Home আন্তর্জাতিক ‘ট্রু প্রমিস’: কেন এবং কীভাবে ইসরায়েলের ওপর এত বড় হামলা চালাল ইরান?

‘ট্রু প্রমিস’: কেন এবং কীভাবে ইসরায়েলের ওপর এত বড় হামলা চালাল ইরান?

ছবি: আমির কোহেন/রয়টার্স

।। মাজিয়ার মোতামেদি ।।

দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার পর, প্রতিশোধ হিসেবে রোববার রাতে ইসরায়েলের ওপর বড়সড় হামলা চালিয়েছে ইরান। শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের এই হামলা রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্বে এক নজির স্থাপন করেছে।

এর আগে, কোনো একক দেশ কোথাও এত বড় ড্রোন হামলা চালায়নি। দশকের পর দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে বৈরীতা চলতে থাকলেও এবারই প্রথম ইসরায়েলের ওপর সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান।

হামলার পিছনে তেহরান রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে, এটি আঞ্চলিক যুদ্ধের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে, প্রভাবিত করতে পারে গাজায় চলমান যুদ্ধকেও।

হামলার পেছনের রাজনীতি

ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অপারেশনটির নাম দিয়েছে ‘ট্রু প্রমিস’। এমন নাম দেওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এর আগে ইরানের ওপর চালানো ইসরাইল ও তার মিত্রদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘শাস্তি’র যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা তারা রক্ষা করেছেন– সেটি বোঝাতেই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রমিস’ বা সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার।

গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় সিরিয়া ও লেবাননে চলমান অপারেশনের দায়িত্বে থাকা দুই জেনারেল ও আরও ছয়জন লোকসহ মোট সাতজন আইআরজিসি সদস্য নিহত হন। মূলত ওই হামলার প্রতিক্রিয়াতেই ইসরায়েলের ওপর ইরানের সাম্প্রতিক এই ড্রোন হামলা।

আরও পড়তে পারেন-

এছাড়া, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা এবং গেলো ডিসেম্বরের শেষদিকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আইআরিজিসির আরেক শীর্ষ কমান্ডার রাজি মুসাভির মৃত্যু– ইরানের এই হামলার ইন্ধন যুগিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের একের পর এক দ্বান্দ্বিক নীতি ও সামরিক হামলার জবাবেও ইসরায়েলের ওপর এ হামলা হয়ে থাকতে পারে।

তবে এই হামলায় ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার কিছু সুবিধাও পাচ্ছে। এ অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এখন মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাবে, যা ইসরায়েলের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো খবর।

অন্যদিকে, নজিরবিহীন এই হামলার খবরের নিচে হয়তো গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার নারী ও শিশু মৃত্যুর খবর চাপা পড়ে যাবে। এটিও ইসরায়েলের জন্য সুবিধা বয়ে আনছে।

ইরানের সামরিক শক্তি

ইসরায়েলে চালানো হামলায় ঠিক কতটি ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা আনুষ্ঠিকভাবে জানায়নি ইরান। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, হামলায় ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরেই ইরানের তৈরি ড্রোন আন্তর্জাতিক বিশ্বে শিরোনাম গড়েছে; বিশেষ করে, বছর দুই আগে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর থেকে ইরানি ড্রোনের চর্চা চলছে আন্তর্জাতিক সামরিক অঙ্গনে। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, ইরানের তৈরি ‘শাহেদ’ নামক ড্রোন রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডে লাগাতার ব্যবহার করে চলেছে।

রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ইসরায়েলের ওপর হামলায় প্রায় ৫০ কেজি (১১০ পাউন্ড) ওজনের অপেক্ষাকৃত ছোট ওয়ারহেড বহনকারী শাহেদ-১৩৬ কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।

আইআরজিসি-এর সঙ্গে যুক্ত টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো জনিয়েছে, হামলায় শাহেদ-২৩৮ও ব্যবহার করা হয়েছে। ২৩৮ মডেলটির গতি তুলনামূলক বেশি। ধারণা করা হয়, এটি ৬০০কেএমপিএইচ (৩৭২ এমপিএইচ) পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

এছাড়া, ইরান দীর্ঘকাল ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগারের অধিকারী বলে পরিচিত। আর ইসরায়েলের ওপর সাম্প্রতিক এই হামলা ছিল দেশটির সক্ষমতার পরিচয় দেওয়ার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরও জানায়, ইসরায়েলের ওপর হামলায় দূরপাল্লার ইমাদ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পাভেহ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছিল।
ইরানের কাছে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহও রয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি ছোড়ার মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পারে; যদিও সাম্প্রতিক হামলায় এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

অর্থনৈতিক প্রভাব কী?

ইরানের নেতাদের বিবেচনায় হামলার রাজনৈতিক ও সামরিক গুরুত্বের কাছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমই ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ ইরানের কন্স্যুলেট হামলার পর তারা দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে।

তবে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব যে স্থানীয় বাজারে পড়বে সে সম্পর্কেও তারা অবগত ছিলেন। ইতোমধ্যেই ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কায় বিদেশি মুদ্রার দাম বাড়তে শুরু করেছে।

রোববার ডলারের বিপরীতে ইরানের মুদ্রা রিয়ালের মান সর্বনিম্নে নেমে আসে। এদিন প্রতি মার্কিন ডলার প্রায় ৬৭০,০০০ রিয়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। পরে যদিও অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এছাড়া, রোববার দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ জানায়, তেহরানসহ ওই অঞ্চলের অন্যান্য বাজারে মুদ্রা ও স্বর্ণের লেনদেন খুব কম হয়েছে।

সূত্র- আল জাজিরা।

অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরী তৃষা

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।