Home মহিলাঙ্গন হিজাব হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন স্বাধীনতা সৌন্দর্য ও সহ্য করার শক্তি: ইলহান ওমার

হিজাব হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন স্বাধীনতা সৌন্দর্য ও সহ্য করার শক্তি: ইলহান ওমার

উম্মাহ ডেস্ক: চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘Vogue Arabia’ কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমার বলেন, ‘আমার নিকট হিজাবের অর্থ হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাধীনতা, সৌন্দর্য এবং সহ্য করার শক্তি।’

আমরা দুজন মুসলিম নারী যারা একসময় ইরানে বসবাস করতাম এবং আবশ্যকীয় ভাবে হিজাব পরিধান করতাম। আমরা আশা করি আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জটিল বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে পারবো।

হিজাবের আসলে দুটি প্রকারভেদ রয়েছে: একটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক হিজাব যা একজন মুসলিম নারী নিজের ইচ্ছায় পরিধান করে থাকে, আর অন্যটি হচ্ছে অত্যাচারী হিজাব যা একজন মুসলিম নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিধান করানো হয়।

গণতান্ত্রিক হিজাবের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম নারী তার হিজাবকে হয় আকর্ষণীয় ভাবে, না হয় তার নিজের ইচ্ছামত পরিধান করেন। একই সাথে একজন মুসলিম নারী হিজাবের সাথে ফ্যাশন যুক্ত পোশাক পরিধান করেন এবং মেকআপ নিতে পারেন।

আর অত্যাচারী হিজাবের ক্ষেত্রে নারীর মতামতের কোনো মূল্য নেই। যেমনটি ইরানের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। দেশটির সরকার নারীদের জন্য অবশ্য বাধ্যতামূলক পোশাকের আইন করেছে যেখানে একজন নারীকে জনসম্মুখে মেকআপ করা অবস্থায় আসা আইনত দণ্ডনীয় করেছে। সেখানে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে জোর পূর্বক হিজাব পরিধান করানো হচ্ছে।

এমনকি কর্তৃপক্ষ নারীদের পোশাকের জন্য রং নির্ধারিত করে দিয়েছে। দেশটির নারীরা বাহিরে বের হওয়ার সময় শুধুমাত্র ধূসর, কালো, বাদামী এবং নেভী নীল রঙের পোশাক পরিধান করতে পারেন।

তবে গত বেশ কয়েক বছর যাবত কিছু ইরানি নারী সরকারের আরোপকৃত এসব নীতি ভঙ্গ করে আসছেন। একই সাথে সরকারের এ নীতি ভঙ্গকারীদের অনেকেই গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন।

একই সাথে আফগানিস্তানে তালিবান কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার ফলে আবার এই আশঙ্কা জেগে উঠেছে যে, দেশটির নারীরা পুনরায় বাধ্যতামূলকভাবে বোরকা পরিধানের শিকার হতে যাচ্ছেন।

সৌদি আরবের নারীরা যেসব আবায়া এবং নিকাব পরিধান করেন যাতে শুধুমাত্র তাদের চোখ জোড়া দেখা যায় তা দেশটির সরকার কর্তৃক আরোপিত আইনের ফলে নয়, বরং তা দেশটির সংস্কৃতির কারণে হয়ে থাকে। তবে সেখানেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে তাদেরকে এমন পোশাক পরিধান করতে হয়।

যেসকল নারীরা জোর পূর্বক এমন হিজাব পরিধান করেন তারা মূলত লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হন।

ইরানে নারীদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া রয়েছে, খেলাধুলা উপভোগ করার জন্য স্টেডিয়ামে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে এমনকি তালাক দেয়ার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছে।

এভাবে বাধ্যতামূলক ভাবে হিজাব পরিধান করানোটা কোনো ঐতিহ্য হতে পারে না এবং তা ধর্মীয় বিধিবিধানের পরিপন্থী।

কিছু কিছু দেশে নারীরা এসব নীতিমালার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সৌদি আরবে লুউজাইন আল-হাথলুউল নামের একজন নারী অধিকার কর্মীকে তার আন্দোলনের জন্য কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

গত বেশ কয়েক বছর যাবত ইরানে #WhiteWednesdays নামের একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে যেখানে সমাজের সকল স্থান থেকে সকল বয়সের নারীরা অংশগ্রহণ করেন এবং দেশটির অসমতামূলক আইনের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এসকল নারীরা হিজাবকে সমাজ থেকে দূর করে দিতে চায় না বরং পোশাক পরিধান করার ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের অধিকার চায়।

ইলহান ওমার হিজাব পরিধানের ক্ষেত্রে নিজের অধিকারকে সবার সামনে উপস্থাপন করেন এমনটি দেখে আমরা আসলেই অভিভূত।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার ফলে ইলহান ওমার এবং অন্যান্য মুসলিম নারীরা নিজেদের অধিকার পেয়েছেন এবং তারা নিজেদের অবস্থান থেকে হিজাবের পক্ষে জনমত গঠন করছেন।

হিজাব আসলে একটি পোশাক ছাড়া আর কিছুই না। কঠিন কিছু নীতি যুক্ত করে হিজাবকে একটি বৈষম্যের প্রতীক হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এটি নারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার, হিজাবের বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্ষমতা এবং সৌন্দর্যের মাধ্যমে হিজাব পরিধানকারী নারীরা তা খুঁজে পায়।’

সূত্র: ‘The Wind in My Hair: My Fight for Freedom in Modern Iran’ নামের বইয়ের লেখিকা ও ‘#WhiteWednesdays’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আলিনেজাদ এবং ‘Iran Human Rights Documentation Center’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ‘memoir Journey from the Land of No: A Girlhood Caught in Revolutionary Iran’ নামক বইয়ের লেখিকার কলাম থেকে।