Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর

ইসলাম ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন-উত্তর

।। জবাব লিখেছেন- মুফতী মুনরি হোসাইন কাসেমী ।।

 হযরত জাবের (রাযি.)এর স্ত্রী প্রসঙ্গে একটি কাহিনীর বস্তুনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে

জনাব আনোয়ার বিন হুসাইন, দক্ষিণ চর আনন্দ, ইলিশা, ভোলা।

প্রশ্নঃ হযরত জাবের (রাযি.)এর স্ত্রী কিনা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমে পড়ে আপন দুই সন্তানকে জবাই করে দিয়েছিলেন। এরপর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জাবের (রাযি.)এর ঘরে তাশরিফ নেন এবং রুটি গোশত খেতে বসেন। তখন হযরত জিব্রাঈল (আ.) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনা জানিয়ে দেন। এরপর রাসূল (সা.) হযরত জাবের (রাযি.)এর দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে খেতে চাইলেন। কিন্তু ছেলেদের হাজির করতে পারেননি জাবের (রাযি.)এর স্ত্রী। এরূপ একটি ঘটনা আমাদের এলাকায় প্রচলিত আছে। এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানতে আগ্রহী।

উত্তরঃ এটি একটি আজগুবি গাঁজাখোরী গল্প বৈই কিছু নয়। আমাদের বিশ্বাস, ইসলামের শত্রু ইহুদীরা আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মানুষের অন্তরে বিরূপ ধারণা সৃষ্টির লক্ষ্যে এরূপ একটি জঘন্য ও মিথ্যা কল্পকাহিনী ছড়িয়ে দিয়েছে।

তবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের প্রাক্কালে হযরত জাবের (রাযি.)এর ঘরে গোশত-রুটির দাওয়াত খেয়েছিলেন বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এ ঘটনার সাথে প্রশ্নোল্লিখিত বিবরণের কোন তথ্য কোথাও উল্লেখ নেই। এটি একটি অবাস্তব ও ভিত্তিহীন গল্প। এ সব আজেবাজে কল্পকাহিনীর ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। (সূত্র- ফাতহুল বারী- ৭/৫০৩, বেদায়াহ্- ৪/১১১, বুখারী শরীফ- ২/৫৮৯ পৃষ্ঠা)।

ঈদগাহ প্রসঙ্গে

জনাব মাওলানা আব্দুশ্ শাকুর, বায়মপুর, কানাইঘাট, সিলেট।

প্রশ্নঃ আমাদের এলাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ ঈদগাহ্ ময়দান তৈরির লক্ষ্যে লোকদের কাছ থেকে যমী ও নগদ টাকা-পয়সা তোলা হচ্ছে। জানার বিষয় হল, এরূপ ঈদগাহে নামাযে জানাযা পড়া যাবে কি? তাছাড়া সেটা কি মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে?

উত্তরঃ ঈদগাহ্ মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত কি-না এ ব্যাপারে ফিক্বাহবিদগণের মতবিরোধ থাকলেও নির্ভরযোগ্য মতানুসারে ঈদগাহ্ সম্পূর্ণরূপে মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেবল ইমামের পিছনে ইক্তিদার ক্ষেত্রে মসজিদে যে হুকুম এখানেও একই হুকুম। এতদ্ভিন্ন সাযোজ্যতা বলতে আর কিছু নেই। বরং মসজিদ পার্শ্ববর্তী স্থান যেমন, এটিও তেমন। আর ঈদগাহে নামাযে জানাযা পড়া যাবে, তবে তার পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত। (সূত্র- রদ্দুল মুহ্তার-১/৬৫৭, ৪/৩৫৬, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ্-৮/৩১৬ পৃষ্ঠা)।

দান-সদকা প্রসঙ্গে

জনাব হাফেজ মুহাম্মদ আবুবকর সিদ্দীক, চরকুলটিয়া, মাঝবাড়ী, পাংশা, রাজবাড়ী।

প্রশ্নঃ তাবলীগের মুরুব্বীরা বলে থাকেন, আল্লাহর রাস্তায় এক টাকা খরচ করলে ৭ লক্ষ টাকা সাদকা করার সাওয়াব এবং একটি আমল করলে ৪৯ কোটি সাওয়াব পাওয়া যায়। এর স্বপক্ষে দলীল কি?

উত্তরঃ এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি স্বশরীরে আল্লাহর রাস্তায় বের হয় এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য এক টাকা খরচ করে সে প্রত্যেক টাকায় ৭ লক্ষ টাকা দান করার সাওয়াব পাবে। আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, আল্লাহ্র রাস্তায় নামায, রোযা ইত্যাদি আমলের সাওয়াব তাঁর রাস্তায় খরচ করা অপেক্ষা ৭শ’ গুণ বাড়িয়ে দেন। বলা বাহুল্য, ৭ লক্ষকে ৭শ’ দিয়ে গুণ করলে ৪৯ কোটি হয়।

