Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ: জবাব লিখেছেন- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী

প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ: জবাব লিখেছেন- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী

জনাব খোরশিদ আহদ শাহ্জি, বটতলা বাজার, দঃ বালিয়া, দঃ দিঘলদী, ভোলা।

প্রশ্নঃ চার রাক্আত ফরয নামাযের শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেব ভুলবশতঃ না বসে সম্পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। এখন কীভাবে নামায শেষ করতে হবে, অনুগ্রহ করে জানাবেন?

উত্তরঃ এরূপ ক্ষেত্রে বিধান হল, পঞ্চম রাক্আতের সিজদা করার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্মরণ হয়ে গেলে সাথে সাথে বসে যাবে এবং সিজদা সাহুর মাধ্যমে নামায শেষ করবে। তাহলে নামায সহীহ্ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি পঞ্চম রাকআতের সিজদায় বা তার পর স্মরণ হয়, তাহলে ষষ্ঠ রাক্আত পূর্ণ করতঃ স্বাভাবিকভাবে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। তখন এ ছয় রাক্আত ফরয হিসেবে না হয়ে নফল হিসেবে গণ্য হবে। ফরয আবার পড়ে নিতে হবে। (সূত্র- হালবী কাবীর-১/৪৬২, হিন্দিয়্যাহ্-১/১২৯, দুররুল মুখতার-২/৮৫, ৮৬, আল্ ফিক্বহুল ইসলামী-২/৯৪)।

 

জনাব মুহাম্মদ শরীফ, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।

প্রশ্নঃ সূরা তারাবীহ্ এবং খতম তারাবীহ দু’টোতেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। তাহলে সূরা তারাবীতে টাকা নেওয়া জায়েয এবং খতম তারবীতে নাজায়েয হওয়ার হেতু বোধগম্য নয়।

উত্তরঃ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতে মাক্বসূদাহ্। তিলাওয়াতে কুরআন অনুরূপ একটি ইবাদতে মাক্বসূদাহ্। আর ইবাদতে মাক্বসূদাহ্ পালন করে যে কোন উপায়েই হোক না কেন তার বিনিময়ে কোন কিছু গ্রহণ করা বা প্রদান করা হারাম। তবে পরবর্তী যুগের ফিক্বাহ্ শাস্ত্রীয় ইমামগণ সর্বসম্মত অভিমত পেশ করেছেন যে, আযান, তা’লীমে কুরআন, ইমামতী ইত্যাদির ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক প্রদান ও গ্রহণ দু’টোই জায়েয।

সে সূত্রে সূরা তারাবীহ্ সম্পর্কে বলা যায় যে, সূরা তারাবীহ্র ইমাম সাহেবকে ইমামতীর উপর ভিত্তি করে টাকা প্রদান ও গ্রহণ দু’টোই জায়েয। পক্ষান্তরে খতমে তারাবীহর ক্ষেত্রে হারাম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কুরআন শরীফ খতম করা পৃথক একটি ইবাদত। পবিত্র কুরআন খতম করা ছাড়াও তারাবীহর নামায পড়া সম্ভব। কিন্তু সূরা তারাবীহ্ ব্যতীত তারাবীহর নামায পড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর তারাবীহর নামাযে কুরআন খতম করা সুন্নাত। এ জন্য খতমের প্রয়োজনীয়তাকে ইমামতীর প্রয়োজনীয়তা কিংবা তা’লীমে কুরআনের প্রয়োজনীয়তার উপর ক্বিয়াস করা যায় না।

তাছাড়া খতম তারাবীহ্ অপেক্ষা সূরা তারাবীহ্ পড়া সহজতর। মোটামুটি বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের অধিকারী যে কোন সাধারণ নামাযীও ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ্র জামাআত কায়েম করতে পারেন। কিন্তু খতম তারাবীহ্ যে কেউ ইচ্ছা করলে পড়াতে পারেন না। তাই প্রয়োজন বশতঃ সূরা তারাবীহর ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার আদান-প্রদানকে বৈধ বলে গণ্য করা হয়েছে। (সূত্র- দুররুল মুখতার-২/১৭৯, ফাত্ওয়ায়ে শামী ক্বাদীম-৫/৪৭, হিদায়াহ্-৩/২৮৭, ফাত্হুল ক্বাদীর-৮/৪১, ইমদাদুল মুফতিয়্যীন-২/৩৬৪)।

 

জনাব মুহাম্মদ মতিউর রহমান মামুন, চর বালাপুর মসজিদ, চিন বালাপুর, নরসিংদী।

প্রশ্নঃ কিছু সংখ্যক লোক যিকির মাহ্ফিলের আয়োজন করে। জানা যায়, তারা হারমুনিয়াম, ঢোল-তবলা ইত্যাদি বাজিয়ে যিক্র করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এভাবে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে যিক্র করতে নিষেধ করা হল। তারা অনেক যুক্তি-তর্ক দেখালো। বল্ল, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী (রাহ্.) বাদ্য-বাজনা বাজাতেন ইত্যাদি। অবশেষে প্রবল বাধার কারণে বাদ্য-বাজনাহীন যিক্র করতে সম্মত হল। তবে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে হাতে তালি বাজিয়ে হাল্কায়ে যিক্র করল। এ ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি?

