Home ইসলাম মহানবী (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে যেভাবে খোশগল্প করতেন

মহানবী (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে যেভাবে খোশগল্প করতেন

।। জাওয়াদ তাহের ।।

স্ত্রীর সঙ্গে খোশগল্প করা, রসিকতা করা, কৌতুক করা প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নত। সময় সময়ে আমাদের নবীজি তাঁর সম্মানিতা স্ত্রীর সঙ্গে খোশগল্প ও হাসি-তামাশা করতেন। নবীজি (সা.) এ ক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল। তিনি স্বয়ং নিজেই রসিকতা ও বৈধ বিনোদনের সুযোগ দিতেন এবং স্ত্রীর সঙ্গে নিজেও তাতে অংশ নিতেন।

নিজেও স্ত্রীকে মজার গল্প শোনাতেন এবং স্ত্রীর কাছ থেকেও মনোযোগ দিয়ে তা শুনতেন।
আমাদের সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁরা অত্যন্ত নাম-দামের সঙ্গে সমাজে দাপিয়ে বেড়ান। তাঁদের অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে মানুষের মধ্যে। সেসব ব্যক্তি তাঁদের সেই প্রভাব-প্রতিপত্তি আর ভাবগাম্ভীর্য তাঁদের স্ত্রীর সঙ্গেও জাহির করতে চান।

নিজেদের শৌর্য রক্ষার্থে তাঁরা পরিবারের কাছে গম্ভীরভাবে থাকতে পছন্দ করেন এবং এটাতেই নিজেদের বীরত্ব মনে করেন। অথচ আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের আদর্শ আদৌ এমন ছিল না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র স্বভাবের। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন নমনীয় স্বভাবের।

(তাঁর স্ত্রীরা) যখনই কোনো কিছুর আবদার ধরতেন, তিনি সে আবদার রক্ষা করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৮২৯)

১. দুই স্ত্রী মিলে নবীজি (সা.)-কে চমক দিলেন

একবার প্রিয় নবীজি (সা.)-এর দুই স্ত্রী মিলে তাঁকে চমকে দেওয়ার জন্য নবীজির সঙ্গে একটু মজা করলেন। সফর অবস্থায় সেই ঘটনার বর্ণনা এসেছে হাদিসের কিতাবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখনই মহানবী (সা.) সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনই বিবিদের মধ্যে লটারি করতেন। এক সফরের সময় আয়েশা (রা.) এবং হাফসা (রা.)-এর নাম লটারিতে ওঠে।

মহানবী (সা.)-এর অভ্যাস ছিল, যখন রাত হতো তখন আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে এক সওয়ারিতে আরোহণ করতেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে পথ চলতেন।

আরও পড়তে পারেন-

এক রাতে হাফসা (রা.) আয়েশা (রা.)-কে বললেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখতে পাবে? [এটি ছিল, নবীজি (সা.)-কে কাছে পাওয়ার জন্য হাফসা (রা.)-এর পক্ষ থেকে একটি কৌশল] আয়েশা (রা.) জবাব দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাজি আছি। সে হিসাবে আয়েশা (রা.) হাফসা (রা.)-এর উটে এবং হাফসা (রা.) আয়েশা (রা.)-এর উটে সওয়ার হলেন। মহানবী (সা.) আয়েশা (রা.)-এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হাফসা (রা.) বসা ছিলেন। তিনি সালাম করলেন এবং তাঁর পার্শ্বে বসে সফর করলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করলেন। (আর এদিকে এ কারণে) আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য থেকে (কিছুক্ষণের জন্য) বঞ্চিত হলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৫)

২. স্ত্রীর মুখে গল্প শোনা

নবীজি নিজেও গল্প বলতেন এবং স্ত্রীদের থেকেও মজার কথা শুনতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! মনে করুন, আপনি এমন একটি ময়দানে গিয়ে পৌঁছলেন, যেখানে একটি গাছের কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন একটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন। মহানবী (সা.) জবাবে বললেন, যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এ কথার দ্বারা আয়েশা (রা.)-এর উদ্দেশ্য ছিল মহানবী (সা.) তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো কুমারীকে শাদি করেননি। [এর মাধ্যমে আয়েশা (রা.) অন্য স্ত্রীদের চেয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কৌশলে বলে দিলেন, আর নবীজি (সা.) এর পক্ষে সমর্থন জানালেন] (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৭১০)

৩. অসুস্থতার সময়ও স্ত্রীকে আনন্দদান

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতুল বাকি থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় পান। আর আমি বলছিলাম, হে আমার মাথা! তিনি বলেন, হে আয়েশা! আমিও মাথা ব্যথায় ভুগছি, হে আমার মাথা! তারপর তিনি (রাসুল) বললেন, তুমি যদি আমার আগে ইন্তিকাল করতে, তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি হতো না। কেননা, আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার জানাজার নামাজ আদায় করতাম এবং তোমাকে দাফন করতাম। তখন আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয়, যদি এমনই করতেন তাহলে অবশ্যই আমার ঘরে ফিরে এখানেই অন্য কোনো স্ত্রীর সঙ্গে রাত যাপন করতেন। আয়েশা (রা.)-এর এ কথা শুনে নবীজি (সা.) মুচকি হাসলেন। (ইবনে মাজা, হাদিস : ১৪৬৫)

৪. দৌড় প্রতিযোগিতা

স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য সফরে নবীজি (সা.) দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। রাসুল (সা.) উম্মতের ফিকর, আরো দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীদের বিনোদনের প্রতি যত্নবান ছিলেন। কারণ এটাও তাঁদের অধিকার, তাঁদের প্রাপ্য। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একসময় নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে সফরে ছিলেন। তিনি বলেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর আগে বেড়ে গেলাম (অর্থাৎ জিতে গেলাম), তারপর যখন আমি মোটা স্থূলকায় হয়ে গেলাম, তখন আবার তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলাম। তখন তিনি আমার আগে বেড়ে (জিতে) গেলেন। তখন তিনি বললেন, এটা তোমার প্রথমবারে জেতার বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭০)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।