Home ইসলাম যেমন হবে জান্নাতি ব্যক্তিদের গঠন-আকৃতি

যেমন হবে জান্নাতি ব্যক্তিদের গঠন-আকৃতি

।। শরিফ আহমাদ ।।

আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য জান্নাত তৈরি করেছেন। তাঁরা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান করবেন। প্রথম নবী আদম (আ.) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে এসেছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রাতে স্বচক্ষে জান্নাত দর্শন করেছেন।

জান্নাতের সত্যতা অস্বীকার করা কুফরি। কোরআন-হাদিসে জান্নাতের অপূর্ব নিয়ামতের অসংখ্য বর্ণনা আছে। নির্বাচিত কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো—

জান্নাতের নির্মাণশৈলী

জান্নাতের বাড়ির রূপ-বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। নির্মাণশৈলী আলাদা। কোনো শিল্পী তাঁর রংতুলিতে তা আঁকতে পারবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! জান্নাতের নির্মাণ কী দিয়ে? তিনি বলেন, এর একটি ইট হলো রুপার, আরেকটি হলো সোনার। এর গাঁথুনি হলো সুগন্ধময় মিশকের। এর নুড়িগুলো হলো মাটির ও ইয়াকুতের।

মাটি হলো জাফরানের। যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করবে সে নিয়ামত ও সুখ ভোগ করবে। কষ্ট পাবে না কখনো। সর্বদা থাকবে—মৃত্যু হবে না কখনো। তাদের পরিচ্ছদ কখনো পুরনো হবে না। আর তাদের যৌবন কখনো শেষ হবে না।
(তিরমিজি, হাদিস : ২৫২৬)

জান্নাতের বাড়ির বৈশিষ্ট্য

প্রতিযোগিতা করে নেক আমলকারী ব্যক্তির জন্যই জান্নাত। যার উপমা পৃথিবীতে কিছুই নেই। উসামা ইবনে জায়িদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একবার তাঁর সাহাবিদের লক্ষ্য করে বলেছেন, আছে কি কেউ জান্নাতের জন্য কোমর বেঁধে কর্ম সম্পাদনকারী? কেননা জান্নাতের উপমাসদৃশ কোনো জিনিস নেই। কাবার রবের শপথ! এ জান্নাত তো ঝলমলে আলো, বিচ্ছুরিত সুগন্ধি, সুরম্য প্রাসাদ, প্রবহমান স্রোতস্বিনী, সুমিষ্ট অসংখ্য ফলমূল, সুন্দরী সুশ্রী স্ত্রী, বহু অলংকারে বিমণ্ডিত, স্থায়ী স্থান, সবুজ শ্যামলীমায় পরিপূর্ণ নিয়ামত। আরো আছে গগনচুম্বী নিরাপদ প্রাণস্পর্শী প্রাসাদ, তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা এ জান্নাতের জন্য কোমর বাঁধলাম। তিনি বলেন, তোমরা বলো, ইনশাআল্লাহ। এরপর তিনি জিহাদের আলোচনা করেন এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন। (ইবনে মাজা, হাদিস : ৪৩৩২)

চক্ষু শীতলকারী নিয়ামত

জান্নাতের প্রকাশিত নিয়ামতের বর্ণনার চেয়ে গোপনে রাখা নিয়ামত চক্ষু শীতলকারী। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন জান্নাত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কোনো দিন দেখেনি, কোনো কান কোনো দিন শোনেনি এবং কোনো মানব হৃদয় তা কল্পনাও করতে পারেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াত পাঠ করতে পারো, কোনো প্রাণ জানে না আমি তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী যা গোপন করে রেখেছি। (বুখারি, হাদিস : ৩০১৭)

জান্নাতি ব্যক্তির গঠন-আকৃতি

কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর পর্যায়ক্রমে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে। সবার দেহকাঠামো হবে একই রকম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তমান উজ্জ্বল তারকার মতো। তারা না করবে পেশাব আর না করবে পায়খানা। তাদের থুতু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মাও বের হবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মিশকের ন্যায় সুগন্ধপূর্ণ। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাঠের। বড় চক্ষুবিশিষ্ট হুর হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সবার দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি পিতা আদম (আ.)-এর আকৃতিতে হবে। উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ৬০ হাত বিশিষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৩০৯২)

