Home ফিকহ ও মাসায়েল ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও ইসলাম

ট্রান্সজেন্ডারবাদ ও ইসলাম

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

আমাদের সুবিশাল এই পৃথীবিতে রয়েছে অসংখ্য অগণিত প্রাণীর অস্তিত্ব। সব প্রাণীর মধ্যেই মৌলিকভাবে দুটি শ্রেণী বা লিঙ্গ রয়েছে; পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিংঙ্গ। মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ এই দুই লিঙ্গে বিভক্ত। এর বাইরে তৃতীয় কোনো লিঙ্গ বা শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না, এখনও নেই। একজন মানুষের জন্মই হয় পুরুষ বা নারী হিসেবে। তবে কারো কারো শারীরিক কেনো ত্রুটি থাকতে পারে, অথবা অপূর্ণতা থাকতে পারে তার কোনো অঙ্গে। আমরা তাদেরকে জন্মপ্রতিবদ্ধী বলি। মানুষ যখন চোখ ছাড়া জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে জন্মান্ধ বলা হয়। একজন অন্ধ বা প্রতিবদ্ধী যেমন পুরুষ হতে পারে আবার নারীও হতে পারে। চোখ না থাকার কারণে আমরা কোনো অন্ধকে পুরুষ বা নারী থেকে বের করে তার জন্য ভিন্ন কোনো লিঙ্গ দাঁড় করাই না। অন্যান্য অঙ্গের মতো একজন মানুষ তার যৌনাঙ্গ ছাড়া বা ত্রুটিপূর্ণ যৌনাঙ্গ নিয়েও জন্মাতে পারে। তাই বলে তো তাকে পুরুষ বা নারী থেকে বের করে অন্য কোনো সমাজের বা লিঙ্গের বলতে পারি না। সর্বোপরি সুস্থ-অসুস্থ, অন্ধ-বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী-অঙ্গহীন সবাই মানুষ, সবাই মানব সমাজের অংশ। কেউ পুরুষ, কেউ নারী।

লিঙ্গ পরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ বলতেই সামাজিক। জীবন যাপন, বসবাস, বেড়ে ওঠা সহ সবক্ষেত্রেই তারা সমাজবদ্ধতাকে পছন্দ করে, বরং সমাজবদ্ধতা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। মানব সমাজ দুটি অংশ নিয়ে গঠিত; পুরুষ এবং নারী। আর শক্তি, সক্ষমতো, নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের মধ্যে বেশ ফারাক রয়েছে। সেই হিসাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা দুটি ব্যবস্থা থাকে। কিছু স্থান থাকে নারীর জন্য সংরক্ষিত, কিছু থাকে পুরুষের জন্য নির্ধারিত। আর পুরুষ নারীর বিশেষ স্থানে বা নারীর পুরুষের জায়গায় অবাধে প্রবেশ করা কারো জন্যই নিরাপদ নয়। তাই প্রয়োজন সুস্পষ্ট লিঙ্গ পরিচয়। আর একজন মুসলিমের লিঙ্গ পরিচয় তো তার ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে অতিবজরুরী। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অসংখ্য জায়গায় প্রয়োজন পড়বে তার লিঙ্গ পরিচয়ের। খৎনা, উত্তরাধিকার, বিবাহ, সাক্ষ্য, পর্দা, পোশাক, ইমামতি, হজ¦, যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও গনিমতো বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, অপরাধের শাস্তি, কারাবরণ, মৃত্যর পর গোসল ও জানাযার নামাজ সহ অনেকগুলো ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের জন্য তার লিঙ্গ পরিচয় জানা থাকা আবশ্যক।

নারী-পুরুষ বা লিঙ্গ বিভাজন

আল্লাহ তায়ালা পুরুষের দেহ শুক্রানু তৈরি করার উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। আর নারীর শরীর সৃষ্টি করেছেন ডিম্বানু তৈরির উপযোগী করে। আবার পুরুষদের শরীরের বাহ্যিক অঙ্গ ও বেশভূষা ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন, নারীদেরকে সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন রকম করে। এর উপরই দাঁড়িয়ে আছে মানব জাতির পুরো প্রজনন ব্যবস্থা। সুতরাং যার শরীর শুক্রানু তৈরির জন্য প্রস্তুত, বাহ্যিক অঙ্গও ঠিক আছে সে একজন সুস্থ পুরুষ এবং যার শরীর ডিম্বানু তৈরি করার উপযোগী, বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও ঠিকঠাক আছে সে একজন সুস্থ নারী। এছাড়া পুরুষ ও নারী নির্ধারণের আর কোনো মানদন্ড নেই। কারো প্রজনন ও বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সব পুরুষের আর সে দাবি করবে সে নারী, অথবা বাহ্যিক ও প্রজনন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সব নারীর সে দাবি করে বলবে, সে একজন পুরুষ- তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর কথা। ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞান কোনোটিই তার বক্তব্যকে সমর্থন করবে না। তবে হ্যাঁ, কারো কারো প্রজনন অঙ্গ বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে মিল থাকে না, তাদেরকে (Intersex) বা আন্তলিঙ্গ বলা হয়। বাংলায় যাকে ‘হিজড়া’ বলা হয়। তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম, প্রতি পাঁচ হাজার বা তারচেয়েও বেশী শিশুর মধ্যে একজন আন্তলিঙ্গ বা হিজড়া হতে পারে। আর তারা প্রত্যেকে পুরুষ কিংবা নারীরই অন্তর্ভূক্ত। করণ তারা মূলত নারী বা পুরুষ, আভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গও নারী বা পুরুষেরই, তবে বাহ্যিক অঙ্গে জিন বা হরমোনগত সমস্যার কারণে তার লিঙ্গ শনাক্ত করতে অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও তাদেরকে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে তাদের আভ্যন্তরীণ প্রজনন গ্রন্থি ও ক্রোমোজমের মাধ্যমে তাদের লিঙ্গ পরিচয় লাভ করা সম্ভব।

লিঙ্গ শনাক্ত করণে ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

ইসলাম কখনই মানুষের জন্য পুরুষ ও নারীর বাইরের কোনো লিঙ্গ বা সম্প্রদায়ের ধারণা দেয়নি। বরাবরই ইসলাম মানুষকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে। আল্লাহ তাআ’লা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন জায়গায় ইরশাদ করেছেন-

