান্ত হয়, যেমন – সাবালেগ হওয়ার পরে নামায-রোযা কাযা করা, যাকাত না দেওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকলে, তাহলে এখনি এসব আমলের কাযা শুরু করে দেওয়া উচিত। কিছু বন্ধুরা আবার কাযা নামাযকে অস্বীকার করতে চায়। অথচ ইমাম তাহাবী (রহ.) তাঁর হাদীস সংকলনের কিতাব ত্বাহাবী শরীফে এ বিষয়ে আলাদা একটি পরিচ্ছেদ সাজিয়েছেন। তিনি এই পরিচ্ছেদে কাযা নামাযের বিস্তারিত আহকাম আলোচনা করেছেন। যেমন:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এর কাফফারা হলো যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে, তখনই তা আদায় করে নিবে।” (ত্বাহাবী শরীফ ২য় খণ্ড ২৪৯ পৃষ্ঠা, ২৪৭৯ নং হাদীস)।

আরেক হাদীসে আছে: ইবন আবী দাউদ (রাহ.) … সামুরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজ সন্তানদেরকে লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে হুকুম করেছেন: তাঁদের কেউ যদি সালাত থেকে অমনোযোগী হয়ে যায় কিংবা ভুলে যায় এবং সংশ্লিষ্ট সালাতের নির্দিষ্ট ওয়াক্ত অতিবাহিত হয়ে যায়, সে যেন উক্ত সালাতকে এর সাথে মিলিত পরবর্তী ফরজ সালাতের সাথে আদায় করে নেয়। পক্ষান্তরে এই বিষয়ে অপর আরেক দল ‘আলিম তাঁদের বিরোধিতা করে বলেছেন: বরং যখনই স্মরণ হবে, তা আদায় করে নিবে। যদিও তা পরবর্তী সালাতের ওয়াক্ত আসার পূর্বে হোক না কেন। এছাড়া তার উপরে অন্য কিছু জরুরী নয়। এ বিষয়ে তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে আবু কাতাদা (রা.), ইমরান (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন। যখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (ভুলে) ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, যাতে সূর্য উদিত হয়ে যায়। তারপর সূর্যোদয়ের পর তা তিনি আদায় করেছেন এবং তিনি যোহরের ওয়াক্ত আসার অপেক্ষা করেননি। (ত্বাহাবী শরীফ ২য় খণ্ড, ২৬৭৫ নং হাদীস)।

অন্য হাদীসে আছে: “যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়, তাহলে তার যখনই তা স্মরণ হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন: ‘আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় করো’।” (ত্বাহাবী শরীফ ২য় খণ্ড ২৪৯ পৃষ্ঠা, ২৪৭৮ নং হাদীস, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২)।

অন্য হাদীসে আছে: “যে ব্যক্তি নামায রেখে ঘুমিয়ে গেছে বা নামায থেকে গাফেল রয়েছে তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এর কাফফারা হলো যখন তার নামাযের কথা স্মরণ হবে, তখন তা আদায় করে নেওয়া।” (সহীহ মুসলিম)।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল হলো, ইজমায়ে উম্মত। চার মাযহাবের চার ইমামসহ প্রায় সমস্ত মুজতাহিদ এ বিষয়ে একমত যে, ফরয নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া কিংবা ওজরবশত ছেড়ে দেওয়া উভয়ক্ষেত্রের একই বিধান। (আল কাউসার, আল ইসতিযকার ১/৩০২)। কুয়েতের ইসলামী বিষয় ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইফতা বোর্ডের সম্মিলিত ফতোয়াও এটাই। (মাজমুয়াতুল ফতোয়া আশ-শারইয়্যাহ ১/২০৪)। এমনকি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে আলমগীরীর ১ম খণ্ডের (বাংলা পাণ্ডুলিপিতে) ২৯৮ পৃষ্ঠা থেকে ৩০৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত কাযা নামাযের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সুতরাং উমরী কাযা আদায় না করে শুধু তওবাই যথেষ্ট হবে না, বরং সময় সুযোগ পেলেই পূর্বের কাযা নামায আদায় করাই বাঞ্ছনীয়। (আল কাউসার, ফতোয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ফতোয়ায়ে আলমগীরী)।

উপরোক্ত হাদীসসমূহ এবং ফিকহের কিতাব থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো নামায সময়মতো আদায় না করলে পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করা অপরিহার্য। নামাযটি ভুলক্রমে কাযা হোক অথবা নিদ্রার কারণে হোক অথবা গাফিলতির বা অবহেলার কারণে হোক—সর্বাবস্থায় কাযা আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১ম খণ্ড ২৯৮ পৃষ্ঠা)।

