Home জাতীয় বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তায় বাড়বে ডলারের প্রবাহ

বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তায় বাড়বে ডলারের প্রবাহ

আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার গতিবিধির সঙ্গে সংগতি রাখতে অফশোর ব্যাংকিং আইন করতে যাচ্ছে সরকার। বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে।

নতুন এই খসড়া আইন কার্যকর হলে বৈদেশিক মুদ্রার কার্যক্রম বাড়বে। বিশেষ করে বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তা বাড়বে এবং প্রবাসীদের আয় বৈধ পথে আসবে।

বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো সম্ভব হলে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা সহজ হবে। বিশেষ করে ডলার সংকট থেকে উত্তরণের পথ সহজ হবে।

সম্প্রতি অফশোর ব্যাংকিং আইনের খসড়া প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে বলা হয়, অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কিত বিধান প্রণয়ন ও সঠিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

অফশোর ব্যাংকিং সংজ্ঞায় বলা হয়, বহিঃ উৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পাওয়া তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে এই আইনের শর্ত অনুযায়ী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় জারি করা নির্দেশনায় পরিচালিত হবে। এ ক্ষেত্রে অনাবাসী বা ক্ষেত্রমতে নিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রমকে বোঝাবে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, অফশোর ব্যাংকিংয়ের সঠিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইন থাকা উচিত। বর্তমানে বড় ব্যাংকগুলোতে সবারই অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আছে।

অনেক ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই আইন হলে এর সঠিক বাস্তবায়নের সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন উৎসর কাছ থেকে বিদেশি ঋণ পাওয়া যাবে, যা বেসরকারি খাতকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়ক কাজে নানাভাবে আর্থিক সেবা দিতে পারবে। এসব কার্যক্রম চালাতে হলে আইনগত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসাই ভালো। কারণ আইনের বাইরে কিছু করা উচিত নয়।

তিনি বলেন, অফশোর ব্যাংকিং আইন হলে এর মানে এমন নয় যে হঠাৎ করে বিদেশে গিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারব। বিদেশে শাখা খুলতে গেলে ওই দেশের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমতি লাগবে। সেটা অনেক কঠিন ব্যাপার। আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশে শাখা খোলা প্রায় অসম্ভব। আর এর বড় কারণ মানি লন্ডারিং। আমাদের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ বা কমপ্লায়েন্স খুবই দুর্বল। এসব কারণে সহজেই বিদেশে শাখা খোলা যাবে না। তা ছাড়া এ দেশের ব্যাংকের সাইজও খুব ছোট। ব্যাংকের মূলধন খুব কম ও খেলাপি ঋণ অনেক বেশি, এসব কারণে ব্যাংকগুলো বেশি শক্তিশালী নয়। আর এই বিষয়গুলো দেখবে বিদেশি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বাড়বে। দেশে বিনিয়োগ আনা এবং ঋণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। দীর্ঘমেয়াদে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারবে, যা দেশের ডলার সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে। তবে ডলার সংকট মোকাবেলা করলেও অন্যদিকে পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে, যা সংকটকে উসকে দিতে পারে। তবে এই আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হলে বেশ সুফল পাওয়া যাবে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কার্যকর তফসিলি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত হতে পারবে না। ব্যাংকগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের জন্য লাইসেন্স দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। লাইসেন্স পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে হবে, অন্যথায় তা বাতিল হয়ে যাবে।

খসড়ায় বলা হয়, অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের মধ্যে ইপিজেড, পিইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোসিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট বহিঃ লেনদেনের সেবা দিতে পারবে।

আইনের খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, প্রবাসী ও বিদেশি ব্যক্তির কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট শুধু আমানত গ্রহণ করতে পারবে। ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাংলাদেশিকে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে আমদানি এবং প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে ডিফারেল রপ্তানি বিল ডিসকাউন্ট বা কেনার সুবিধা দিতে পারবে। বাংলাদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বিনিয়োগ মঞ্জুর করতে পারবে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যক্তি এবং বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোনো অনাবাসীর পক্ষে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব শিরোনামে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। এসব ইউনিটের অধীনে খোলা হিসাবে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের অর্থ জমা হবে।

অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আয় করা সুদ বা মুনাফার ওপর আয়কর বা অন্য কোনো প্রত্যক্ষ কর আরোপ করা হবে না। আমানত ও বৈদেশিক ঋণদাতাদের ওপর কোনো ধরনের শুল্ক আরোপ হবে না। এককথায় কর থেকে অব্যাহতি পাবে অফশোর ব্যাংকিং।

আরও পড়তে পারেন-

জরিমানার বিধান

অফশোর ব্যাংকিং আইন বা বিধান পালনে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংক ইউনিটকে দুই হাজার ডলার জরিমানা করা হবে। আইন লঙ্ঘনের প্রথম দিনের পর পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ১০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হবে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের পরিচালক কর্মচারী মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দিলে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য দিতে দেরি করলে দুই হাজার ডলার জরিমানা করা হবে।

এই ব্যাংকিং ইউনিটের কার্যক্রমের ওপর সব নথিপত্র বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাসময়ে দিতে হবে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আর্থিক বিবরণী নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন একটি ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়ার সক্ষমতা তৈরি হবে। এই ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের পরিমাণও বাড়বে। বিশেষায়িত অঞ্চলগুলোতে আরো বেশি ভালো সেবা মিলবে। বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য আর্থিক ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।’

তিনি বলেন, এ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেখতে হবে যেসব ব্যাংক দুর্বল অবস্থায় আছে তারা এই ব্যাংকের কার্যক্রমে যুক্ত হতে গিয়ে আরো ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি না করে। ব্যাংকের সক্ষমতা অনুযায়ী এই কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

মাশরুর রিয়াজের মতে, এত দিন শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা হয়েছে। এখন এটি একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আসতে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত ভালো বিষয়। এতে বৈধ কার্যক্রম পরিচালনা বাড়বে। বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা বাড়বে। তবে আর্থিক খাতের মান উন্নয়নে দুর্বল ব্যাংককে বাদ দিয়ে যোগ্য ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া উচিত। যাদের অনুমতি দেওয়া হবে তাদেরও যেন সঠিকভাবে তদারকি করা হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।