এক. وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى আর তিনিই যুগল সৃষ্টি করেছেন- পুরুষ ও নারী। (সূরা আন-নাজম, আয়াত- ৪৫)।

দুই. وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى এবং শপথ সেই সত্তার, যিনি সৃষ্টি করেছেন পুরুষ ও নারী। (সূরা আল-লাইল, আয়াত- ৩)।

তিন. وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنْثَى অর্থাৎ- বস্তুত পুত্র কন্যার মতো নয়। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত- ৩৬)।

চার. أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا অর্থাৎ- তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। (সুরা আর-রূম, আয়াত- ২১)।

পাঁচ. يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি থেকে, এবং তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। (সূরা আন-নিসা, আয়াত- ১)।

ছয়. يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا অর্থাৎ- হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার। (সূরা হুজুরাত, আয়াত- ১৩)।

সাত. { فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى} [القيامة: ৩৯] অর্থাৎ- অতঃপর তা (মাংসপিণ্ড) দ্বারাই তিনি নর-নারীর যুগল সৃষ্টি করেছেন। (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত- ৩৯)।

কুরআনুল কারীমে বর্ণিত আয়াত সমূহ দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে পুরুষ ও নারী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া আর কোনো লিঙ্গ আল্লাহ তাআ’লা সৃষ্টি করেননি। মুফাসিসরীনে কেরামও আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট ভাবে এমন উক্তিই পেশ করেছেন। একই বক্তব্য পেশ করেছেন ফুকাহায়ে কেরামও। এমনকি ফুকাহায়ে কেরাম যাদের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ত্রুটির কারণে লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় তাদের লিঙ্গ পরিচয় লাভ করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। যা তাঁরা ফিকহের গ্রন্থাবলিতে ‘‘ অধ্যায়: খুনসা (হিজড়া)’’ শিরোনামে উল্লেখ করেছেন। ধারাবাহিক ভাবে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হবে।

মুফাসিসরীন ও ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য

ইমাম আবু বকর আল-জাসসাস (মৃ: ৩৭০ হি.) রহিমাহুল্লাহ বলেন-
وقوله تعالى وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثى مِنْ نُطْفَةٍ إِذا تُمْنى قال أبو بكر لما كان قوله الذكر والأنثى اسم للجنس استوعب الجميع وهذا يدل على أنه لا يخلوا من أن يكون ذكرا أو أنثى وأن الخنثى وإن اشتبه علينا أمره لا يخلو من أحدهما وقد قال محمد بن الحسن إن الخنثى المشكل إنما يكون ما دام صغيرا فإذا بلغ فلا بد من أن تظهر فيه علامة ذكر أو أنثى وهذه الآية تدل على صحة قوله آخر سورة النجم. (أحكام القرآن للجصاص ت قمحاوي ৫/২৯৮ دار إحياء التراث العربي – بيروت)

আল্লাহ তাআ’লার বাণী ‘‘ وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثى مِنْ نُطْفَةٍ إِذا تُمْنى’’।

ইমাম আবু বকর আল-জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেন: (الذكر) ‘‘পুরুষ’’ ও (الأنثى) ‘‘নারী’’ শব্দদ্বয় যেহেতু শ্রেণীবাচক বিশেষ্য, তাই আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী এটি উক্ত শ্রেণীর সকল সদস্যকে অন্তর্ভূক্ত করবে। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মানুষ হয়তো পুরুষ হবে, নয়তো নারী হবে। আর ‘খুনসা’ বা হিজড়ার লিঙ্গ পরিচয় আমাদের কাছে অস্পষ্ট থাকলেও তারা পুরুষ বা নারীরই অন্তর্ভূক্ত। ইমাম মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন: ‘‘লিঙ্গ পরিচয়ে অস্পষ্টতা থাকে প্রপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। একটি হিজড়া শিশু সাবালক হওয়ার পর অবশ্যই তার মধ্যে পুরুষ বা নারীর লক্ষণ প্রকাশ পাবে”। আর উপরোক্ত আয়াত তার বক্তব্যকে সমর্থন করে। (আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহ- ৫/২৯৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরবি, বৈরুত)।

ইমাম ফখরুদ্দিন আর-রাযি (মৃ: ৬০৬ হি.) রহিমাহুল্লাহ বলেন-

القسم بالذكر والأنثى يتناول القسم بجميع ذوي الأرواح الذين هم أشرف المخلوقات، لأن كل حيوان فهو إما ذكر أو أنثى والخنثى فهو في نفسه لا بد وأن يكون إما ذكرا أو أنثى، بدليل أنه لو حلف بالطلاق، أنه لم يلق في هذا اليوم لا ذكرا ولا أنثى، وكان قد لقي خنثى فإنه يخنث في يمينه. (تفسير الرازي = مفاتيح الغيب أو التفسير الكبير ৩১/ ১৮২ دار إحياء التراث العربي – بيروت)

কুরআন মাজিদে পুরুষ ও নারী দুটি শ্রেণী বিভজন পুরো মানব জাতিকে শ্রেণীদুটিতে বিভক্তিকে বুঝায়; কারণ সকল প্রাণীই হয় পুংলিঙ্গ, না হয় স্ত্রীলিঙ্গ। আর ‘হিজড়া’ ব্যক্তি অবশ্যই পুরুষ কিংবা নারী। এই কারণেই যদি কেউ শপথ করে যে, যদি সে আজ কোনো পুরুষ বা নারীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাহলে তার স্ত্রী তালাক। এরপর সে কোনো হিজড়ার সাথে সাক্ষাৎ করল। এর দ্বারা তার স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যাবে। (আত-তাফসিরুল কাবির, ইমাম ফখরুদ্দিন আর-রাযি- ৩১/১৮২, প্রকাশক- দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরবি, বৈরুত)।

মুফাসিসর জারুল্লাহ জামাখশরি (মৃ: ৫৩৮ হি.) রহিমাহুল্লাহ বলেন-

والخنثى، وإن أشكل أمره عندنا فهو عند الله غير مشكل، معلوم بالذكورة أو الأنوثة، فلو حلف بالطلاق أنه لم يلق يومه ذكرا ولا أنثى، ولقد لقى خنثى مشكلا: كان حانثا، لأنه في الحقيقة إمّا ذكرا أو أنثى، وإن كان مشكلا عندنا. (تفسير الزمخشري = الكشاف عن حقائق غوامض التنزيل (৪/ ৭৬২دار الكتاب العربي – بيروت)

