Home ইসলাম মরক্কোর প্রথম নারী মন্ত্রী ও ফকিহ ছিলেন যে নারী

মরক্কোর প্রথম নারী মন্ত্রী ও ফকিহ ছিলেন যে নারী

-মরক্কোর দ্বিতীয় হাসান মসজিদ।

।। মো. আবদুল মজিদ মোল্লা ।।

খানাসা বিনতে বাক্কার মাগাফিরি (রহ.) ছিলেন মরক্কোর চিরস্মরণীয়-বরণীয় নারীদের একজন। তিনি একই সঙ্গে একজন রানি ও প্রাজ্ঞ আলেমা ছিলেন। খানাসা বিনতে বাক্কার (রহ.) ফিকাহ, হাদিস, সাত কেরাত ও তাসাউফ শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। তিনি ছিলেন সুলতান মাওলা ইসমাইলের স্ত্রী, সুলতান মাওলায়া আবদুল্লাহর মা এবং সুলতান সাইয়িদি মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর দাদি।

তাঁর পিতা শায়খ বাক্কার (রহ.) ছিলেন মৌরিতানিয়ার শাসক ও বনু মাকালের নেতা।
মরক্কোর ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় প্রথম আলেমা। ফিকাহশাস্ত্রের প্রতি শায়খা খানাসা (রহ.)-এর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি সমকালীন নানা বিষয়ে মতবিনিময় করতেন, এমনকি তাঁদের সঙ্গে জ্ঞান ও বুদ্ধি ভিত্তিক বিতর্কে লিপ্ত হতেন।

রাজমহলে ইলমি মজলিস হলে তিনি আড়াল থেকে অংশ নিতেন।
মুহাম্মদ বিন তাইয়িব কাদেরি লেখেন, ‘খানাসা বিনতে বাক্কার (রহ.) ছিলেন একজন দক্ষ ফিকাহবিদ। তিনি ফিকাহচর্চার সূচনাকালে কাগজে ফিকহি আলোচনা লিখে শায়খ মাক্কি দুকালি (রহ.)-এর কাছে পাঠাতেন, যেন তিনি তা সংশোধন করে দেন। তবে এটা খুব দীর্ঘ সময় করতে হয়নি।

অল্প দিনেই তিনি জ্ঞানগত দক্ষতা অর্জন করেন। ফলে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেমদের গ্রন্থে তিনি উদ্ধৃত হতে লাগলেন।’
ইতিহাস গবেষক দানিয়া জুয়াইমি লেখেন, পিতা শায়খ বাক্কার (রহ.)-এর তত্ত্বাবধানেই খানাসা (রহ.)-এর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। তিনি অল্প বয়সে কোরআন হিফজ এবং সাত কেরাতের পাঠগ্রহণ করেন। শরয়ি জ্ঞানে উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করেন।

এমনকি তাঁকে মরক্কোর শ্রেষ্ঠ ফকিহদের (ইসলামী আইনবিদ) একজন মনে করা হতো।
খানাসা (রহ.)-এর পুরো নাম হলো খানাসা বিনতে শায়খ বাক্কার বিন আলব বিন আবদুল্লাহ মাগাফিরি। মরক্কোর সাহারা অঞ্চলের মেয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে তাঁর গোত্র বনু মাকালের শক্ত অবস্থান ও ঘাঁটি ছিল। সুলতান মাওলা ইসমাইল সিংহাসনে আরোহণের সাত বছর পর ১০৮৯ হিজরিতে মরু অঞ্চলে তাঁর শাসন সুদৃঢ় করার ইচ্ছা করলেন। তাঁরই অংশ হিসেবে বনু মাকালের প্রভাবশালী নেতা শায়খ বাক্কারের মেয়েকে বিয়ে করেন। অবশ্য মাওলা ইসমাইলের মাতাও বনু মাকালের গোত্রভুক্ত ছিলেন।

খানাসা বিনতে বাক্কার (রহ.) বাগ্মিতা, সুতীক্ষ বুদ্ধিমত্তা ও পরিচালনার বিশেষ যোগ্যতা রাখতেন। ফলে সুলতান রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি সুলতানের একজন বিশ্বস্ত মন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিতেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতেন। অভাবী মানুষের অভাব দূর করতেন, বিশেষত যেসব অভাবী মানুষ আত্মমর্যাদার কারণে মানুষের কাছে চাইতে পারে না—খুঁজে খুঁজে তাদের সাহায্য করতেন। তিনি মুকানাস শহরে নিজের নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। শায়খ মুহাম্মদ বিন আলী তাবারি (রহ.) তাঁর বংশধারা, পরিবার, সাহসিকতা ও জ্ঞানগত দক্ষতার উচ্চ প্রশংসা করেন।

ছেলে মাওলায়া আবদুল্লাহ সুলতান হওয়ার চার বছর পর হজ করতে বের হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নাতি সাইয়েদি মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ এবং বড় একটি দল। ১১ জমাদিউস সানি ১১৪৩ হিজরি খানাসা (রহ.) ‘মুকানাসুজ জাইতুন’ প্রাসাদ ত্যাগ করেন। পবিত্র দুই মসজিদের উপহার হিসেবে এক লাখ দিনার সঙ্গে নেন। পথে পথে তিনি প্রচুর পরিমাণ অর্থ দান করেন। অবশেষে ৭ জিলহজ সকালে মক্কায় পৌঁছান। তিনি মক্কায় বেশ কিছু স্থাবর সম্পদ কিনে আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করেন। তার ভেতর রয়েছে মসজিদুল হারামের বাবুল ওমরাহ। এটি তিনি মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণেরে জন্য দান করেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

মন্ত্রী শারকি খানাসা (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফরে ছিলেন। তিনি বলেন, স্বাধীন নারীদের মধ্যে যাঁরা মাওলা ইসমাইলের ঘরে এসেছেন তাঁদের কেউ সাইয়েদা খানাসার সমকক্ষ নন। সাহসিকতা, কল্যাণকামিতা, ব্যক্তিত্ববোধ, বুদ্ধিমত্তা, দ্বিনদারি, জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যে কেউ নিকটবর্তীও ছিলেন না।

খানাসা বিনতে বাক্কার (রহ.) জমাদাল উলা ১১৫৯ হিজরিতে ফেজ শহরে ইন্তেকাল করেন।

তথ্যঋণ প্রবন্ধ : দাউরুল মারআতিল মাগরিবিয়্যাহ ফি সানাআতিন নাখবিদ দিনিয়্যাহ ওয়াস সিয়াসিয়্যাহ, বই : ইত্তিহাফু আলামিন নিসা : ১/২৯; আর-রাবিতা ডটএম

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।