প্রকাশ থাকে যে, শুধুমাত্র প্রচলিত তাবলীগে যাওয়াই আল্লাহর রাস্তা নয়, বরং দ্বীনের প্রতিটি ক্ষেত্রে খরচ করলেও উল্লিখিত সাওয়াবের ভাগী হওয়া যাবে। যেমন, অন্যায় আগ্রাসন, জুলুম-অত্যাচার, সাম্প্রদায়িক আঘাত মোকাবেলা ও সন্ত্রাস দমনের জন্য সরকার প্রধান বা আমীরের নেতৃত্বে সশস্ত্র জিহাদ, ইলমে দ্বীন শিক্ষা, মাদ্রাসা-মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এক টাকা খরচ করলেও সাত লক্ষ টাকার সাওয়াব এবং ১টি আমল করলে ৪৯ কোটি আমলের সাওয়াব পাওয়া যাবে। (সূত্র- মিশকাত শরীফ-২/৩৩৫, আবুদাঊদ শরীফ-৩৩৮ পৃষ্ঠা)।

ফিতরা আদায় প্রসঙ্গে

জনাব হাজী আবুল কালাম, শাহগলি বাজার, জকিগঞ্জ, সিলেট।

প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, একজনের ফিতরা একজনকেই দিতে হবে। একাধিক ব্যক্তিকে দিলে আদায় হবে না। এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তরঃ উক্তিটি সঠিক নয়। বিধান মতে একজনের ফিত্রা যেমন একজনকে দেওয়া যেতে পারে, তেমনই একাধিক ব্যক্তির মধ্যেও বণ্টন করে দেওয়া যেতে পারে। এতে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোন প্রকার বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।

তবে কোন কোন ফিক্বাহ্ গ্রন্থে প্রশ্নোল্লিখিত মাস্আলা বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সেটির উপর ফাতওয়া নয়। বরং উপরে বর্ণিত মাস্আলার উপর ফিক্বাহ্বিদগণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত। তবে উত্তম হচ্ছে, একজনকে এ পরিমাণ ফিতরা দেওয়া যে পরিমাণ ফিতরা দিলে তাকে সেদিনের জন্য আর কারো কাছে হাত পাততে না হয়। (সূত্র- দুররুল মুখতার-১/১৪৫, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ্-১/১৮৮, বাহরুর রায়েক্ব-২৪২, আল-মাওছূআতুল ফিক্বহিয়্যাহ্-২৩/৩২৯ পৃষ্ঠা)।

বিবাহের সুন্নাত নিয়ম প্রসঙ্গে

জনাব আল্হাজ্ব ডাঃ সিদ্দীক হোসেন, নীলা ফার্মেসী, লক্ষীপুর বাজার, কিশোরগঞ্জ।

প্রশ্নঃ সুন্নাতী বিবাহ কি? তার পদ্ধতি বর্ণনা করুন।

উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যেভাবে বিবাহ করেছেন, অন্যকে করিয়েছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন সে পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত বিবাহকে সুন্নতী বিবাহ বলা যায়।

শরীয়তের দৃষ্টিতে জুমআর দিন মসজিদে বিবাহ হওয়া মুস্তাহাব এবং সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ্যে হওয়া সুন্নাত। উভয় পক্ষের গণ্যমান্য লোক ছাড়াও পরহেযগার কিছু লোক বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সুন্নাত। বরের উপস্থিতিতে খুত্বা পাঠ শেষে উভয় পক্ষের ইজাব-কবূল ও মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিবাহের মোহর মোহরে ফাতেমী হওয়া সুন্নাত। মোহরে ফাতেমী হচ্ছে, ১৫০ তোলা রৌপ্য বা বাজার দর অনুযায়ী তৎমূল্য। ইজাব-কবূল সম্পন্নের পর উপস্থিত সবাইকে নিুোক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হয়। “বারাকাল্লাহু লাক বারাকাল্লাহু আলাইকা ওয়া জামাআ বাইনাকুমা ফী খাইর”। অতঃপর সমাবেশে খোরমা ছিটিয়ে দেওয়া সুন্নাত। এক্ষেত্রে মসজিদের আদব ও সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিবাহ উপলক্ষ্যে মেহদী অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ, বর যাত্রা, কনের পিত্রালয়ে ভোজানুষ্ঠান ইত্যাদি পালন করা হয়। এগুলো আসলে বিজাতিদের আদর্শ যা ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী। এসব কার্যকলাপ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য। (সূত্র- রদ্দুল মুহ্তার-৩/৮, তিরমিযী শরীফ-১/২০৭, ২/২১১)।

মসজিদে দ্বীনি বইপত্র ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে

জনাব আলহাজ্ব মুহাম্মদ হারুন রশীদ, কাতার স্টীল কোম্পানী, দোহা, কাতার।

প্রশ্নঃ কাতার প্রবাসী বাংলাদেশী উলামায়ে কিরামদের কয়েকটি সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের উদ্যোগে সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক ধর্মীয় মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আর তা করা হয় মসজিদের ভিতরে। কারণ, সরকারী আইন অনুসারে মসজিদের বাইরে কোন ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। তাই কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে এসব মাহ্ফিল করা হয়ে থাকে। সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ব্যক্তির মাধ্যমে এসব মাহ্ফিলে উপস্থিত বাংলাদেশীদের মধ্যে বাংলা ভাষার বিভিন্ন প্রকার ধর্মীয় বই-পুস্তক ও পত্রপত্রিকা কেনাবেচা করা হয় এবং সংগঠনের চাঁদা উত্তোলন করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, মসজিদের মধ্যে বসে এসব কেনাবেচা ও কাজকর্ম করা জায়েয হচ্ছে কি?

