Home জাতীয় আমরা নতুন তিন শূন্যের পৃথিবী গড়বো: ড. ইউনূস

আমরা নতুন তিন শূন্যের পৃথিবী গড়বো: ড. ইউনূস

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সাজা কি দেবে না দিবে, এগুলো নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। আমরা নতুন পৃথিবী গড়বো।’

রোববার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকার কাকরাইলস্থ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

এদিন শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে স্থায়ী জামিন পান ড. ইউনূসসহ চারজন।

জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালত তাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং জামিন দেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘সাজা-অসাজা ছোট্ট জিনিস। আমি বৃহত্তর ছকের মধ্যে আছি। আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, আমরা নতুন পৃথিবী গড়বো, আমরা তিন শূন্যের পৃথিবী গড়বো। থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড (শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্ব)। এগুলো (বিচার, সাজা) ছোটোখাটো বিষয়, সাজা কি দেবে না দিবে, এগুলো নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটা জিনিস পরিষ্কার করি, আপনাদের জানানো দরকার। সরকার বারবার বলছে, এই মামলাটা সরকার করে নাই। আপনারা (সাংবাদিকরা) তো সাক্ষী, আপনারা তো কিছু বলছেন না। এটা (এই মামলাটা) কি সরকার করলো না শ্রমিকরা করলো? আপনারা বার বার বলেন, এটা মিথ্যা কথা। কলকারখানা অধিদফতর সরকারের অধিদফতর, সে করেছে। শ্রমিকরা করে নাই।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকটা ছিল আমাদের স্বপ্ন। আমরা পৃথিবীকে বদলাতে চাই, দারিদ্র্যকে মুছে ফেলতে চাই। এটাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আমরা পেছনে লেগেছিলাম। জানি না ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে না হবে। আমাদের কোনো কিছু জানা ছিল না। আমরা গিয়েছি। প্রতিটি খুঁটিনাটি দেখে দেখে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে গ্রামীণ ব্যাংক আস্তে আস্তে প্রসারিত হলো। এটা হয়ে গেল আমাদের অপ্রত্যাশিত বীজতলা, স্বপ্নের বীজতলা। আমরা স্বপ্ন দেখি আর বীজ বুনি এটার মধ্যে। কী হবে ভবিষ্যতে! সেটা ক্রমে ক্রমে আমরা প্রসারিত করলাম নানা দিকে। স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে গেলাম, প্রযুক্তির দিকে নিয়ে গেলাম, একটার পর একটা! আজকে যা কিছু করছি সবকিছুর বীজতলা ছিল গ্রামীণ ব্যাংক।’

আরও পড়তে পারেন-

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আমাকে বের করে দেয়া হলো। বীজতলা রয়ে গেল একদিকে, আমাদের লোকজন যারা খেটেছে তারা রয়ে গেল আরেক দিকে। আমরা যাবো কোথায়? আবার আস্তে আস্তে বড় করলাম। কি করেছি আমরা? আমরা বলেছি চাকরির পেছনে মানুষ ঘুরবে না। চাকরি মানুষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ হলো উদ্যোক্তা। তার জন্মই হয় উদ্যোক্তা হিসেবে। এই (চাকরি) কাঠামো ভুল। এর পেছনে আমরা লাগলাম। সকল মানুষ উদ্যোক্তা। ব্যাংকিং সেক্টরের ভুল কাঠামোর কারণে মানুষ আজ চাকরির পেছনে ছুটছে। চাকরিটা হলো দাসত্বের একটা জিনিস। আপনি একজনের জন্য জান দিয়ে খাটবেন অথচ মাসের শেষে, দিনের শেষে আপনাকে কিছু ভাগ দেবে রোজগারের অল্প সামান্য! এই দাসত্ব থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের নমুনা দিলাম। গ্রামের অশিক্ষিত মহিলা অল্প-স্বল্প টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে নেমে গেছে। কে বলে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাই? নিয়ে আসলাম সামনে, যেন উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা উন্মুক্ত করতে পারি। মূল অর্থনৈতিক তত্ত্বকে আমরা চ্যালেঞ্জ করলাম। ভুল তথ্য দিয়ে ভুল মানুষ তৈরি করেছে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘দারিদ্র্যসহ পৃথিবীর যত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তার গোড়ায় হলো আমাদের মূল তাত্ত্বিক ব্যবস্থা। সেটার পেছনে আমরা লাগলাম। আমরা একটা ইমাজিনেশনকে (কল্পনা) গুরুত্ব দিলাম। ইমাজিনেশনই হচ্ছে মানুষের মূল শক্তি। ইমাজিনেশন না থাকলে কিছু হবে না। তাত্ত্বিক ব্যবস্থার মধ্যে ব্যবসা হলো মূল সমস্যা। মুনাফার সর্বোচ্চকরণ হলো ব্যবসা, এটা ভুল তথ্য। মানুষ এমন না যে মুনাফার নেশায় সরে যাবে। মুনাফার ড্রাগ তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজেই আমরা মূল মানুষটা আবিষ্কার করতে চাই। যে মূল মানুষ সে মানুষের উপকার করতে চায়, তার ভেতরে এটা আছে। সেটাকে উন্মুক্ত করতে হলে ব্যবসাকে নতুন কাঠামোতে আনতে হবে। তখনই আমরা বললাম সামাজিক ব্যবসা। এই সামাজিক ব্যবসার খাতিরে, শিক্ষার খাতিরে…শিক্ষা ব্যবস্থাটাও একটা চিন্তার কারাগার। আবদ্ধ করে রেখেছে। এই কারাগার থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমরা বললাম, শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলতে হবে। সেখানে মানুষ চাকরির জন্য লেখাপড়া করবে না। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য লেখাপড়া করবে। যে ব্যবসাকে বললাম মুনাফার পেছনে ছুটবে না, ব্যবসা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পেছনে ছুটবে। সেটাকেই আমরা নাম দিলাম সামাজিক ব্যবসা।’

উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া আয়োজিত একটি জন-বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়াকালে তার ‘৩ শূন্য’, অর্থাৎ শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের ধারণার ব্যাখ্যা করেছিলেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।