মাসআলা: কাযা নামায কম হোক আর বেশি হোক, একই বিধান অর্থাৎ তওবার সাথে সাথে কাযা আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১ম খণ্ড ২৯৮ পৃষ্ঠা)।

মাসআলা: যদি কাহারও নামায কাযা হয়ে যায় এবং স্মরণ আসা মাত্র তা (বিনা ওজরে) কাযা না করে অন্য সময় পড়বে বলে রেখে দেয় এবং হঠাৎ মৃত্যু এসে যায়, তাহলে তার দুই গুনাহ হবে। এক গুনাহ নামায না পড়া, আরেক গুনাহ সময় পাওয়া সত্ত্বেও তা কাযা না করা। (মাসায়েলে আমাল ২য় খণ্ড ৩৩৩ পৃষ্ঠা)।

মাসআলা: ফরযের কাযা ফরয। ওয়াজিবের কাযা ওয়াজিব। কাযা নামায পড়ার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট নেই। তিন সময় ব্যতীত জীবনের পুরো সময়ই কাযা নামায পড়া যায়। সেই তিন সময় হলো: সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়। অর্থাৎ, সূর্যোদয়ের প্রথম মুহূর্ত থেকে ৯-১০ মিনিট। সূর্য অস্ত যাওয়ার ১২-১৩ মিনিট পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সূর্যের উন্নতি সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছার সময় থেকে সূর্য হেলে যাওয়া পর্যন্ত ৪-৫ মিনিট। এই তিন সময় নামায আদায় করা জায়েয নেই। (সমকালীন জরুরী মাসায়েল ২য় খণ্ড ৪৯ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১ম খণ্ড ২৯৮ পৃষ্ঠা)।

মাসআলা: যদি কাযা আদায়ের পূর্বেই মৃত্যুর আলামত পাওয়া যায়, তবে ঐসব নামাযের জন্য ফিদিয়া দেওয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব। (মাসায়েলে আমাল ২য় খণ্ড ৩৩৬ পৃষ্ঠা)।

যাকাতের কাযা:

যাকাত ফরয হয়ে যাওয়ার পর যদি উহা আদায় করা না হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত যাকাতেরও কাযা আদায় করতে হবে। নিজের জিম্মায় কী পরিমাণ যাকাত আদায় করা হয় নাই, তার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করতে পারলে ভালো, অন্যথায় অনুমান করে উহার পরিমাণ নির্ণয়ের পর মন যখন পরিপূর্ণ আস্থার সাথে এই কথার সাক্ষ্য দিবে যে, অনাদায়ী যাকাতের পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হবে না, তখন ঐ পরিমাণ যাকাত প্রকৃত হকদারকে দান করে দিবে। (তওবা ৮১ পৃষ্ঠা)।

ফিতরার কাযা:

ফিতরার কাযা আদায় করাও ওয়াজিব। সুতরাং কোনো বছরের ফিতরা যদি অনাদায় থাকে, তবে উহারও কাযা আদায় করতে হবে। (তওবা ৮১ পৃষ্ঠা)।

রোযার কাযা:

সাবালেগ হওয়ার পর থেকে যত রোযা কাযা হয়েছে অথবা অসুস্থ বা সফরের কারণে যেসকল রোযা ছুটে গেছে, সেই অনাদায়ী রোযার সংখ্যা হিসাব করে উহার কাযা আদায় করতে হবে। বিশেষ করে মহিলাদের হায়েয-নিফাসের সময় নামায মাফ, কিন্তু রোযা সাময়িক মাফ অর্থাৎ ঐ রোযাগুলো পরবর্তীতে পবিত্র অবস্থায় কাযা আদায় করতে হবে। (তওবা ৮২ পৃষ্ঠা)।

উল্লেখ্য, উপরোক্তভাবে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। এক হাদীসে আছে:

হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.)-এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: “গুনাহ থেকে তওবাকারী ব্যক্তি হচ্ছে সেই ব্যক্তির মতো, যার কোনো গুনাহই নেই।” (আত-তারগিব ওয়াত-তারহীব)।

ব্যাখ্যা: এর মর্ম হচ্ছে এই যে, সাচ্চা অন্তরে তওবা করার পর কোনো গুনাহই আর অবশিষ্ট থাকে না।