‘খুনসা’ বা হিজড়ার লিঙ্গ পরিচয় যদিও আমাদের দৃষ্টিতে অস্পষ্ট, আল্লাহ তাআ’লার কাছে তার লিঙ্গ পরিচয় অস্পষ্ট নয়। আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানেন সে পুরুষ নাকি নারী। সুতরাং কেউ যদি শপথ করেÑ সে আজ কোনো নারী বা পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করলে তার স্ত্রী তালক, এরপর সে যদি কোনো হিজড়ার সাথে সক্ষাত করে তাহলে তার স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যাবে। করণ সে বাস্তবে পুরুষ, না হয় নারী, যদিও বিষয়টা আমাদের কাছে অস্পষ্ট। (আল-কাশশাফ, জারুল্লাহ জামাখশরি, ৪/৭৬২ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল কুতুব, বৈরুত)।

ফকিহ আলউদ্দিন আস-সামারকান্দি (মৃ: ৪৫০ হি.) রহিমাহুল্লাহ বলেন-

قال الخنثى من يكون له آلة الرجال وآلة النساء والشخص الواحد لا يكون ذكرا وأنثى ولكن يحتمل أن يكون ذكرا وآلة النساء في حقه نقصان بمنزلة موضع شجة لم تلتئم ويحتمل أن يكون أنثى وآلة الرجال في حقها زيادة بمنزلة الأصبع الزائدة. (تحفة الفقهاء ৩/৩৫৭ دار الكتب العلمية، بيروت )

‘খুনসা’ বা হিজড়া বলা হয় যার পুরুষাঙ্গ ও যোনী উভয়টিই রয়েছে, আর একজন ব্যক্তি কখনও পুরুষ-নারী উভয় লিঙ্গের হতে পারে না। তবে সম্ভবনা রয়েছে যে, হয়তো সে পুরুষ। আর যোনীর মতো অঙ্গটা তার শরীরের কোনো ত্রুটি বিশেষ, অমিলিত ক্ষতচিহ্নের মতো। আবার ঐ ব্যক্তি নারীও হতে পারে, পুরুষঙ্গের সাদৃশ্য অঙ্গটা অতিরিক্ত আঙ্গুলের মতো একটা অঙ্গ। (তুহফাতুল ফুকাহা, আলাউদ্দিন আস-সামারকান্দি- ৩/৩৫৭ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল কুতুব, বৈরুত)।

ইমাম ইবনু কুদামা আল-হাম্বলী রহি (মৃ: ৬২০ হি.) বলেন-

والخنثى هو الذي في قبله فرجان : ذكر رجل وفرج امرأة لا يخلو من أن يكون ذكرا أو أنثى قال الله تعالى : { وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى } وقال تعالى : { وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً } فليس ثم خلق ثالث. (المغني لابن قدامة ৭/ ৬১৯ دار الفكر – بيروت)

‘খুনসা’ বলা হয় যার পুরুষ ও নারী উভয় শ্রেণীর লিঙ্গ রয়েছে। তবে তারাও পুরুষ নয় তো নারী, আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেন: ‘‘আর তিনিই যুগল সৃষ্টি করেনÑপুরুষ ও নারী’’। তিনি আরো বলেন: ‘‘এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী’’। সুতরাং পুরুষ ও নারী ছাড়া তৃতীয় কোনোও লিঙ্গ নেই। (আল মুগনী, ইবনু কুদামা রহি., ৭/৬১৯ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল ফিকর বৈরুত)।

লিঙ্গ-পরিচয় নির্ধারিত হয় কীসের ভিত্তিতে

উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ইসলামে মানুষ বলতেই দুই শ্রেণীর হয়ে থাকে; পুরুষ ও নারী। আর আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, মানুষের লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারিত হবে তার আভ্যন্তরীণ প্রজনন ও বাহ্যিক লিঙ্গ পরিচয়মূলক অঙ্গের মাধ্যমে। সুতরাং যার প্রজনন ও বাহ্যিক অঙ্গের মধ্যে মিল রয়েছে, সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুযায়ী পুরুষ বা নারী হবে। এর বাইরে আর কেনো ‘কষ্টিপাথর’ নেই, যার মাধ্যমে যাচাই করা যাবে যে, মানুষ পুরুষ নাকি নারী। এটিই বলে ইসলামী শরিয়াহ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান। আর এটি যুক্তির দাবিও বটে। ৯৯.৯৮২% মানুষের ক্ষেত্রেই তার লিঙ্গ পরিচয় স্পষ্ট থাকে, অর্থাৎ তার আভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গের সাথে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মিল আছে, বাকি ০০.০১৮% মানুষ যারা ত্রুটি যুক্ত যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্ম লাভ করে, তাদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ শনাক্ত করতে অসুবিধা হয়। (Sax, Leonard. “How Common Is Lntersex? A Response To Anne Faus-To‐Sterling.” Journal Of Sex Research 39, No.3. https://.www.tand-fonline.com/doi/abs/10.1080/00224490209552139(ac-cessed march7,2023).

ইসলাম তার সূচনালগ্ন থেকে সে যুগের নিয়মানুসারে লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করে আসছে। ত্রুটিযুক্ত যৌনাঙ্গবিশষ্ট লোকদের লিঙ্গ শনাক্ত করে তাদেরকে মূল ধারার মানুষ; পুরুষ বা নারীর কাতারে শামিল করেছে। ভিন্ন কোনো লিঙ্গ দাঁড় করিয়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো সম্প্রদায় হিসাবে সাব্যস্ত করেনি, কাউকে ভিন্ন চোখে দেখেনি ইসলাম কখনও।

আন্তলিঙ্গ বা ‘হিজড়া’দের লিঙ্গ নির্ণয়ে ফুকাহায়ে কেরামের নীতি

ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে ফুকাহায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীন প্রত্যেক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী লিঙ্গ নির্ণয় করতেন। সেই হিসাবে ফুকাহায়ে কেরাম ফিকহি গ্রন্থাবলীতে তাঁদের যুগের লিঙ্গ নির্ণয়ে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো তা উপস্থাপন করেন। তার কিছু নমুনা নিম্নে তুলে ধরা হলো।