উত্তরঃ আল্লাহর যিক্র করতে বাদ্য-বাজনা বাজানো, হাত তালি দেওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে যিক্র করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের পর্দা করা ফরয। আর যিক্র করা নফল। নফল পালন করতে গিয়ে ফরয ত্যাগ করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া হাত তালিও এক প্রকার বাজনার নামান্তর বৈ কিছু নয়। কাজেই এ সব গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরী।

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী (রাহ্.) নিঃসন্দেহে একজন খাঁটি আল্লাহর অলী ছিলেন। আর গান-বাজনা কুরআন-হাদীসের আলোকে হারাম। এক জন আল্লাহর অলীর পক্ষে কুরআন-হাদীস বিরোধী হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া দূরের কথা সমর্থন করার কথাও কল্পনা করা যায় না। এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক কোন তথ্যই নেই। অতএব, একজন খাঁটি আল্লাহর অলীর উপর এ ধরনের অপবাদ দেওয়া তাঁর সঙ্গে চরম বেয়াদবি ছাড়া আর কিছুই নয়। এরা প্রকৃতপক্ষে ভক্তির নামে শত্রুতাই পোষণ করে। আল্লাহ্ এদেরকে হিদায়াত নসীব করুন। -(সূরা আহ্যাব- ৩৩, সূরা লুক্বমান- ৬, তাফ্সীরে মাযহারী- ৯/২৩৮, তাফসীরে ইবনে কাসীর- ৩/৪৫৭, তাফ্সীরে রূহুল মাআনী- ১১/৬৯)।

 

জনাব মুহাম্মদ শাহীন, দোহার, ঢাকা।

প্রশ্নঃ ছোটদের খেলনা হিসেবে মাটির তৈরী পুতুল বিক্রি করা এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ বৈধ হবে কি?

উত্তরঃ মাটি বা অন্য কিছুর তৈরী পুতুল বিক্রির ব্যাপারে ফুক্বাহায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ (রাহ্.)এর মতে মাঝে মধ্যে এ সবের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয, বিধায় তা থেকে উপার্জিত অর্থও বৈধ। তবে এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা মাকরূহ্ থেকে মুক্ত নয়। কেননা, ইসলামে নিষিদ্ধ মূর্তি বিক্রির পেশার সাথে এটি সাদৃশ্যপূর্ণ। তাছাড়া এভাবে বিক্রি করতে করতে এক পর্যায়ে মূর্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়া বিচিত্র কিছু নয়। তাই খেলনা হলেও পুতুল বিক্রির পেশা গ্রহণ না করে অন্যান্য জড় পদার্থের প্রতিকৃতি বিক্রির পেশা গ্রহণ করা যেতে পারে, যেগুলোর প্রাণ থাকে না। -(রদ্দুল মুহ্তার-৫/২২৬, আবুদাঊদ শরীফ-২/৬২৫, জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্-৩/২৩৮)।

 

জনাব আব্দুল্লাহ্, ঠনঠনিয়া (১ম) লেন, বায়তুল মামুন মসজিদ, বগুড়া।

প্রশ্নঃ আজকাল অধিকাংশ ওয়ায মাহ্ফিলে ওয়ায়েযীন বা বক্তাগণ সুর করে ওয়ায করে থাকেন এটা কি সুন্নাত? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ায মাহ্ফিল কেমন ছিল?

উত্তরঃ হাদীস গ্রন্থাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের সামনে জীবনে বহু ওয়ায-নসীহত করেছেন। কিন্তু এ কালের ওয়ায়েযীনদের মত সুর করে ওয়ায করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তৎসত্তে¡ও কেউ যদি সুর করে ইখলাসের সাথে ওয়ায করেন, তাহলে নাজায়েয হবে না। কিন্তু যারা মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সুর করে ওয়ায করেন, তাদের জন্য জায়েয হবে না। কারণ রিয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।

হাদীসের বিবরণ থেকে একথা প্রমাণ হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়ায-নসীহতের মাহ্ফিলগুলো হত সুশৃখল, নীরব পরিপাটি, কোন প্রকার বেহুদা কথাবার্তা হত না এবং সাহাবায়ে কিরাম এমনভাবে শ্রোতা হিসেবে বসে থাকতেন যেন মাথায় পাখী বসে আছে। এত আদবের সাথে তাঁরা মজলিশে বসতেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওয়ায-নসীহত করতেন তখন তাঁদের অন্তর একনিষ্ঠতার সাথে নিবিষ্ট থাকত। তাঁদের চক্ষুযুগল থাকত অশ্রুসিক্ত। এরূপই ছিল হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি মজলিশের অবস্থা। -(মিশকাত শরীফ-২/৪৫৪, ৪৫৬)।

———————————————–

জবাব লিখেছেনে- মুফতী মুনরি হোসাইন কাসমেী

ফাযেলে- দারুল উলূম দওেবন্দ (দাওরা ও ইফতা), মুফতী ও মুহাদ্দসি- জাময়িা মাদানয়িা বারধিারা, ঢাকা এবং উপদষ্টো সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ডটকম।

নোটঃ উম্মাহ ২৪ডটকম এর প্রশ্ন-উত্তর বভিাগে আপনওি চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারনে। প্রশ্ন অবশ্যই ইসলাম র্ধমবষিয়ক হতে হব। প্রশ্নরে আকার ছোট হতে হবে এবং একক বষিয়বস্তুর হতে হব।

প্রশ্ন পাঠানোর জন্য editor@ummah24.com এই ইমইেল ঠকিানা ব্যবহার করুন।