Home ওপিনিয়ন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অনেক সময় কৌতুক মিশ্রিত হয়েও আসে

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অনেক সময় কৌতুক মিশ্রিত হয়েও আসে

ছবি- সংগৃহীত।

।। আলতাফ পারভেজ ।।

আজ থেকে চৌদ্দ মাস আগে মালদ্বীপে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছিলো তখন বিরোধীদলের প্রার্থী ইব্রাহিম সোলিথকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছিল ‘ইন্ডিয়া সমর্থিত’। আর আবদুল্লাহ ইয়ামিন ছিলেন স্পষ্টতই গণচীন সমর্থিত। সোলিথ ৫৮ ভাগ ভোট পান; আর ইয়ামিন পান ৪১ ভাগ। চীনের জন্য এটা তখন পীড়াদায়ক ছিল।

আজ শ্রী লঙ্কায় ঘটলো ঠিক উল্টোটি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গোতাবায়া রাজাপাকসা পেলেন ৫২ ভাগ ভোট এবং সাজিথ প্রেমাদাসা পেলেন ৪২ ভাগ। প্রথমজনকে বলা হচ্ছে চীনের প্রার্থী এবং শেষোক্তজনকে ভারত সমর্থিত মনে করা হচ্ছিলো। স্বভাবত ভারতের প্রচার মাধ্যম প্রাণহীন ভাষায় এই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করছে। অথচ মালদ্বীপের নির্বাচন শেষে তারা ওটাকে ‘ভারতের কূটনীতিক বিজয়’ হিসেবেই মুহুর্মুহু উল্লেখ করেছিল।

মালদ্বীপের নির্বাচনকে যদি নেপালের নির্বাচনের (ডিসেম্বর ২০১৭) প্রতিউত্তর বলা হয়– তাহলে শ্রী লঙ্কার আজকের নির্বাচনী ফল অবশ্যই মালদ্বীপের পাল্টা কিছু।

পাঁচ বছর আগে একই ধরনের নির্বাচনে গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা হেরে প্রকাশ্যেই ভারতকে দায়ী করেছিলেন সেই পরাজয়ের জন্য। আজকের নির্বাচনী ফল তাই রাজাপাকসা বংশের জন্য নির্বাচনী বিজয়ের চেয়েও বেশি কিছু।

কিন্তু পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এসব প্রক্সিযুদ্ধ রাজনীতিকে কলুষিত করছে। প্রক্সিযুদ্ধের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত বিভেদ।

শ্রী লঙ্কার এই নির্বাচনের জেলাভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেল– হিন্দু তামিল এবং মুসলমান তামিলদের নর্দান ও ইস্টার্ন প্রভিন্সে সবাই একচেটিয়াভাবে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির সাজিথ প্রেমাদাসাকে ভোট দিয়েছে। আর দক্ষিণে একচেটিয়াভাবে সিংহলি বৌদ্ধদের ভোট পড়েছে গোতাবায়ার পক্ষে। অর্থাৎ দেশটি জাতিগত লাইনে গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে আছে। যার আরেকটি অর্থ দাঁড়ায়, নির্বাচন হলেও দেশ জিততে পারছে না।

নির্বাচনের এই ফল তামিল ও মুসলমানদের জন্য একটা খারাপ সময়ের শঙ্কা তৈরি করেছে। আসন্ন দিনগুলোতে সিংহলি বৌদ্ধদের তরফ থেকে নানামুখী চাপের মুখে থাকতে হবে তাদের।

সন্ত্রাস কীভাবে জাতিগত উগ্রতাকে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে এবং সংখ্যালঘুদের অধিক নিরাপত্তাহীন করে তার নজিরও এই নির্বাচনে দেখা গেল।

মাত্র কয়েক মাস আগে ইস্টার সানডেতে শ্রী লঙ্কায় চার্চগুলোতে যে হামলা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ উগ্র সিংহলিরা সেটাকে রাজনৈতিক পণ্য আকারে ব্যবহার করে নির্বাচনে গোতাবায়ার ১০ শতাংশ ব্যবধানের বিজয় নিশ্চিত করেছে।

ইস্টার সানডে হামলার জন্য গুটিকয়েক মুসলমানকে দায়ী করা হয়। তদন্তেও তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু হামলার রাজনৈতিক ফলাফল ঘরে তুলেছে সিংহলিরা এবং দীর্ঘমেয়াদে সেখানে মুসলমানরা যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিকভাবে কোণঠাসায় পড়লো, আজকের নির্বাচনী ফল সেটাও নিশ্চিত করছে।

বলা যায়, ইস্টার সানডে হামলাই রাজাপাকসাদের আজকের বিজয়কে অনেক সহজ করেছে।
এই হামলার পূর্বাভাস পেয়েও আক্রমণ বন্ধে কেন উদ্যোগ নেয়া হয়নি – সেই রহস্যের এখনও কোন কিনারা হয়নি দেশটিতে। বড় বিচিত্র ও রহস্যময় এসব হামলার হিসাব-নিকাশ।

তবে এটায় কোন রহস্য নেই যে, নতুন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে শ্রী লঙ্কার সামরিক আমলাতন্ত্রের খুব পছন্দের ব্যক্তি। নির্বাচনী গণতন্ত্রের মাঝে তারাই আবার চালকের আসনে থাকবে দেশটিতে।

– আলতাফ পারভেজ, সাংবাদিক ও গবেষক।