(كتاب الخنثى)
وفيه فصلان الفصل الأول – في تفسيره ووقوع الإشكال في حاله:
يجب أن يعلم بأن الخنثى من يكون له مخرجان قال البقالي – رحمه الله تعالى – أو لا يكون له واحد منهما ويخرج البول من ثقبة ويعتبر المبال في حقه، كذا في الذخيرة فإن كان يبول من الذكر فهو غلام، وإن كان يبول من الفرج فهو أنثى، وإن بال منهما فالحكم للأسبق، كذا في الهداية وإن استويا في السبق فهو خنثى مشكل عند أبي حنيفة – رحمه الله تعالى -؛ لأن الشيء لا يترجح بالكثرة من جنسه، وقالا: ينسب إلى أكثرهما بولا وإن كان يخرج منهما على السواء فهو مشكل بالاتفاق، كذا في الكافي قالوا: وإنما يتحقق هذا الإشكال قبل البلوغ، فأما بعد البلوغ والإدراك يزول الإشكال فإن بلغ وجامع بذكره فهو رجل، وكذا إذا لم يجامع بذكره ولكن خرجت لحيته فهو رجل، كذا في الذخيرة وكذا إذا احتلم كما يحتلم الرجل أو كان له ثدي مستو، ولو ظهر له ثدي كثدي المرأة أو نزل له لبن في ثدييه أو حاض أو حبل أو أمكن الوصول إليه من الفرج فهو امرأة، وإن لم تظهر إحدى هذه العلامات فهو خنثى مشكل، وكذا إذا تعارضت هذه المعالم، كذا في الهداية وأما خروج المني فلا اعتبار له؛ لأنه قد يخرج من المرأة كما يخرج من الرجل، كذا في الجوهرة النيرة قال: وليس الخنثى يكون مشكلا بعد الإدراك على حال من الحالات؛ لأنه إما أن يحبل أو يحيض أو يخرج له لحية أو يكون له ثديان كثديي المرأة، وبهذا يتبين حاله وإن لم يكن له شيء من ذلك فهو رجل؛ لأن عدم نبات الثديين كما يكون للنساء دليل شرعي على أنه رجل، كذا في المبسوط لشمس الأئمة السرخسي – رحمه الله تعالى -. الفتاوى الهندية (৬/ ৪৩৭- (৪৩৮ دار الفكر

অধ্যায়: খুনসা (হিজড়া)

অনুচ্ছেদ: ‘হিজড়া’-র পরিচয় ও তার লিঙ্গ শনাক্তকরণ নিয়ে অস্পষ্টতা

হিজড়া কয়েক ধরণের হতে পারে; হয়তো তার পুরুষাঙ্গ ও যোনী উভয়টিই থাকবে। (আল্লামা বিকালী রহিমাহুল্লাহ বলেন: অথবা তার কোনো যৌনাঙ্গই থাকবে না, আর সে প্রস্রাব করার স্থানে একটি ছিদ্র থকবে, যার সাহায্যে সে প্রস্রাব করে।) তার ক্ষেত্রে প্রস্রাবের স্থানকেই লিঙ্গ পরিচয়ের মাপকঠি ধরা হবে। এমনটিই রয়েছে ‘যাখিরা’ নামক কিতাবে। সুতরাং যদি সে পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে, তাহলে ধরা হবে সে একজন পুরুষ, আর যদি প্রস্রাব করে যোনী দিয়ে, তাহলে তাকে একজন নারী হিসাবে ধরা হবে। আর যদি পুরুষাঙ্গ ও যোনী উভয় স্থান থেকেই প্রস্রাব নির্গত হয়, তাহলে যে স্থান থেকে আগে নির্গত হবে তার বিবেচনা করা হবে, হিদায়া কিতাবে এমনটিই বলা হয়েছে।

আর যদি প্রস্রাব একত্রে বের হয়, তাহলে তাকে আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ ‘খুনসা মুশকিল’ (লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করা জটিল এমন হিজড়া) বলে থাকেন। কারণ ‘‘একই শ্রেণীর একাধিক বস্তুর একটাকে প্রাধান্য দেওয়া যায় না’’। আর ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহিমাহুমাল্লাহ-র মতে যে স্থান থেকে বেশি প্রস্রাব নির্গত হবে লিঙ্গ শনাক্ত করণের ক্ষেত্রে তার বিবেচনা করা হবে। আর যদি উভয় স্থান থেকে সমান পরিমাণে প্রস্রাব বের হয় তাহলে সবার ঐক্যমতে সে একজন ‘খুনসা মুশকিল’ (লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করা জটিল এমন হিজড়া) এমনটিই বর্ণিত হয়েছে ‘কাফী’ নামক গ্রন্থে।

আরও পড়তে পারেন-

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন- হিজড়ার লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয় বয়ঃসন্ধির পূর্বে। তবে হিজড়া শিশু সাবালক হওয়ার পর এই জটিলতা কেটে যায়। তাই যদি হিজড়া শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পুরুষাঙ্গ দিয়ে সহবাস করতে সক্ষম হয়, তাহলে বোঝা যাবে সে একজন পুরুষ। একই ভাবে তাকেও পুরুষ হিসেবে ধরা হবে যে পুরুষাঙ্গ দিয়ে সহবাস করতে পারে না ঠিক, কিন্তু তার দাঁড়ি-গোফ গজিয়েছে। এমনই বলা হয়েছে ‘যাখিরা’ নামক কিতাবে। আবার যদি তার পুরুষের মতো স্বপ্নদোষ হয় অথবা বক্ষদেশ মেয়েদের মতো উঁচু না হয়ে সমান থাকে তাহলে তাকেও পুরুষ হিসাবে ধরা করা হবে। আর যদি নারীদের মতো তার বক্ষ উন্নত হয় বা স্তনে দুধ আসে, অথবা তার ঋতুস্রাব হয় বা গর্ভবতী হয় কিংবা তার যোনীপথে সহবাস করা সম্ভব হয়, তাহলে বোঝা যাবে সে একজন নারী। আর যদি এধরণের কোনো চিহ্নই তার মাঝে পরিলক্ষিত না হয়, বা পুরুষ ও নারী উভয় শ্রেণীর চিহ্ন তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, তাহলে সে একজন ‘খুনসা মুশকিল’ (লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করা জটিল এমন হিজড়া)।

