Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা কীভাবে রোগীকে ব্যাড নিউজ জানাবেন?

কীভাবে রোগীকে ব্যাড নিউজ জানাবেন?

।। ক্যাপ্টেন ডা. রুখসানা পারভীন (অব.) ।।

আমাদের চিকিৎসকদের প্রায় প্রতিদিনই পেশেন্টদের তাদের রোগ সম্পর্কে জানাতে হয়। প্রতিটি অসুখই ব্যাড নিউজ। তবে ভয়াবহ কিছু ডায়াগনোসিস আছে, (যেমন- ক্যান্সার) যেগুলো আপনি যখন রোগীকে জানাবেন, তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়বে। মুহূর্তে তার চেনা পৃথিবী পালটে যাবে। হঠাৎ করে যদি এই ধরনের রোগের কথা বলা হয়, প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট পেতে পারেন রোগী। আর তাই, এতো খারাপ কোন সংবাদ জানাতে হলে কিছু ব্যাসিক জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। এম বি বি এস কারিকুলামে এ বিষয়ে কোন টপিক নেই। এই লেখাটা আমার স্টুডেন্টদের জন্য, এখানে খুব সহজ ভাষায় কীভাবে আমরা রোগীকে ব্যাড নিউজ জানাতে পারি তার উল্লেখ করছি।

১) প্রথমেই আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার পেশেন্ট এর পরিচয় ঠিক আছে কিনা। ভুল রোগীকে কোন ইনফরমেশন জানালে সেটা কনফিডেনশিয়ালিটি ব্রেক আপ হয়ে যাবে। অযথাই তাকে বিড়ম্বিতও করা হবে। এছাড়া রোগ সম্পর্কে জানার অধিকার প্রথমেই রোগীর, অন্য কোন আত্মীয় স্বজনদের নয়। আমাদের দেশের মানুষ খুব ইমোশনাল। অনেক সময় দেখা যায়, আত্মীয়রা এসে বলে আপনি রিপোর্ট এলে আগে আমাকে জানাবেন। সেই ক্ষেত্রে আপনি রোগীর পারমিশন নিবেন যে, তার আত্মীয়কে আগে বলবেন কিনা।

২) যদি এটা ওপিডি হয়, তাহলে শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ আছে, এমন একটা রুমে কথা বলুন। এজন্য কাউন্সেলিং রুম থাকলে ভালো হয়। ওয়ার্ডে হলে আলাদা একটা রুমে বলা যায়, যদি রোগীকে সরানো সম্ভব হয়। আমাদেরকে সাধারণতঃ উপযুক্ত স্থান এর অভাবে ওয়ার্ডেই বলে দিতে হয়।

৩) রোগীকে জিজ্ঞেস করুন- কোন আত্মীয় আছেন কিনা সাথে? তিনি কি চান আত্মীয় আসুক অথবা একাই রোগ সম্পর্কে কথা বলতে চান।

৪) জিজ্ঞেস করুন- এ যাবৎ তার রোগ সম্পর্কে তাকে কি বলা হয়েছে, কতোটূকু জানেন তিনি। তার লেভেল অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং কেমন সেটা বুঝতে হবে।

৫) ধীরে ধীরে নিচু টোনে ডায়াগনোসিস তাকে বলুন। যেমন তার লাং ক্যান্সার এসেছে রিপোর্টে। শুরু করুন এভাবে যে, আপনার যে রিপোর্ট করতে দেয়া হয়েছিলো, সেটা আমাদের হাতে এসেছে…., আমি খুব দুঃখিত….., রিপোর্ট ভালো আসেনি।

একটু থামুন। তাকে সময় দিন।

তিনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, কি এসেছে রিপোর্টে বা চুপ থাকতে পারেন।

বলুন যে, আমার বলতে বেশ খারাপ লাগছে। রিপোর্টে বলেছে, এটা এক ধরনের ক্যান্সার।

এই পর্যায়ে রোগী বিভিন্ন ধরনের আচরণ করতে পারেন। নীরব থাকতে পারেন, বা আতঙ্কিত হয়ে বলতে পারেন, কী বলছেন? অথবা, ডিনাই করতে পারেন। বা রেগে গিয়ে বলতে পারেন যে, আপনি ঠিক বলছেন না।

সময় দিন রোগীকে। এই দুঃসংবাদ গ্রহণ করতে স্বাভাবিকভাবেই সময় লাগবে তার। আস্তে আস্তে তার এই ডিনায়াল বা শক দুঃখবোধে পরিণত হবে এবং অবশেষে তিনি এটা মেনে নিবেন। চিকিৎসক হিসেবে আপনাকে খুবই এম্প্যাথেটিক হতে হবে এই ক্ষেত্রে। তাড়াহুড়া করবেন না।