কতক্ষণ পর্যন্ত তওবা গ্রহণযোগ্য:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন, যাবৎ না মৃত্যুযাতনা শুরু হয়ে তার গড়গড় শব্দ হতে থাকে।” (মা’আরিফুল হাদীস ৫ম খণ্ড ২৮৬ পৃষ্ঠা, ২৭৭ নং হাদীস)।

ব্যাখ্যা: মৃত্যুলগ্নে যখন বান্দার রূহ তার দেহ থেকে বের হতে শুরু করে, তখন তার কণ্ঠনালীতে শব্দ হতে থাকে। একেই আরবিতে গড়গড় বলে। এরপর জীবনের আর কোনো আশা অবশিষ্ট থাকে না। এটা মৃত্যুর নিশ্চিত ও শেষ আলামত। গড়গড়ার এই শব্দ শুরু হওয়ার পর পরকালের দৃশ্যাবলি ভাসতে থাকে, তখন থেকে গুনাহগারের তওবা বা কাফের-মুশরিকদের ঈমান আনয়ন কবুল হয় না। কিন্তু যখন কোনো মানুষ নিজের শারীরিক ও আনুসঙ্গিক অবস্থা দ্বারা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারে যে, অচিরেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে, এখন তার আর কোনো বাঁচার সম্ভাবনাই নেই, তবে ঐ সময় যদি মৃত্যুকালীন অবস্থা অর্থাৎ গড়গড়ার শব্দ বা পরকালীন দৃশ্যাবলি প্রকাশ না পায়, তবে তখনও গুনাহগারের তওবা বা কাফের-মুশরিকদের ঈমান আনয়ন কবুল হবে। (মা’আরিফুল হাদীস ৫ম খণ্ড ২৮৬ পৃষ্ঠা, তওবা ২৯ পৃষ্ঠা)।

তওবার আলামত:

১. পূর্বের নাফরমানিগুলো শরিয়ী নিয়ম অনুযায়ী সংশোধন করতে থাকা।
২. বর্তমানে আল্লাহর আদেশগুলো পালন করতে থাকা এবং আল্লাহর নিষেধগুলো বর্জন করতে থাকা।
৩. আল্লাহর নাফরমানিগুলোকে সাপের মতো ভয় করা এবং আদেশগুলোকে ফুলের চেয়ে প্রিয় মনে করা।

তওবা না করার ক্ষতি:

তওবা না করলে মানুষের অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। যেমন, লোহা নিয়মিত ধার না দিলে মরিচা পড়ে যায়। লোহাকে ধার দিলে আবার তার সৌন্দর্য ফিরে আসে, তেমনিভাবে তওবার মাধ্যমে মানুষ শয়তানের বিপদগামী পথ থেকে বাঁচতে পারে। এসম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

“মুমিন ব্যক্তি যখন কোনো গুনাহ করে তখন তার অন্তরে (হৃদয়ে) একটা কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর সে যদি তওবা করে এবং সে কাজ ছেড়ে দেয়, আর মাগফিরাত কামনা করে, তাহলে তার অন্তর সাফ করে দেওয়া হয়। যদি সে আরও গুনাহ করে, তাহলে সেই কালো দাগ বেড়ে যায়, (এমনকি সমগ্র অন্তর কালো-কালিমায় ছেয়ে যায়)। এই জংয়ের কথাই আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন: كَلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘না, এ সত্য নয়; ওদের কৃতকর্মই ওদের অন্তরে (হৃদয়ে) জং ধরিয়েছে।” (৮৩: ১৪)।

হাদীসে বর্ণিত কতিপয় ইস্তিগফার:

ইস্তিগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে ইস্তিগফারের অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। বান্দা যত বড় গুনাহগার হোক না কেন, সে যেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

قُلْ يَاعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰى اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِط اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًاط اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

“(হে নবী!) আপনি বলে দিন যে, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা গুনাহ করে নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। নিঃসন্দেহে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।” (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَنْ لَزِمَ الْاِسْتِغْفَارَ، جَعَلَ اللهُ لَهٗ مِنْ كُلِّ ضِيْقٍ مَخْرَجًا، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا، وَرَزَقَهٗ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইস্তিগফারকে আবশ্যক করে নিবে অর্থাৎ বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সকল সংকট থেকে মুক্তির পথ সহজ করে দিবেন, যাবতীয় দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন এবং এমন জায়গা থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করে না।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৫১৮)।

এখানে শুধু হাদীসে বর্ণিত কতিপয় ইস্তিগফার উল্লেখ করা হলো।

১ নং ইস্তিগফার: اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لَاۤ  اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ অর্থ: “আমি ঐ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো মা’বূদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরন্তন এবং আমি তাঁর নিকট তওবা করছি।”