এমনই বলা হয়েছে ‘হিদায়া’ কিতাবে। আর হিজড়াদের লিঙ্গ শনাক্ত করণের ক্ষেত্রে বীর্যপাতের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। করণ কখনো কখনো পুরুষের মতো নারীদেরও বীর্য়পাত হয়। ‘জাওহারাতুন নাইয়ারা’ গ্রন্থে এমনই বলা হয়েছে, গ্রন্থকার বলেনÑ সাবালক হওয়ার পর হিজড়ার লিঙ্গ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের জটিলতা থাকতে পারে না। কারণ হয়তো সে গর্ভবতী হবে বা তার ঋতুস্রাব আসবে অথবা তার দাঁড়ি গজাবে, অথবা তার স্তন নারীদের মতো হবে। এসব দ্বারা তার লিঙ্গ পরিচয় লাভ করা যাবে। আর যদি এমন কোনো লক্ষণ তার মধ্যে পরিলক্ষিত না হয়, তাহলে তাকে পুরুষ ধরা হবে। কেননা নারীদের মতো স্তন উন্নত না হওয়াটা শরয়ীভাবে প্রমাণ করে যে, সে একজন পুরুষ। এমনটিই ইমাম সারাখসী রহিমাহহুল্লাহ-র প্রণীত ‘মাবসুত’ কিতাবে আছে। (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, ৬/৪৩৭-৪৩৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল ফিকর)।

(كتاب الخنثى)
)الكلام) فيه يقع في مواضع: في تفسير الخنثى، وفي بيان ما يعرف به أنه ذكر، أو أنثى، وفي بيان حكم الخنثى المشكل.
)أما الأول) فالخنثى من له آلة الرجال والنساء، والشخص الواحد لا يكون ذكرا وأنثى حقيقة، فإما أن يكون ذكرا، وإما أن يكون أنثى.

(فصل في بيان ما يعرف به الخنثى أنه ذكر أو أنثى) (فصل:)
وأما بيان ما يعرف به أنه ذكر، أو أنثى، فإنما يعرف ذلك بالعلامة، وعلامة الذكورة بعد البلوغ نبات اللحية، وإمكان الوصول إلى النساء وعلامة الأنوثة في الكبر نهود ثديين كثديي المرأة ونزول اللبن في ثدييه والحيض والحبل، وإمكان الوصول إليها من فرجها؛ لأن كل واحد مما ذكرنا يختص بالذكورة والأنوثة فكانت علامة صالحة للفصل بين الذكر والأنثى.

وأما العلامة في حالة الصغر فالمبالৃ..فإن كان يبول من مبال الذكور فهو ذكر، وإن كان يبول من مبال النساء فهو أنثى ” وإن كان يبول منهما جميعا يحكم السبق؛ لأن سبق البول من أحدهما يدل على أنه هو المخرج الأصلي وأن الخروج من الآخر بطريق الانحراف عنه. وإن كان لا يسبق أحدهما الآخر فتوقف أبو حنيفة – رضي الله عنه -. وقال: هو خنثى مشكل، وهذا من كمال فقه أبي حنيفة – رضي الله عنه -؛ لأن التوقف عند عدم الدليل واجب. وقال أبو يوسف ومحمد: تحكم الكثرة؛ لأنها في الدلالة على المخرج الأصلي كالسبق فيجوز تحكيمه. ووجه قول أبي حنيفة – عليه الرحمة – أن كثرة البول وقلته لسعة المحل وضيقه فلا يصلح للفصل بين الذكورة والأنوثة، بخلاف السبق، وحكي أنه لما بلغ أبا حنيفة قول أبي يوسف في تحكيم الكثرة لم يرض به، وقال: هل رأيت حاكما يزن البول، فإن استويا توقفا أيضا، وقالا هو خنثى مشكل، والله سبحانه وتعالى أعلم.

فصل في حكم الخنثى المشكل :
وأما حكم الخنثى المشكل فله في الشرع أحكام: حكم الختان وحكم الغسل بعد الموت وحكم الميراث ونحو ذلك من الأحكام. أما حكم الختان……. (بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع 7/327-328 دار الكتب العلمية)

অর্থাৎ- “অধ্যায়- খুনসা/হিজড়া’। এই অধ্যায়ে তিনটি আলোচনা হবে; ‘খুনসা’-র পরিচয়। ‘খুনসা’ পুরুষ নাকি নারী তা কিভাবে বুঝা যাবে। ‘খুনসা মুশকিল’ (লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করা জটিল এমন হিজড়া)-র বিধি বিধান।

‘খুনসা’ -র সংজ্ঞা: খুনসা বলা হয় যার পুরুষ ও নারী উভয় শ্রেণীর যৌনাঙ্গ থাকে, আর একজন ব্যক্তি কখনই বাস্তবিক ভাবে পুরুষ নারী উভয়টি হতে পারে না। হয়তো সে পুরুষ হবে নয়তো নারী হবে।

অনুচ্ছেদ: যে ভাবে খুনসার লিঙ্গ শনাক্ত করা হবে। …

অনুচ্ছেদ: ‘খুনসা মুশকিল’ এর বিধান: ‘খুনসা মুশকিল’দের জন্য ইসলামে অনেক ধরণের বিধান আছে; খৎনার বিধান, মৃত্যুর পর গোসলের বিধান, উত্তরাধিকারের বিধান ইত্যাদি। সুতরাং ‘খুনসা মুশকিল’ এর খৎনার বিধান হলো…. “ (বাদায়ে’ আস-সানায়ে’, ৭/৩২৭-৩২৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল কুতুব)।

এ-ছিল লিঙ্গ শনাক্ত করণে ফুকাহায়ে কেরামের পদ্ধতি, তাঁদের বক্তব্যগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করলে একথা স্পষ্ট হয় যে, ফুকাহায়ে কেরামের উল্লিখিত পদ্ধিতি ছিল তৎকালীন চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসরণে। কারণ লিঙ্গ নির্ণয় হলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজ। আর ফুকাহায়ে কেরামের কাজ হলো শরয়ী হুকুম বলে দেওয়া। আর তাঁরা তাই করেছেন।

বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সুবাধে আরো সহজেই লিঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব। এমনকি ফুকাহায়ে কেরাম যাদেরকে ‘খুনসায়ে মুশকিল’ বা (লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করা জটিল এমন হিজড়া) বলেছেন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে তাদেরও লিঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব। যেমন (Ultrasound) আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা, (গজও) এম আর আই স্ক্যান কিংবা (Chromosome) ক্রোমোজোম যাচাইয়ের মাধ্যমে অতি সহজেই লিঙ্গ নির্ণয় করা যায়।

