ঐতিহ্যবাহী চরমোনাই দরবার শরিফে ফাল্গুনের ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার বাদ জোহর পীর ছাহেবের উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে। সারা দেশে থেকে লাখ লাখ মুরিদানসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিয়ান এ মাহফিলে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কির্তনখোলা নদী তীরের চরমোনাই দরবার শরিফে পৌঁছেছেন। বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে চরমোনাই দরবার শরিফে এখন চলছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আধ্যাতিক মিলনমেলা।
তিন দিনের এ ওয়াজ মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এ মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয় বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুতরাং এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নয়, আল্লাহ ও রাসুলের মহব্বত দেলে পয়দা করার জন্যই আসবেন। যদি এমন কেউ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এসে থাকেন তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
গতকাল বুধবার বাদ জোহর চরমোনাই মাদরাসার মূল মাঠসহ ৫টি মাঠ নিয়ে অনুষ্ঠিত চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে পীর ছাহেব চরমোনাই বলেন, যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল অন্তরে জায়গা দিন। পীর ছাহেব দেল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব দুর করে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে সমর্পন করার আহবান জানিয়ে সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দেলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলী হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি গহওনের নসিহত করেন।
পীর ছাহেব চরমোনাই তার উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেন। বুধবার সকাল থেকে মাহফিলে আগত মুসল্লিদের কয়েক হাজার হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
মাহফিলে আগত মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরো ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হচ্ছে। ১০টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ২টি নৌ অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাহফিল ময়দানে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
৫টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত করা হয়েছে বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল টিম। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বা বস্তু খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মাঠেই রয়েছে হারানো ক্যাম্প।
সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের জন্য সকল মাঠের চারিদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, ওজু এবং গোসলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ মাহফিলের প্রথমদিনে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিন সারাদেশ থেকে আগত ওলামায়ে কিরামদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন এবং শেষদিন সকালে সারাদেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও মাহফিলে আগত যুবক, শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ বিশেষ মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছে। আগামী শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় হযরত পীর ছাহেব চরমোনাই’র বিদায়ী বয়ানের পরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্তি ঘটবে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com
