Home সংবাদ পর্যালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ যেন ক্রমেই বর্ণবাদী সংঘাতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে

যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ যেন ক্রমেই বর্ণবাদী সংঘাতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি শপিং মলে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় গত শনিবার আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এল পাসোর ওয়ালমার্ট স্টোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ২১ বছর বয়সী ডালাসের প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস নামে এক উগ্র শ্বেতাঙ্গ যুবকের হামলায় প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকায় গত কয়েক বছর আগে জাদুর চেরাগের ভয়ংকর দৈত্য ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গৃহীত নীতি একবিংশ শতাব্দিতে এসে আবারো বিশ্বকে নতুন করে বর্ণবাদী সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মেক্সিকো সীমান্তের  খুব কাছে সর্বশেষ হামলার ঘটনাই এর প্রমাণ।

প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস হামলা চালানোর আগে এক বার্তায় জানিয়েছিল, দক্ষিণ আমেরিকার সীমান্তে অবৈধ ও বেআইনি অভিবাসী বিশেষ করে মেক্সিকান অভিবাসীর ঢল থামিয়ে দেয়াই তার এ হামলার উদ্দেশ্য। এ ছাড়া, ওই যুবক প্রায় এক বছর আগে এক অস্ট্রেলিয়ান বর্ণবাদী স্বেতাঙ্গের হামলায় নিউজিল্যান্ডের একটি মসজিদে ৫০ জন মুসল্লির নিহত হওয়ার ঘটনার প্রশংসা করেছে। তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে ওই যুবক মেক্সিকানদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনাকে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে।

আমেরিকার উগ্র বর্ণবাদীরা সেদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের উপস্থিতি এবং বিদেশি অভিবাসীদের প্রচণ্ড বিরোধী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ আমেরিকায় প্রথমবারের মতো স্বেতাঙ্গ মানুষের সংখ্যা ৫০ শতাংশের নীচে নেমে আসবে।

বিষয়টি বর্ণবাদীদেরকে এতটাই আতঙ্কিত করে তুলেছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ডালাসের ২১ বছর বয়সী যুবক পর্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছে এবং উগ্রতা ও সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে। হোয়াইট হাউজে একদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন অন্যদিকে তার সমর্থকরা সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছেন।

তবে, শপিং মলে এতো মানুষের হতাহতের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত টুইটারের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, “এল পাসোর ঘটনা অতি পীড়াদায়ক, এতে অনেকের প্রাণ ঝরেছে।”

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের আমেরিকান সমাজ যেন ক্রমেই বর্ণবাদী সংঘাতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত দুই বছর ধরে কট্টরপন্থীদের সমর্থন এবং নিজের ভোটব্যাংক ধরে রাখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই বর্ণবাদী বক্তব্য দিয়ে উত্তেজনা ও সহিংসতাকে তীব্রতর করে তুলেছেন।

তিনি প্রথমে মেক্সিকানদেরকে মানসিক রোগী ও যৌন নিপীড়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এরপর মুসলিম দেশগুলো থেকে মুসলমানদের আমেরিকায় আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নির্দেশনায় সই করেন। তিনি মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার ঘোষণা দিয়ে চরম বর্ণবাদী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এসব বক্তব্য ও পদক্ষেপে উগ্র বর্ণবাদী স্বেতাঙ্গরা আরো উৎসাহ পাচ্ছে এবং তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকায় অস্ত্র বহনের স্বাধীনতা থাকায় উগ্রবর্ণবাদীরা এখন আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন সরকার যদি এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আগামীতে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী হত্যাকাণ্ড শুরু হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।