ফযীলত: যে ব্যক্তি শয়নকালে এই দোয়া ৩ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ১১০৭৪)।

এক বর্ণনায় প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর ৩ বার পড়ার কথা এসেছে। (কানযুল উম্মাল, হাদীস: ৪৯৭১)।

২ নং ইস্তিগফার: اَللّٰهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ অর্থ: “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩৮৫০)।

৩ নং ইস্তিগফার: اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَاهْدِنِىْ وَعَافِنِىْ وَارْزُقْنِىْ অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি দয়া করো, আমাকে সঠিক পথ দেখাও, আমাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখো এবং আমাকে রিযিক দান করো।”

বিশেষ দ্রষ্টব্য: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়াটি পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৯৭)।

৪ নং ইস্তিগফার: اَللّٰهُمَّ اِنِّـيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি (গুনাহ করেছি) আর তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং তুমি নিজ করুণায় আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করো। নিশ্চয় তুমি অত্যাধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৮৩৪)।

৫ নং ইস্তিগফার: اَللّٰهُمَّ مَغْفِرَتُكَ اَوْسَعُ مِنْ ذُنُوْبِيْ وَ رَحْمَتُكَ اَرْجٰى عِنْدِيْ مِنْ عَمَلِيْ অর্থ: “হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা আমার গুনাহ অপেক্ষা অনেক ব্যাপক এবং আমি স্বীয় আমলের তুলনায় তোমার রহমতের বেশি আশাবাদী।”

ফযীলত: এই দোয়া তিনবার পড়লে আল্লাহ তাআলা সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বলতে লাগলো, ‘হায়, আমি কত বড় গুনাহগার! হায়, আমি কত বড় পাপী!’ দু-তিনবার সে এরূপ বললো। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে বললেন। সে একবার পড়লো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আরও দু’বার পড়তে বললেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তোমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।” (মুসতাদরাকে হাকেম: ১৯৯৪)।

৬ নং ইস্তিগফার: اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَ مَا اَخَّرْتُ وَ مَا اَسْرَرْتُ وَ مَا اَعْلَنْتُ اَنْتَ الْـمُقَدِّمُ وَ اَنْتَ الْمُؤَخِّرُ وَ اَنْتَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর, গোপন-প্রকাশ্য সকল গুনাহ ক্ষমা করো। তুমিই অগ্রগামী করো এবং তুমিই পিছিয়ে রাখো আর তুমি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”

৭ নং ইস্তিগফার: يَا وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ  اِغْفِرْ لِيْ অর্থ: “হে প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী! আমাকে ক্ষমা করো।” (বায়হাকী শুআবুল ঈমান, হাদীস: ৩৯০৩)।

৮ নং ইস্তিগফার: যার দ্বারা সমস্ত মুমিনের সংখ্যা পরিমাণ নেকী পাওয়া যায়। اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُؤْمِنَاتِ অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি সকল মুমিন নর-নারীকে ক্ষমা করে দাও।”

ফযীলত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি মুমিন নর-নারীর জন্য গুনাহ মাফের দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর বিনিময়ে একটি করে নেকী দেন।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস: ২১০)।

(বি. দ্র. উপরোল্লিখিত ইস্তিগফারগুলো মুফতী মনসূরুল হক (দা. বা.) এবং ওনার সহকর্মী আলেমদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত “ইসলামী যিন্দেগী” অ্যাপ থেকে নেওয়া হয়েছে।)

তথ্য সূত্র: তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ত্বাহাবী শরীফ, মা’আরিফুল হাদীস, আত-তারগিব ওয়াত-তারহীব, রিয়াযুস সালেহীন, ফয়যুল কালাম, ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ফতোয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, মাসায়েলে আমাল, ফাযায়েলে যিন্দেগী, সমকালীন জরুরী মাসায়েল, ইলমে তাযকিয়াহ্, তওবা, মাসিক মুঈনুল ইসলাম, মাসিক আল কাউসার, মাসিক আদর্শ নারী, মুসলিম বাংলা, ইসলামী যিন্দেগী, আহলে হক মিডিয়া।

লেখক: সহকারী শিক্ষক: মারকাযুন নূর ওয়াল হুদা, রামনগর, কেন্দুয়া,নেত্রকোনা।
ইমাম- হাশুয়ারী নয়াপাড়া জামে মসজিদ, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।