Home লাইফ স্টাইল কর্মক্ষেত্রে যেভাবে বসদের নজর কাড়বেন!

কর্মক্ষেত্রে যেভাবে বসদের নজর কাড়বেন!

আপনি বুদ্ধিমান। নিজের কাজ ভালো বোঝেন, আপনার কাছে ভালো ভালো আইডিয়া আছে। আছে অন্তর্দৃষ্টি এবং নতুন নতুন আরও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি আপনি পাচ্ছেন না। আপনার বসের পক্ষ থেকেও খুব একটা সহায়তা পাননি। এখন বসকে না ডিঙিয়ে কীভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজর কাড়বেন?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছি আমার সবচেয়ে সফল দুই ক্লায়েন্টের সঙ্গে। তাদের একজন ডেভ ম্যাককিন, এলিয়াসেন গ্রুপের সিইও। তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ২১টি অফিসকে কৌশলগত পরামর্শ এবং প্রতিভা সমাধান দিয়ে থাকেন। আরেকজন বেনকো ডেন্টালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাক কোহেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ডেন্টাল ডিস্ট্রিবিউটর। 

নেতৃত্ব দেওয়ার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে চাক ও ডেভের। এই পুরোটা সময় তারা ‘ভবিষ্যত তারকা’দের সন্ধানে ছিলেন। এরা প্রায়শই কঠোর পরীশ্রমী কর্মী হয়ে থাকে—শুধু কোম্পানির সাফল্যের জন্যেই নয়, বরং তাদের আশেপাশের লোকদের সাফল্যের জন্যেও এরা পরিশ্রম করে। তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদন্নতি পায় এবং অন্যদের চোখেও পড়ে, কারণ তারা আরও উচ্চস্তরে দুর্দান্ত কাজ করার সম্ভাবনা দেখায়।

আলোচনা করার পরে চাক, ডেভ ও আমি দশটি ধাপ চিহ্নিত করেছি, যা আপনাকে সিনিয়র নেতৃত্বদের চোখে পড়তে সাহায্য করবে। এই কাজগুলো আপনার সরাসরি বসকে বিচলিত না করেই আপনাকে বড় পদ পেতে এবং বৃহত্তর সুযোগের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

কোম্পানি এবং নিজের উন্নতির প্রতি আপনার নিবেদন দেখান। আপনি কতটা সিরিয়াস, তা দেখানোর একটি উপায় হলো অফিসের বাইরে এমন দক্ষতা শেখার জন্য সময় দেওয়া যা আপনাকে কোম্পানিতে আরো ভালো কাজ করে অবদান রাখতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, এমন কোনো কোর্স নিতে পারেন যা আপনি বর্তমানে যে কাজটি করছেন তার জন্য সহায়ক হবে। অথবা আপনি যে ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে চান সে বিষয়ে পড়া বা জানার চেষ্টা করুন৷ যেমন, আপনি যদি কৌশল গ্রহণে আরও ভালো হতে চান, তবে আপনার বসকে (এবং বসের বসকেও) জিজ্ঞেস করুন যে তারা কোনো বই সাজেস্ট করতে পারেন কি না। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি পাওয়ার আরেকটি উপায় হলো বসকে বলা যে আপনি বিশেষ প্রকল্পগুলোতে কাজ করতে আগ্রহী, যা কোম্পানিকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে এবং আপনার নিজেকে আরও ভালো করতে পারার সুযোগ দেবে। 

আপনার নিজের চেয়ে টিমের সাফল্যের দিকে মনোনিবেশ করুন। যদিও আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আপনাকে নিজের সাফল্যের দিকে মনোনিবেশ করতে বলবে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদেরই বেশি লক্ষ করেন যারা যৌথভাবে কাজ করে এবং অন্যদের সমর্থন জোগায়। তারা বিশ্বাস করে, একটি দলের একসাথে ভালোভাবে কাজ করার মধ্যেই সাফল্যের সবচেয়ে বড় সুযোগ নিহিত। ডেভ বলেন, ‘যেসব মানুষ অন্যদের সফলতায় সাহায্য করার জন্য সময় এবং পরামর্শ দেয়, এই মানুষগুলো অমূল্য।’

আপনার কাজকে নিজের করে নিন। বড় সংস্থায় কর্মরত প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে চান—বিশেষ করে সবার চোখ ওই কর্মীর আপনার দিকে থাকার সময়, যেমন উপস্থাপনা, মিটিং বা প্রকল্প প্রতিবেদন। এমন পরিস্থিতিতে নিজের অবদানের মূল্য প্রমাণ করতে পারলে আপনি একজন কর্মচারী এবং দলের সদস্য হিসেবে নিজের মূল্য প্রমাণ করতে পারবেন। একে সিনিয়র নেতাদের কেন আপনার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত, তা দেখানোর সুযোগ হিসেবে ভাবুন। তবে মনে রাখবেন, এর অর্থ নিজের ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া। কোনো অজুহাত দেওয়া যাবে না—এমন মানসিকতা পোষণ করুন। 

