Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর মহিলাদের ঈদের নামাযে শরীক হওয়া প্রসঙ্গে

মহিলাদের ঈদের নামাযে শরীক হওয়া প্রসঙ্গে


প্রশ্ন: আমরা জানি যে, পুরুষের উপর ঈদের নামায ওয়াজিব। মহিলাদের উপর ওয়াজিব না। কিন্তু গত ঈদের নামাযে আমাদের এলাকায় মহিলারাও ঈদের মাঠে শরিক হয়ে ঈদের নামায আদায় করেছে। এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, মহিলাদের জন্য জামাতে শরিক হয়ে ঈদের নামায আদায় করা জায়েয কি না? কুরআন সুন্নাহর আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন। যাতে সমাজের মধ্যে বিভেদ শেষ হয়ে যায় আর বিভেদহীন সমাজে বসবাস করতে পারি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলদিবাতান শাহভেলা ঈদগাহ মাঠ।

ফতোয়া: ইসলামী শরীয়তে নামায রোযার মতো পুরুষ এবং মহিলাদের উপর পর্দার বিধানও ফরয করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, মুমিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে… এবং ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। (সূরা নূর, আয়াত- ৩০-৩১)।

মহিলাদের জন্য স্বীয় বাসস্থানে অবস্থান করা ফরয। শরঈ প্রয়োজন ছাড়া আপন ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি তাদের নেই। যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে, জাহেলি যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন কররো না’। (সূরা আহযাব, আয়াত- ৩৩)।

এ সকল কারণে মহিলাদের জন্য জুমআ, ঈদ ও জামাতের হুকুম প্রদান করা হয়নি। জামাতের সাথে নামায পড়ার হুকুম পুরুষদের সাথে সম্পৃক্ত। মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে মহিলাদেরকে কখনই উৎসাহিত করা হয়নি; বরং জামাতে নামায আদায় করার ২৭ গুণ সওয়াব, মসজিদে নববীতে এক নামাযে ৫০ হাজার নামাযের সওয়াব এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামায পড়ার মতো সৌভাগ্য অর্জনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই মহিলাদেরকে ঘরে নামায পড়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যেমন- উম্মে সালামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘নারীদের নামাযের উত্তম জায়গা হলো তাদের ঘরের নির্জন কোণ’। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস- ২৬৫৪২)।

অন্য বর্ণনায় হযরত উম্মে সালামা ( রাযি.) থেকে বর্ণিত, ‘নারীদের ঘরে নামায পড়া ঘরের বাইরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।’ ( আল মু‘জামুল আওসাত, হাদিস- ৯১০১)।

আরও পড়তে পারেন-

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ যেহেতু ফেতনা-ফাসাদ থেকে মুক্ত ছিল এবং ইসলামের নিত্য নতুন বিভিন্ন বিধি-বিধান মসজিদে আলোচনা হতো, বিধায় সে যুগে মহিলাদের মসজিদে উপস্থিত হতে বারণ করা হতো না। পরবর্তীতে বিভিন্ন ফেতনা-ফাসাদের কারণে সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) বিশেষ করে হযরত ওমর (রাযি.) ও হযরত আয়েশা (রাযি.) তাদের বিচক্ষণতার মাধ্যমে ফেতনার দরজা বন্ধ করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে সম্পূর্ণরূপে বারণ করে দেন। হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, মহিলারা কী অবস্থা সৃষ্টি করেছে যদি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতেন, তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন। যেমন বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো। (সহীহ মুসলিম, হাদিস- ৪৪৫)।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর স্ত্রীদের ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস- ৫৮৪৫)।

এবং হযরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রাযি.) তাঁর পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে যেতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস- ৫৮৪৬)।

কুরআন ও হাদিসের এ সমস্ত অকাট্য প্রমাণাদির কারণে ফুকাহায়ে কেরাম মহিলাদের জুমআ, ঈদ ও জামাতে নামায পড়াকে মাকরুহে তাহরীমী বলেছেন।

তাই তখন থেকে আজ পর্যন্ত ফুকাহায়ে কেরাম সর্বত্র ফেতনা-ফাসাদের সয়লাবের দিকে লক্ষ করে উক্ত মতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন।

অতএব বর্তমানেও মহিলাদের পাচঁ ওয়াক্ত নামাযসহ জুমআ ও ঈদের জামাতে শরিক হয়ে নামায আদায় করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। (সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩৩, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস- ৫৮৪৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস- ২৬৫৪২, সহীহ বুখারী, হাদিস- ৮৬৯, আবু দাউদ, হাদিস – ৫৭০, সহীহ মুসলিম, হাদিস – ৪৪৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা- ৩/৯৫, ফাতাওয়ায়ে শামী- ২/৩০৭)।

——————————

উত্তর দিয়েছেন- আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসীর ও সহকারী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।