Home ইসলাম প্রতিশোধ গ্রহণের বদলে ক্ষমা করা সুন্নত

প্রতিশোধ গ্রহণের বদলে ক্ষমা করা সুন্নত

।। লুৎফর রহমান নাঈম ।।

প্রতিশোধস্পৃহা সব ধরনের অশান্তি তৈরি করে। সর্বত্র শান্তি এনে দিতে পারে প্রতিশোধ নয়—ক্ষমা। অত্যাচার ও উৎপীড়নের প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কারো প্রতি সহনশীলতা ও উদারতা প্রদর্শন করাকে ক্ষমা বলা হয়। ক্ষমা মানুষের মহত্ত্বের লক্ষণ।

প্রতিশোধ নয়, বরং ক্ষমা প্রদর্শন ও বিনয়ের মাধ্যমেই মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বোপরি কাউকে ক্ষমা করার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা লাভ ও ভালোবাসা পাওয়া যায়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর এ ধরনের সৎকর্মশীলদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)

কাউকে ক্ষমা করার মাধ্যমে যেমন মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, তেমনি সমাজের মানুষের কাছে সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না, আর যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)

রাগ সংবরণ, ক্ষমা ও বিনয় একটি ইবাদত। ক্ষমা করার মনোভাব না থাকার জন্য সমাজে প্রতিনিয়ত চলছে হানাহানি, গুম ও খুন। ফলে সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। পারিবারিক সম্পর্কে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন-

সমাজ-সংসারে অশান্তি সব সময় লেগে আছে। এমনকি সংসারে ভাঙন ও হত্যার মতো ভয়ংকর ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। ক্ষমার গুরুত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা ক্ষমা ও সহনশীলতার আচরণ করো এবং মাফ করে দাও, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ১৪)

অতীতে আপনার কারো সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি তাকে ক্ষমা করে দেন, তার প্রতি বিনয় প্রদর্শন করেন তাহলে আপনি প্রকৃত ক্ষমাশীল। আর এটাই আমাদের রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা। রাসুল (সা.) ছিলেন বিনয় ও ক্ষমাশীলতার মূর্ত প্রতীক। একটা ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে—একবার এক ইহুদি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেহমান হলো। মহানবী (সা.) তাকে সমাদর করলেন। সুন্দর রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও করে দিলেন। কিন্তু ওই ইহুদির মনে ছিল অসৎ উদ্দেশ্য। শেষরাতের দিকে সেই ইহুদি রাসুল (সা.)-এর বিছানায় ইচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব-পায়খানা করল। এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দেওয়া। অতঃপর ভোর হওয়ার আগেই সে গোপনে চলে গেল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল—আচ্ছা যাক, মুহাম্মদকে কষ্ট দিতে পারলাম।

কিন্তু সে ভুলে তার তরবারিটি রাসুল (সা.)-এর বাড়িতে রেখে গেছে। তরবারির কথা মনে হতেই সে আবার ফিরে এলো। এসে দেখে রাসুল (সা.) নিজে ময়লা পরিষ্কার করছেন। সে ভাবল রাসুল (সা.) হয়তো তাকে এর শাস্তি দেবেন। তাকে ক্ষমা করবেন না। সে খুব অনুনয়-বিনয়ের সঙ্গে নবী (সা.)-কে বলল, আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দিন। জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, হয়তো আপনার খিদমতের কমতি হয়েছে। আমি আপনার ঠিকঠাক খিদমত করতে পারিনি। আপনার এমন অবস্থার জন্য আমি দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা করে দিন। রাসুল (সা.)-এর এই ব্যবহারে ইহুদি মুগ্ধ ও লজ্জিত হলো। এভাবেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি বহু সমস্যা সমাধান করতে সহায়ক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।