বর্তমানে লিঙ্গ পরিচয় যাচাই পদ্ধতি

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের (Chromosome) ক্রোমোজোম (Hormone) হরমোন এবং (Testicle/ Testis) শুক্রাশয় ও (Ovaries) ডিম্বাশয় যাচাইয়ের মাধ্যমে তার লিঙ্গ নির্ণয় করে থাকে। লিঙ্গ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট একটি জৈবিক জেনেটিক ভিত্তি আছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পুরুষের কোষে ‘‘XY’’ ক্রোমোজোম থাকে, আর নারীর কোষে ‘‘XX’’ ক্রোমোজোম থাকে। একইভাবে ডিম্বাশয় ও গর্ভাশয় হলো নারীর প্রজনন গ্রন্থি আর পুরুষের প্রজনন গ্রন্থি হলো শুক্রাশয়।

কিন্তু দেখা যায় কখনো কারো বেলায় প্রজনন অঙ্গ তথা শুক্রাশয় বা ডিম্বাশয় তার বাহ্যিক লিঙ্গ পরিচয়মূলক অঙ্গ ও শারীরিক গঠন ভিন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রজনন অঙ্গ পুরুষের আর বাহ্যিক অঙ্গ ও গঠন নারীর বা এর সম্পূর্ণ উল্টা হয়। কিংবা বাহ্যিক অঙ্গ ও গঠনে পুরুষ ও নারীর মিশ্রণ পাওয়া যায় বা বাহ্যিক অঙ্গে ত্রুটি থাকে তাহলে তাকে (Pseudi Hermaphrodite) বা ফিকহি পরিভাষায় (الخنثى الكاذبة) বলা হয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে লিঙ্গ শনাক্ত করা হয় কয়েক ভাবে।

১। যদি কারো আভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গ পুরুষের হয়, আর বাহ্যিক অঙ্গ ও গঠন নারীর সাদৃশ্য হয় তাহলে তাকে (Male Pseudo Hermaphrodite) বা (الخنثى الذكر الكاذب) বলে। তখন উক্ত ব্যক্তির আভন্তরীণ প্রজনন অঙ্গ ও এবং ক্রোমোজোন পুরুষের হওয়ার করণে চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে তাকে পুরুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু তার হরমোনগত সমস্যার কারণে তার বাহ্যিক নারীর সাদৃশ্য অনুভব হয়।

২। এমন প্রকৃতির মানুষ যাদের আভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গ নারীর, আর বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তাদেরকে (Female Pseudo Hermaphrodite) বা (الخنثى الكاذبة) বলা হয়। এই অবস্থায়ও তাদেরকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গ ও ক্রোমোজোম নারীর হওয়ার কারণে নারী হিসাবে ধরা হয়। তবে হরমোনগত ত্রুটি থাকার কারণে বাহ্যিক অঙ্গ পুরুষের সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হয়।

আর কিছু মানুষ পাওয়া যায়, যাদের সংখ্যা নিতান্তই কম, এমন হওয়া একটি দুর্লব ঘটনা মাত্র। তাদের শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় উভয়টিই থাকে এমন প্রকৃতির মানুষকে (True Hermaphrodite) বা (الخنثى الحقيقة) বলা হয়।
মাজাল্লাতুল মাজমাইল ফিকহিল ইসলামীতে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে-

اخلاف تعريف الفقهاء عن تعريف الأطباء للخنثى:
ينظر الطبيب إلى الغدة التناسلية أولا فإن وجدها تحمل المبيض والخصية معا فهذه حالة الخنثى الحقيقية التي هي نادرة الحدوث جدا. أما إن وجد أن الغدة التناسلية مبيض والأعضاء الظاهرة ذكرية فإن تلك الحالة حالة الخنثى الكاذبة التي أصلها أنثى وظاهرها ذكر، وإن كانت الغدة التناسلية خصية والأعضاء الظاهرة تشته الأنثى فإن ذلك هو الخنثى الذكر الكاذب- أي الذي أصله ذكر وظاهره أنثى. ويحاج الطبيب للوصول لمعرفة جنس المولود أو البالغ في الحالات المشتبه فيها إلى معرفة: (أ) الجنس على مستوى الصبغيات (الكروموسومات) ويمكن تحديده بأخذ خلايا من خلايا الدم البيضاء أو خلايا مبطنة للفم لفحصها. (ب) معرفة الغدة التناسلية وذلك بأخذ خزعة (عينة) منها وفحصها نسيجيا. (ج) فحص الأعضاء التناسلية الظاهرة والباطنة وفحص العلامات الثاتوية للذكرورة أو الأنوثة وخاصة في حالة البلوغ. (د) فحص عام للجسم لمعرفة وجود الأورام مثل تلك الموجودة في الغدة التناسلية أو الغدة الكظرية.- مشكلة الخنثى بين الطب الفقه. لسعادة الدكتور السيد علي الباري.(مجلة المجمع الفقهي الإسلامي، العدد السادس، صـ 353 )

অর্থাৎ- “অধ্যায়: খুনসা বা হিজড়ার সংজ্ঞায়নে ফুকাহায়ে কেরাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভিন্নতা ডাক্তারগণ প্রথমে প্রজনন গ্রন্থির প্রতি লক্ষ্য করেন। যদি দেখা যায় কারো ডিম্বকোষও আছে, আবার অন্ডকোষও আছে তাহলে সে ‘খুনসা হাকিকিয়া’ বা প্রকৃত হিজড়া, আর এধরণে মানুষের অস্তিত্ব খুবই বিরল।

আর যদি দেখা যায় প্রজনন অঙ্গ হিসেবে আছে ডিম্বাশয় এবং বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুরুষের মতো, তাহলে তাকে ‘খুনসা কাযিবা’ বা নারী হিজড়া বলা হয়, যে মূলত নারী কিন্তু বাহ্যিকটা পুরুষসুলভ। আর যদি প্রজনন অঙ্গ হিসাবে অন্ডকোষ থাকে আর বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয় নারীসুলভ, তাহলে সে ‘খুনসা কাযিব’ বা পুরুষ হিজড়া। অর্থাৎ সে বাস্তবে পুরুষ, তবে বাহ্যিক অঙ্গে নারীদের সাথে মিল রয়েছে।