কথাকে কাজে পরিণত করুন এবং কাজটি ভালোভাবে করুন। একবার কিছু করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে সেই কাজটি ভালোভাবে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোন। কর্মক্ষেত্রে যখন ফাঁকা পদ তৈরি হয় , তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন কাউকে খোঁজেন যার কাজটি সম্পন্ন করার এবং ইতিবাচক ফলাফল আনার ভালো ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ভালো কাজের সঙ্গে আপনার নাম যুক্ত হওয়া দরকার। যারা ছোট প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে, তাদেরকে পরে বড় প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কৌশলগতভাবে চিন্তা করার জন্য নিজেকে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিন। আরও দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ভূমিকায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশলগত চিন্তাবিদ হওয়া অপরিহার্য। ভালো কর্মচারীরা জানে কীভাবে কৌশলের সঙ্গে অফিসের প্রতিদিনের কার্যকলাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। চাক বলেন, ‘আপনি যদি কৌশলগত চিন্তা-ভাবনায় ভালো হতে চান, আপনাকে অনুশীলন করতে হবে। এটি একটি পেশির মতো যার ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যত বেশি কাজ করবেন, আপনার তত উন্নতি হবে।’

পুরানো পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং নতুন সমাধান খুঁজুন। আপনার কোম্পানি যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তার সমাধানের জন্য আপনি কি ভিন্ন পদ্ধতি দেখতে পাচ্ছেন? অথবা কোনো সৃজনশীল উপায় নতুন চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলা করার সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন? আপনার কোম্পানি যদি প্রগতিশীল চিন্তার হয়, তবে সব ধারণাকে স্বাগত জানানো উচিত—বিশেষ করে আপনি যদি সেগুলোকে নম্রভাবে উপস্থাপন করেন এবং আপনার ভালো অতীত অভিজ্ঞতা প্রশংসার সাথে সামনে তুলে ধরেন। 

আরও পড়তে পারেন-

ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করুন। আপনাকে অফিসের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও স্মার্ট কর্মী হতে হবে না, তবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার সময় আপনাকে চিন্তাশীল হতে হবে। ধরুন, কোনোকিছু উপস্থাপনা করছেন অথবা একটি গ্রুপ প্রকল্পে কাজ করছেন বা আপনার বসের সাথে কোনো জটিল বিষয়ে কথা বলছেন। সেক্ষত্রে আপনার দর্শকদের জানা এবং তাদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবেন, সে বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ব্যক্তি এবং পরিস্থিতি আপনাকে আলাদা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করবে। এসব ক্ষেত্রে কীভাবে মানিয়ে নেবেন এবং কীভাবে সামঞ্জস্য রক্ষা করবেন, তা জানুন। কোনোকিছু উপস্থাপন করার সময় নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী দেখান। উদাহরণস্বরূপ, সহকর্মীদের সাথে কাজ করার সময় আরও নম্র হোন। কিছু পরিস্থিতিতে কৌতূহল নিয়ে আপনার বসের কাছে যেতে চাইতে পারেন, তবে নিজের পয়েন্টের সপক্ষে তথ্যসহ তার কাছে যান। 

প্রতিষ্ঠানজুড়ে মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। প্রতিষ্ঠানে শুধু নিজের ‘উইং’য়ের মধ্যে আটকে থাকবেন না। আপনার কোম্পানির অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাদের সহযোগিতা করার সুযোগ খুঁজুন। আপনি যখন নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন, তখন আপনার বন্ধুর পরিধি বাড়বে। সেইসঙ্গে আরও বেশি মানুষের চোখে পড়বেন এবং আপনার প্রভাবও বাড়ে।

সংগঠনের মূল্যবোধ এবং লক্ষ্য নিজের মধ্যে লালন করুন। একজন শক্তিশালী নেতা মূল্যবোধ সম্পর্কে জানেন , সে হিসেবে জীবনযাপন করেন এবং অন্যদের মধ্যে মূল্যবোধ বজায় রাখতে উৎসাহ প্রদান করেন। ডেভ বলেন, ‘একজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সবচেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে, সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করতে হবে না।’ কোম্পানির উদ্দেশ্য এবং মূল্যবোধের প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতি দেখানোর সর্বোত্তম উপায় হল সেগুলো সম্পর্কে কথা বলা। যেসব সহকর্মীর কাজকর্ম আপনার প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, মিটিংয়ে তাদের প্রশংসা করুন। এছাড়া আপনার নিজস্ব প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করার সময়, ওই প্রকল্প কীভাবে কোম্পানির মূল উদ্দেশ্যের প্রতিফলন, তা তুলে ধরুন। 

মুখ ফুটে সুযোগ চান। মুখ ফুটে আপনার দক্ষতা এবং প্রতিভা দেখানোর সুযোগ চাইতে ভয় পাবেন না। নিজ থেকে উদ্যোগী হওয়া সর্বদাই ভালো কাজ। যদি এমন কোনো কাজের সুযোগ দেখেন যেখানে কাজ করে কোম্পানির জন্য আপনি সম্পদ হতে পারবেন, সেখানে অংশ নেওয়ার জন্য সুযোগ চান। সেক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করুন কেন আপনি বিশ্বাস করেন যে এই ক্ষেত্রে আপনি মূল্যবান অবদান রাখতে পারবেন। সেইসাথে আপনি এই সুযোগ থেকে কী লাভ করবেন, সেটাও ব্যাখ্যা করুন। কারণ শেষ পর্যন্ত আপনার বস এবং বসের বস আপনাকে এমন একটি জায়গায় রাখতে চাইবেন, যেখানে আপনি সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারবেন। 

বসের চোখে পড়ার কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। এমনকি কোনো সংক্ষিপ্ত পথ যদি খুঁজেও পান, সময়ের আগে যদি সেখানে পৌঁছানও, তবে কাজটি ভালোভাবে করার জন্য যা প্রয়োজন, তা আপনার কাছে না-ও থাকতে পারে। আপনি যদি নিবেদন, ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করে যান, তবে দুর্দান্ত কেরিয়ার গড়তে কিছু সময় নেয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।