Home আন্তর্জাতিক গাজা যুদ্ধের ২৪তম দিনে যা ঘটেছে, যা বলছে কাতার-ইরান

গাজা যুদ্ধের ২৪তম দিনে যা ঘটেছে, যা বলছে কাতার-ইরান

গাজার আল-জালা টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষ। এ ভবনেই আল-জাজিরা ও এসোসিয়েটেড প্রেসের কার্যালয় ছিল। ছবি: মাজদি ফাথি/রেক্স/শাটারস্টক।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়টি ‘দীর্ঘমেয়াদী ও কঠিন’ হবে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এমন হুঁশিয়ারির মধ্যে গাজায় ইসরাইলি হামলা রোববার ২৪তম দিনে প্রবেশ করেছে।

স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৭টা থেকে গাজায় ভারী গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিবিসির সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েন।

তিনি দক্ষিণ ইসরাইলের আশকেলন শহরের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন। এই শহরটির ১০ কিলোমিটার দূরেই গাজা উপত্যকা।

সকালে গোলাগুলির শব্দেই তার ঘুম ভেঙে যায়। ‘মাত্র এক মিনিটে ছয়টি তীব্র হামলার শব্দ শুনতে পাই। ইসরাইলি আর্টিলারি ব্যাটারি থেকে গাজায় অবিরাম গুলিবর্ষণ চলতেই থাকে,’ বলেন তিনি।

‘আমার জানালা দিয়ে দেখি রাস্তা ফাঁকা। অনেকে না হলেও অধিকাংশ বাসিন্দাই চলে গেছে।” তিনি বলেন।

ধীরগতির তবে দীর্ঘমেয়াদী হামলা

ইসরাইল সম্ভবত গাজায় ধীরগতির তবে দীর্ঘমেয়াদী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে যা কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস ধরে চলতে পার।

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিরক্ষা সম্পাদক শশাঙ্ক জোশি বিবিসির নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামকে এ কথা জানান।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইল এতদিন ধরে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাওয়ায় এখন তাদের সৈন্যদের জন্য স্থলভাগে যুদ্ধ করা ‘কিছুটা সহজ’ হয়ে যাবে।

তবে নিজেদের সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে তারা কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতো গাজার বড় বড় এলাকাগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন, তখন আপনার নিজেদেরই ওই রাস্তায় চলাচল করা কঠিন হয়ে উঠবে।’

হামাস তার কার্যক্রমের জন্য যে বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ টানেলের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেটাও ইসরাইলের সৈন্যদের জন্য ‘খুব কঠিন’ বাধা বলে মনে করেন জোশি।

যেহেতু টানেলের ভিতরে পণবন্দীরা আছে তাই ইসরাইলি সেনাদের পক্ষে সেখানে ‘অতর্কিত হামলা চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে, গাজায় টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাও ইসরাইলি সেনাদের একটি কৌশল হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়তে পারেন-

এভাবে আইডিএফ হামাস যোদ্ধাদের রেডিও যোগাযোগের ওপর বাধা সৃষ্টি করে তাদের অন্যান্য সিস্টেমের উপর বেশি নির্ভরশীল করে তুলতে বাধ্য করতে পারে।

ইসরাইলি স্থলবাহিনীর গাজায় তৎপরতা

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজায় স্থল অভিযানে জন্য তাদের সৈন্যদের প্রস্তুতি নেয়ার বিভিন্ন ছবি পোস্ট করেছে।

ছবিগুলো এক্স বা সাবেক টুইটারের ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত হয়।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইল দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং গাজা উপত্যকায় সব সেনা ও কমান্ডার মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা লড়াই চালিয়ে যাব এবং আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আকাশ বা স্থল কোথাও সৈন্য প্রত্যাহার করব না।’

ইসরাইল পণবন্দী মুক্তির প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে : কাতার

গাজায় গতকাল থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের স্থল অভিযান হামাসের হাতে আটক পণবন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছে কাতার।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, ‘এই ক্রমবর্ধমান অভিযান পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর আগে বলেছিলেন যে, হামাসকে সামরিকভাবে পরাজিত করা এবং পণবন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনার মধ্যে ‘কোনো দ্বন্দ্ব’ নেই।

