Home ইসলাম দরূদ শরীফ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত

দরূদ শরীফ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত

।। শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল আযীয (রাহ.) ।।

মানব জাতির হিদায়াতের লক্ষ্যে প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- হে মু’মিনগণ! তোমরা নবীর জন্য রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। (সূরা আহ্যাব- ৫৬ আয়াত)।

এই আয়াত থেকেই প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে একবার দরূদ পাঠ করা ফরয। অধিকাংশ ইমামের মতে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উল্লেখ করলে অথবা শুনলে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। একই মজলিশে বারবার উচ্চারিত হলে একবার পাঠ করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে দরূদ পাঠ না করার শাস্তির বাণী রয়েছে। ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি অপমানিত হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হলে দরূদ পাঠ করেনা। (তিরমিযী)।

তিরমিযী শরীফের অপর এক রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সেই ব্যক্তি বখিল, যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হলে দরূদ পাঠ করেনা।

বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ উলামাগণের মতে নবীগণ ব্যতীত অন্য কারো প্রতি দরূদ পাঠ করা বৈধ নয়।

হযরত আনাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দশটি রহ্মত অবতীর্ণ করবেন এবং তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং তার মর্তবা দশ গুণ বৃদ্ধি করবেন।

তারগীবের এক রিওয়ায়াতে রয়েছে, একদিন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মুবারকে চমকদার এবং খুশির নর অনুভূত হলো। সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যেরূপ খুশি আপনার চেহারায় অনুভূত হচ্ছে এর পূর্বে তো কখনো এরূপ খুশি আপনাকে আমরা দেখিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমি কেন খুশি হব না, এই মাত্র জিবরাঈল (আ.) আমার নিকট থেকে গেলেন এবং আমাকে বললেন, আপনার উম্মত থেকে যারা আপনার উপর একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার আমল নামায় দশটি নেকী দান করবেন এবং দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং তার মর্তবা দশগুণ বৃদ্ধি করবেন। একজন ফেরেশ্তা তার জন্য ঐ দোয়া করবে যা সে বলেছে।

হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি জিব্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করেছি, ফেরেশতাটি কিরূপ? তখন জিব্রাঈল (আ.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিযুক্ত করবেন এবং যে আপনার উপর দরূদ পড়ল তার জন্য সে এরূপ দোয়া করবেন- “ওয়া আন্তা সাল্লাল্লাহু আলাইকা”।

তিরমিযী শরীফের এক রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার সুপারিশের অধিক নিকটবর্তী ঐ ব্যক্তি হবে, যে আমার প্রতি অধিক দরূদ পাঠ করেছে।

তিরমিযী শরীফের অপর এক রিওয়ায়াতে রয়েছে, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উবাই ইবনে কা’ব (রাযি.) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার উপর অধিক দরূদ পাঠ করার ইচ্ছা পোষণ করি, তা কি পরিমাণ সময় করব। হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যতটুকু তোমার ইচ্ছা।

আমি আরয করলাম, (এক দিনের) এক চতুর্থাংশ? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যতক্ষণ তোমার ইচ্ছা। যদি তুমি আরও অধিক কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বল্লাম, অর্ধেক? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতক্ষণ তোমার ইচ্ছা হয়। যদি তুমি আরও অধিক কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি আরয করলাম, দুই তৃতীয়াংশ? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যতটুকু তোমার ইচ্ছা হয়। যদি তুমি অধিক কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি আরয করলাম, আমি সম্পূর্ণ সময়কে আপনার উপর দরূদ পাঠে নিযুক্ত করলাম। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে অবস্থায় তোমার দুনিয়ায় সকল পেরেশানী দূর করা হবে এবং তোমার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।

তিবরানী শরীফের এক বর্ণনায় হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দশবার রহ্মত নাযিল করেন। আর যে ব্যক্তি দশবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি একশত বার রহ্মত বর্ষণ করেন এবং যে ব্যক্তি একশত বার দরূদ শরীফ পাঠ করেন, আল্লাহ তায়ালা তার ললাটে লিখে দিবেন এই ব্যক্তি মুনাফিকী হতে পবিত্র ও জাহান্নাম হতে মুক্ত। আর রোজ ক্বিয়ামতে আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদদের সাথে হাশর করাবেন।

হযরত উমর (রাযি.) ইরশাদ করেন, দোয়া আসমান এবং যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে স্থগিত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার নবীর উপর দরূদ পাঠ করবে না ততক্ষণ উপরে উঠবে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি দৈনিক এক হাজার বার দরূদ শরীফ পাঠ করে, জান্নাতে তার নিজ ঠিকানা না দেখা পর্যন্ত সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বেশী বেশী দরূদ শরীফ পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলার তাওফীক দান করুন। আমীন॥

লেখক: প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, বাযূর্গ আলেম ও শায়খুল হাদীস- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।