যাদের লিঙ্গে পরিচয়ে অস্পষ্টতা আছে (চাই তারা নবজাতক হোক কিংবা সাবালক) তাদের লিঙ্গ শনাক্ত করণে ডাক্তরগণ কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করে থাকেন।

(ক) ক্রোমেজোম যাচাইয়ের মাধ্যমে, তার প্রক্রিয়া হলো; শে^ত রক্তকনিকা বা মুখের আস্তরণের কোষ গ্রহণ করে তা পরীক্ষা করা।

(খ) শরীর থেকে একটি বায়োপসি (নমুনা) নিয়ে হিস্টোলজিক্যালি পরীক্ষা করে প্রজনন গ্রন্থি সনাক্ত করা।

(গ) বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করা এবং নারী ও পুরুষের শ্রেণীগত লক্ষণগুলো যাচাই করা, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময়।

(ঘ) প্রজনন গ্রন্থি বা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মতো টিউমারের উপস্থিতি শনাক্ত করতে প্যালপেশন পরীক্ষা”। (মুশকিলাতুল খুনসা, ড. আলী আল-বারী, মাজাল্লাতুল মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৭ পৃ. ৩৫৩)।

এতোক্ষণ পর্যন্ত ফুকাহয়ে কেরামের উল্লিখিত লিঙ্গ নির্ণয়ের সনাতন পদ্ধতি এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নির্ণয় পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো। বাহ্যিকভাবে কিছু পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। তবে ফুকাহায়ে কেরামের উল্লিখিত পদ্ধতি ভলোভাবে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট হয় যে, তারা এ পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন তাঁদের সমকালীন চিকিৎসা বিজ্ঞানকে সামনে রেখে, কারণ তৎকালীন একজন হিজড়া বা আন্তলিঙ্গ ব্যক্তি বালেগ হওয়ার পূর্বে প্রস্রাব করার ধরণ দিয়ে লিঙ্গ নির্ণয় করা ছাড়া কোনো পথ ছিল না। তবে বালেগ হলে তাঁরাও তাঁদের সে-সময়কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের সক্ষমতোা অনুযায়ী আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক অঙ্গের মাধ্যমেই লিঙ্গ নির্ণয় করার চেষ্টা করতেন। যেমনটি উল্লিখিত হয়েছে ফিকহী গ্রন্থাবলিতে।

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী (মৃ: ১০৮৮ হি.) রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন-

(وهو ذو فرج وذكر أو من عري عن الاثنين جميعا، فإن بال من الذكر فغلام، وإن بال من الفرج فأنثى، وإن بال منهما فالحكم للاسبق، وإن استويا فمشكل ولا تعتبر الكثرة) خلافا لهما، هذا قبل البلوغ (فإن بلغ وخرجت لحيته أو وصل إلى امرأة أو احتلم) كما يحتلم الرجل (فرجل، وإن ظهر له ثدي أو لبن أو حاض أو حبل أو أمكن وطؤه فامرأة، وإن لم تظهر له علامة أصلا أو تعارضت العلاما ت فمشكل) لعدم المرجح، وعن الحسن أنه تعد أضلاعه، فإن ضلع الرجل يزيد على ضلع المرأة بواحد، ذكره الزيلعي، وحينئذ (فيؤخذ في أمره بما هو الاحوط) في كل الاحكام. (الدر المختار شرح تنوير الأبصار وجامع البحار (ص: ৭৫১ دار الكتب العلمية)

অর্থাৎ- প্রস্রাবের অঙ্গের ভিত্তিতে হিজড়ার লিঙ্গ নির্ণয় করা হবে সাবালক হওয়ার পূর্বে। সুতরাং যদি হিজড়া সাবালক হয়, তাহলে দেখতে হবে। যদি তার দাঁড়ি গজায়, নরীর সাথে সহবাস করতে সক্ষম হয় কিংবা পুরুষের মতো স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে বুঝতে হবে সে একজন পুরুষ। আর যদি তার বক্ষ উন্নত হয়, স্তনে দুধ আসে, গর্ভবতী হয় বা সে সহবাসের উপযোগী হয় তাহলে বোঝা যাবে সে একজন নারী। (আদ-দুররুল মুখতার, ৭৫১ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল কুতুব)।

ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়ায় উল্লেখ রয়েছে-

قالوا: وإنما يتحقق هذا الإشكال قبل البلوغ، فأما بعد البلوغ والإدراك يزول الإشكال فإن بلغ وجامع بذكره فهو رجل، وكذا إذا لم يجامع بذكره ولكن خرجت لحيته فهو رجل، كذا في الذخيرة وكذا إذا احتلم كما يحتلم الرجل أو كان له ثدي مستو، ولو ظهر له ثدي كثدي المرأة أو نزل له لبن في ثدييه أو حاض أو حبل أو أمكن الوصول إليه من الفرج فهو امرأة، وإن لم تظهر إحدى هذه العلامات فهو خنثى مشكل، وكذا إذا تعارضت هذه المعالم، كذا في الهداية وأما خروج المني فلا اعتبار له؛ لأنه قد يخرج من المرأة كما يخرج من الرجل، كذا في الجوهرة النيرة قال: وليس الخنثى يكون مشكلا بعد الإدراك على حال من الحالات؛ لأنه إما أن يحبل أو يحيض أو يخرج له لحية أو يكون له ثديان كثديي المرأة، وبهذا يتبين حاله وإن لم يكن له شيء من ذلك فهو رجل؛ لأن عدم نبات الثديين كما يكون للنساء دليل شرعي على أنه رجل، كذا في المبسوط لشمس الأئمة السرخسي – رحمه الله تعالى -. (الفتاوى الهندية دار الفكر- 6/438)