ইসরাইল নিশ্চিত করেছে যে হামাস ২২৯ জনকে পণবন্দী করে রেখেছে।

ইসরাইল ‘পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে’ : ইরানের প্রেসিডেন্ট

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি বলেছেন, ‘ইসরাইলের পদক্ষেপ সব সীমা অতিক্রম করেছে, যা সবাইকে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে।’

রোববার এক্স বা সাবেক টুইটারে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন আমাদের কিছু না করতে বলে, নিজেরাই ইসরাইলকে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র অ্যাক্সিস অব রেসিস্ট্যান্সের উদ্দেশ্যে যে বার্তা দিয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রেই তারা এর জবাব পেয়েছে।’

‘অ্যাক্সিস অব রেসিস্ট্যান্স’ বলতে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরান-সমর্থিত বাহিনীর একটি নেটওয়ার্ক বোঝানো হয়, যার একটি অংশ হামাস।

যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে আসছে কারণ তারা বড় আকারের আঞ্চলিক সংঘাত বন্ধের ব্যাপারে আগ্রহী।

লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী যা ইরান দ্বারা সমর্থিত, সাম্প্রতিক সপ্তাহে তাদের সাথে ইসরাইলের গুলি বিনিময় হয়েছে।

ফিলিস্তিনের টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক

গাজায় চলমান বিমান হামলার মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে যোগাযোগের সব ধরনের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছিল। যা ওই অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণভাবে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

তবে রোববার সকাল থেকে সেখানকার টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

প্যালেস্টাইন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (প্যাল্টেল) এক্স বার্তায় জানিয়েছে, ‘আমাদের টেকনিক্যাল টিম এমন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর ক্ষতিগুলো গুরুত্বের সাথে মোকাবেলা করছে।’

রিয়েল-টাইম নেটওয়ার্ক ডেটাতেও দেখায় যে গাজা উপত্যকায় ইন্টারনেট সংযোগ পুনরুদ্ধার হয়েছে। এক্স বার্তায় যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের কথা জানায় ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস।

গাজার কিছু সাংবাদিকও টুইট করেছেন যে, তারা ফোন কল করতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করতে পারছেন।

শনিবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বিবিসি’র টুডে প্রোগ্রামে শত্রুদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করাকে ‘আদর্শ আচরণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিবিসি তার কাছে সরাসরি প্রশ্ন রাখে, ইসরাইল কি ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে? এর জবাবে, রেগেভ জানান, ‘আমি তা বলিনি। আমি শুধু বলেছি যে এটি পশ্চিমা, গণতান্ত্রিক সেনাবাহিনীর জন্য স্বাভাবিক উপায়।’

গাজায় গুদামে হামলা

গাজার হাজার হাজার বাসিন্দা গুদাম ও বিতরণ কেন্দ্রগুলো ভেঙ্গে ঢুকে পড়েছে এবং আটা ও অন্যান্য মৌলিক পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে ঠিক কখন ও কোন গুদামে এই হামলা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।

ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ‘গাজায় তিন সপ্তাহের যুদ্ধ এবং কঠোর অবরোধের পর বেসামরিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে যা বেশ উদ্বেগজনক। মানুষ ভীত, হতাশাগ্রস্ত ও মরিয়া। ফোন ও ইন্টারনেট লাইন কাটা পড়ায় আরো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।’

জাতিসঙ্ঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বৃহস্পতিবার বলেছেন, গত সপ্তাহে গাজায় ত্রাণ ‘সবচেয়ে কম’ পৌঁছেছে, সে সময় ইসরাইল তীব্র বোমাবর্ষণ করছিল।

এদিকে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র রোববার গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াবে বলে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে।

আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি হামাসের বিরুদ্ধে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপরে গুলি চালানো এবং তাদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ তোলেন।

রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি গাজায় প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানায়।

৭ অক্টোবর ইসরাইল গাজায় বোমা হামলা শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরাইলের হামলায় গাজায় আট হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

এদিকে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথ্যমতে, সবশেষ পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে তিন ফিলিস্তিনি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে পশ্চিমতীরে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন।

সূত্র: বিবিসি।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।