জান্নাতের প্রথম আপ্যায়ন

রাসুল (সা.)-এর আজাদকৃত গোলাম সাওবান (রা.) বলেন, এক ইহুদি পণ্ডিত রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল, জান্নাতিদের প্রথম আপ্যায়ন কী হবে? তিনি বলেন, মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল, এরপর তাদের সকালের নাশতা কী হবে? তিনি বলেন, তাদের জন্য জান্নাতের ষাঁড় জবাই করা হবে, যা জান্নাতের আশপাশে চরে বেড়াত। সে বলল, এর পরে তাদের পানীয় কী হবে? তিনি বলেন, সেখানকার একটি ঝরনার পানি, যার নাম সালসাবিল। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬০৯)

সর্বনিম্ন জান্নাতির মর্যাদা

জান্নাতে মানুষের বয়স সর্বদা এক থাকবে। মানুষ ছোট-বড় যে বয়সেই মারা যাক না কেন, জান্নাতে গিয়ে তার বয়স হবে ৩০। আমল অনুযায়ী জান্নাতের অপূর্ব নিয়ামতের মালিক হবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জান্নাতিদের মধ্যে সর্বনিম্ন যে তারও হবে ৮০ হাজার সেবক, বাহাত্তর হাজার সঙ্গিনী। মোতি, জবরজত ও ইয়াকুত পাথরে নির্মিত জাবিয়া থেকে সানআ পর্যন্ত দূরত্বের মতো বিস্তৃত এক বিরাট গম্বুজবিশিষ্ট প্রাসাদ প্রতিষ্ঠা করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৬২)

জান্নাতের দরজার দূরত্ব

আটটি জান্নাতের কথা সর্বত্র প্রসিদ্ধ। প্রতিটি স্তরের আলাদা নাম ও একটি করে দরজা রয়েছে। আট দরজার প্রত্যেকটির দুই দরজার মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ৪০ বছরের পথের দূরত্ব সমান। তাহলে জান্নাত কত বিশাল! খালিদ ইবনে উমায়ের আদাবি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উকবা ইবনে গাজওয়ান (রা.) বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে জান্নাতের দুই পাল্লার মধ্যে ৪০ বছরের সফরের পথ। অচিরেই একদিন এমন আসবে, যখন ওটা মানুষের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১৬৬)

আরও পড়তে পারেন-

জান্নাতের বাজারের বৈশিষ্ট্য

জান্নাতের বাজারে কোনো পণ্য বা অন্য কিছু কেনাবেচা হবে না। শুধু নারী-পুরুষের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রতিকৃতি বদল হয়ে যাবে। আগের চেয়ে আলাদা রূপ-সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে‌। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমায় জান্নাতি লোকেরা এতে সমবেত হবে। অতঃপর উত্তরের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধুলাবালি তাদের মুখমণ্ডল ও কাপড়চোপড়ে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের রূপ ও সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসবে। এসে দেখবে তাদের গায়ের রং ও সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের রূপ-সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জবাবে তারা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের যাওয়ার পর তোমাদের রূপ-সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ( মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮৩; তিরমিজি, হাদিস : ২৫৫০)

জান্নাতের বড় বড় গাছ

জান্নাতে বড় বড় অসংখ্য গাছ আছে। এমন কিছু গাছ আছে, যার ছায়াতলে কোনো আরোহী এক শ বছর দৌড়ালেও গাছের ছায়া শেষ হবে না। ওই গাছগুলোর মালিক হতে হলে কিংবা গাছের চারা রোপণ করতে হলে বেশি বেশি জিকিরের আমল থাকতে হয়। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)বলেছেন, মিরাজের রাতের সফরে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন তিনি বলেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন এবং তাদের জানিয়ে দেবেন যে জান্নাতের মাটি উত্তম। আর এর পানি সুমিষ্ট। তবে তা ফাঁকা ময়দান। এর চারা হলো সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬২)

মহান আল্লাহ আমাদের সুখময় জান্নাতের অধিবাসী করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম:এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।