অর্থাৎ- ফুকাহায়ে কেরাম বলেন- হিজড়ার লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয় বয়ঃসন্ধির পূর্বে। তবে হিজড়া শিশু সাবালক হওয়ার পর এই জটিলতা কেটে যায়। তাই যদি হিজড়া শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পুরুষাঙ্গ দিয়ে সহবাস করতে সক্ষম হয়, তাহলে বুঝা যাবে সে একজন পুরুষ। একই ভাবে তাকে পুরুষ হিসাবে ধরা হবে যদি সে পুরুষাঙ্গ দিয়ে সহবাস করতে না পারে, তবে তার দাঁড়ি-গোফ গজায়, এমনই বলা হয়েছে ‘জখিরা’ নামক কিতাবে। আবার যদি তার পুরুষের মতো স্বপ্নদোষ হয় অথাব বক্ষও নিচু থাকে তাহলে তাকেও পুরুষ হিসাবে ধরা হবে। আর যদি নারীদের মতো তার বক্ষ উন্নত হয় বা স্তনে দুধ আসে, অথবা তার ঋতুস্রাব হয় বা গর্ভবতী হয় কিংবা তার যোনীতে সহবাস করা সম্ভব হয়, তাহলে বুঝা যাবে সে একজন নারী। (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়, খ: ৬/৪৩৮ পৃষ্ঠা, প্রকাশক- দারুল ফিকর)।

মোটকথা, তৎকালীন সময়ে মানুষের অভ্যন্তর পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না, তাই তখনকার ডাক্তারগণ বিভিন্ন আলামতো দেখে লিঙ্গ নির্ণয়ের চেষ্টা করতেন। তবে তাদের কাছেও এটি একটি স্বীকৃত বিষয় ছিল যে, লিঙ্গ নির্ধারণ হবে আভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গের মাধ্যমে, বাহ্যিক বেশ-ভূষার মাধ্যমে নয়। তাই তারা আভ্যন্তরীণ লিঙ্গ শনাক্ত করতেই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে যেহেতু আভ্যন্তরীণ লিঙ্গ পরিচায়ক অঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব, তাই যদি ল্যাব-টেস্টের মাধ্যমে কারো আভ্যন্তরীণ লিঙ্গ যাচাই করে তাকে পুরুষ বা নারী হিসাবে শনাক্ত করা যায়, তাহলে তাই তার লিঙ্গ হিসাবে ধরা হবে। যদিও বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভিন্ন কিছু বলে। এমনটিই বলেছেন ড. আলী আল-বারী-

ويعتمد الفقه في تحديد الخنثى على المبال فإن بال من موضع الذكر فهو ذكر، وإن بال من الفرج أو أسفل البظر فهو أنثى. وكانوا يواقفون الخنثى من الأطفال ويطلبون منه أن يتبول إلى حائط فإن سال منه البول ورشه رشا فهو أنثى، وإن قذف التول فهو ذكر. وإن لم يتبين مباله فهو الخنثى المشكل لديهم.

ولا شك إن هذا الفحص قد يؤدي إلى الخطإ فقد يكون الخنثى ذكر في غدته التناسلية وكروموسوماته الجنسية، إلا أن المبال (فتخة صماخ مدري البول) أسفل القضيب وإن كيس الصفن مشقوق حتى يبدو مثل الفرج فيتأكد اعادته لوضعه الطبيعي بإجراء عملية جراحية..ويفقد المصاب بذلك كثيرا من حقوقه في الميراث (حيث يعطى نصيب الأنثى) وفي الفىء إذل اشترك في الجهاد حيث لا يقسم له مثلما يقسم للمقاتلين بل يحذى ويعطى من الغيمة كما تعطى المرأة عندما تشترك في الجهاج… ولا يسمح له بالإمامة في الصلاة ولا القضاء ولا الإمامة العامة.. الخ من الأمور التي مختص بها الذكور.

ولا شك أن تشخيص الفقهاء للخنثى في هذه الحالات خاطئ، ولانلومهم على ذلك فتلك هي معلومات زمنهم. أما اليوم فالقول في موضوع الخنثى يعود لأهل الذكر وأهل الذكر هاهنا هم الأطباء لا الفقهاء، والله سبحانه وتعالى يقول: {فأسْأَلوُا أَهْل الذِكرْ إنْ كُنتمْ لا تَعْلَموُن} .

وكل ما ورد في كتب الفقه عن الخناث فييبغي إرجاء الحكم فيه أولا إلى الأطباء فإن حكموا بأن هذا الشخص ذكر في تركيبه الكروموسومي والغددي فهو كما حكموا، وعلى الفقهاء أن يبينوا أحكامهم بعد ذلك على مايقرره الأطباء. .- مشكلة الخنثى بين الطب الفقه. لسعادة الدكتور السيد علي الباري.(مجلة المجمع الفقهي الإسلامي، العدد السادس

অর্থাৎ- … এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ফুকাহায়ে কেরামের লিঙ্গ নির্ণয়ের সনাতন পদ্ধতি অবলম্বনের ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। আর এটি দোষের কিছু না, কারণ তাদের সময়ে এ ছাড়া লিঙ্গ যাচাইয়ের ভিন্ন কোনো পদ্ধতি ছিল না। সুতরাং বর্তমানে খুনসাদের লিঙ্গ শনাক্ত করা হবে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে। আর এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হলো ডাক্তারগণ, ফুকাহায়ে কেরাম নন। আল্লাহ তাআলা বলেন: তোমরা না জানলে যে জানে তাকে জিজ্ঞাসা করো। সুতরাং ফিকহের কিতাবে খুনসাদের যেসব বিধান আছে তা কার্যকর করার জন্য প্রথমে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হবে। এরপর তারা যদি বলে যে, উক্ত ব্যক্তি ক্রোমোজোম ও গ্রন্থিগত দিক থেকে পুরুষ, তাহলে ডাক্তদের কথা মতে তাকে পুরুষ হিসেবেই ধরা হবে। আর ডাক্তার কর্তৃক লিঙ্গ নির্ধারণের পরে ফুকাহায়ে কেরাম তার সম্পর্কিত শরয়ী বিধান বলে দিবেন। (মুশকিলাতুল খুনসা, ড. আলী আল-বারী, মাজাল্লাতুল মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা- ৭, পৃষ্ঠা- ৩৫৪-৩৫৫)।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ-কথাই স্পষ্ট হয় যে, লিঙ্গ নির্ধারণ হবে আভ্যন্তরীণ লিঙ্গ পরিচয়মূলক অঙ্গ তথা, প্রজনন গ্রন্থি, ক্রোমোজোম, হরমোন ইত্যাদির মাধ্যমে। এটাই হলো লিঙ্গ নির্ণয়ের একমাত্র মানদন্ড। আর সে লিঙ্গ হবে পুংলিঙ্গ অথবা স্ত্রীলিঙ্গ। এছাড়া আর কোনো লিঙ্গের অস্তিত্ব নেই। [চলবে]

– আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও সহযোগী পরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব- নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।