।। মুফতি সফিউল্লাহ ।।
সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ গরিব ও বিপদগ্রস্ত মানুষ। তাদের দান-সদকা, সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামে অন্যতম ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘যারা রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের মাল-সম্পদ খরচ করে, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে বদলা আছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭৪)
প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা কিছুই ব্যয় করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
ইসলামে দান-সদকা তিন ভাগে বিভক্ত
১. একটি সদকা হলো কিছু শর্তের ভিত্তিতে মুসলমানের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফরজ। এমন সদকার নাম হলো জাকাত, যা বছরে একবার সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মালিক অথবা এ পরিমাণ স্বর্ণ-রুপার মূল্যের মালিকের ওপর তিন শর্তে আবশ্যক হয়।
তিনটি শর্ত হলো—প্রয়োজন অতিরিক্ত হওয়া, বর্ধনশীল সম্পদ হওয়া, নিসাব পরিমাণ সম্পদে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া।
২. সাধারণ সদকা : এটা ঐচ্ছিক। সাধারণ সদকা হলো অভাবীদের টাকা-পয়সা, কাপড়চোপড়, খাবারদাবার দান করা। বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা, পথ হারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া, অসুস্থের সেবা করা, মাজলুমকে সাহায্য করা ইত্যাদি। এমনকি স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দেওয়া হয় সেটাও সদকা।
৩. সদকায়ে জারিয়া : এটা হলো যার কল্যাণ স্থায়ী হয়। এর সর্বাগ্রে হলো ইলমে দ্বিন শিক্ষা দেওয়া, বই-পুস্তক রচনা করে, ওয়াজ-নসিহত করে মানবজাতির কাছে ইলমে দ্বিন পৌঁছে দেওয়া। মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, মুসাফিরখানা, সরাইখানা, রাস্তা-ঘাট সেতু-পুকুর ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজে দান করা। নেক সন্তান পৃথিবীতে রেখে যাওয়া।
দান-সদকা ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক আছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সবার হক আছে।’ (সুরা : মাআরিজ, আয়াত : ২৪-২৫)
মানুষের মধ্যে গুনাহের প্রবণতা আছে। মানুষ গুনাহ করলে আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন। তখন তার ওপর বিপদ-আপদ আসে। দান- সদকা করলে রাব্বুল আলামিনের ক্রোধ থেমে যায়। তখন বিপদ-আপদ দূর হয়ে জীবনের নানা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দান-খয়রাত আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমানজনক মৃত্যু রোধ করে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৪)
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া মিফতাহুল উলুম, নেত্রকোনা
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