এরপর যদি মনে হয় যে, রোগী জানতে ইচ্ছুক, তাহলেই শুধু আপনি এই রোগের কি চিকিৎসা আছে, কতোটুকু স্কোপ আছে কিছু করার, আপনিই করবেন নাকি স্পেশালিস্ট এর কাছে পাঠাবেন, এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা করবেন।

৬) ডায়াগনোসিস যাই হোক না কেন, সবসময়েই কিছু আশা দিবেন। হতাশা যেন হতাশা বয়ে ফিরে না যান।

ব্রেকিং ব্যাড নিউজএ কমন কিছু ভুলঃ

১) ব্যাড নিউজ নিজে না দেয়ার চেষ্টা করা, অন্যরা কেউ বলুক এই আশা করা।

২) আপনি একটা খুব খারাপ সংবাদ দিতে যাচ্ছেন। অবশ্যই এভাবে শুরু করবেন না, কি চমৎকার একটা দিন বা খুব সুন্দর একটা জামা পরেছেন তো!

৩) রোগীর বডি ল্যাংগুয়েজ বুঝতে হবে। খুব অস্থির দেখালে বা আই কন্ট্যাক্ট না করলে সময় আরো বেশি নিতে হবে।

৪) মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কখনোই বলবেন না, চিন্তার কোন কারণ নেই, এটা কোন সিরিয়াস কিছু না।

৫) অতিরিক্ত ইনফরমেশন দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

৬) এভাবে বলবেন না যে, আপনার রিপোর্ট যা ভেবেছিলাম, তার থেকেও খুব খারাপ এসেছে।

আরো কিছু এডভাইসঃ

১) সবসময়েই সৎ থাকুন। কখনো রোগীকে মিথ্যে বা ভুল কিছু বলবেন না।

২) রোগী যতটুকু জানতে চায়, তার চেয়ে বেশি বলার দরকার নেই।

৩) সময় নিন। রোগীকে বলুন, আমি বুঝতে পারছি এটা কতোখানি খারাপ সংবাদ আপনার জন্য। আপনি এখন বিশ্রাম নিন। আমরা আবার এ নিয়ে পরে কথা বলবো।

৪) রোগী জিজ্ঞেস করতে পারে, আমি কতোদিন আর বেঁচে থাকবো। কখনোই কোন সম্ভাব্য সময় বলবেন না।

৫) রোগীকে সাপোর্ট দিন। আশা দিন, এভাবে নয় যে আপনি ভালো হয়ে যাবেন পুরোপুরি। বলুন, আমরা চেষ্টা করছি।

৬) সেনসিটিভ হোন। কঠোর আচরণ করবেন না।

৭) রোগীর বিভিন্ন রকম আচরণের মাধ্যমে কোপ-আপ করাকে সহায়তা দিন।

৮) রোগী রাগ হলে ভালোভাবে কারণ জানতে চান। তার সমস্যা তাকে বুঝিয়ে বলুন।

৯) কথা বলার সময় কোন মেডিক্যাল জারগন ব্যবহার করবেন না। সহজ করে সমস্যা ব্যাখ্যা করুন।

দুঃসংবাদ দেয়ার এই ধাপগুলো অনুশীলন করতে হয়। এর জন্য নিজের জ্ঞানের পরিধির মধ্যে যতোটা সম্ভব ততোটা বলতে হবে। যা জানা নেই, তা নিয়ে অবশ্যই মনগড়া কোন কথা বলা যাবে না। একজন চিকিৎসক সব রোগ সম্পর্কে সবকিছু না জানতেই পারেন। তাই অবশিষ্ট চিকিৎসার জন্য উন্নত সেন্টারে বা বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করে দেয়াই বাঞ্ছনীয়।

ক্যাপ্টেন ডা. রুখসানা পারভীন (অব.)

এমবিবিএস (ঢাকা), এমআরসিপি (ইউ.কে)। সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন), এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, সাভার, ঢাকা এবং পরিচালক- কিংস্টন হাসপাতাল লিমিটেড।

চেম্বার- কিংস্টন হাসপাতাল লিমিটেড

বাড়ী- ৫১-৫৪, রোড- ১ ও ২, ব্লক- ডি, শহীদবাগ, মিরপুর- ১২, ঢাকা- ১২১৬

রোগী দেখার সময়- শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার: সন্ধ্যা ০৭টা থেকে রাত ০৮:৩০ মিনিট।

সিরিয়ালের জন্য- ০১৯৫২-৯৮৯৮৬৬, ০১৯৫২-৯৮৯৮৭৭