উত্তরঃ মসজিদ আল্লাহ্র পবিত্র ঘর। কুরআন-হাদীস তথা ফিক্বাহ্ গ্রন্থাদিতে মসজিদের আদব রক্ষা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমরা মসজিদে ছোট অবোঝ বাচ্চা ও পাগল আনবে না এবং মসজিদে কেনাবেচা করবে না। ফিক্বাহ্বিদগণ বলেন, শুধু ই’তিকাফ কারীর জন্য মসজিদের বাইরে মালামাল রেখে কেনাবেচা করা জায়েয। মালামাল ভেতরে এনে কেনাবেচা করা ই’তিকাফ কারীর জন্যও মাকরূহে তাহ্রীমী। ই’তিকাফ কারী ব্যতীত অন্যদের জন্য মসজিদে কেনাবেচা করা মাকরূহে তাহ্রীমী, মালামাল মসজিদের বাইরে রাখুক বা ভেতরে। অতএব প্রশ্নে উল্লিখিত ধর্মীয় বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা মসজিদের ভেতরে কেনাবেচা করা এবং সংগঠনের চাঁদা উত্তোলন করার কাজ করা মাকরূহে তাহ্রীমী হবে। (সূত্র- হিদায়াহ্-১/২৩১, ফাতওয়ায়ে শামী-১/৬৬২, ২/৪৪৯, আহ্সানুল ফাতওয়া-৬/৪৪২, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ্-৫/৩২১)।

মসজিদ স্থানান্তর প্রসঙ্গে

জনাব মাওলানা মুহাম্মদ শামসুদ্দীন, পশ্চিম এওয়াজপুর, চরফ্যাশন, ভোলা।

প্রশ্নঃ একটি মসজিদ এমন স্থানে অবস্থিত যেখানে মুসল্লীরা যেতে চায় না। মুসল্লীর অভাবে অনেক সময় ইমাম সাহেবকে একাই নামায পড়তে হয়। মসজিদটি সদর রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি বাড়ীর দরজায় অবস্থিত। এটি যদি সদর রাস্তার পাশে স্থানান্তরিত হয়, তাহলে সব সময় জামাআত অনুষ্ঠিত হবে এবং মুসল্লী সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য অনেকেই রাস্তার পাশে যমী ওয়াকফ করে দিতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, বর্তমান মসজিদের যমীটি ওয়াকফকৃত নয়। এমতাবস্থায় করণীয় কি?

উত্তরঃ হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ্ গ্রন্থাদির আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য যমী ওয়াকফকৃত হতে হয়। প্রশ্নোল্লিখিত মসজিদের যমী যেহেতু ওয়াকফকৃত নয়, তাই এলাকাবাসী জনগণের সুবিধা মত ওয়াকফকৃত স্থানে মসজিদ স্থানান্তর করতে অসুবিধা হবে না। (সূত্র- ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ্- ৬/১২৮, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যাহ্- ২/৪৫৫)।

কোটকাচারীতে কর্মচারীদেরকে টাকা দেয়া প্রসঙ্গে

জনাব মুশাররফ হোসেন মূসা, ভাগদী মার্কাজ পূর্ববাড়ী, নরসিংদী।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের বিচার (জে.এম) শাখায় যারা চাকুরী করেন, তারা কোর্টে হাজিরা বাবদ বাদী-বিবাদীর কাছ থেকে ১০/২০ টাকা, এফিডেভিট বাবদ ১০/২০ টাকা, কোর্টের জামিননামা নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রিক্সা ভাড়া বলে ২০/৩০ টাকা এবং সরকারী টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য রিক্সা ভাড়ার কথা বলে ২০/৩০ টাকা হারে আদায় করে থাকেন। এমনকি বাইরের লোকজন এখানে এসে স্টাফদেরকে চা-নাস্তা খাওয়ান। উল্লিখিত খরচ বাবদ যে টাকা-পয়সা দিতে হয়, এ সম্পর্কে মামলা-মোকাদ্দমা সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত আছেন। বলা যেতে পারে, এটি একটি অঘোষিত সরকারী নিয়ম হিসেবে প্রচলিত।

অত্র অফিসে জনৈক লোক চাকুরী করেন। কিন্তু তিনি এ সবের কিছুই গ্রহণ করেন না। ফলে নির্ধারিত বেতনে তার সংসার চলে না। প্রতি মাসেই ঋণ করতে হয়। ইতিমধ্যে তিনি দু’বার জমী বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তার বসত ভিটাটিই বাকী আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই লোক কি উপরোল্লিখিত টাকা-পয়সা গ্রহণ করতে পারবেন?

উত্তরঃ আলোচ্য ব্যক্তি বেতন ভুক্ত একজন সরকারী কর্মচারী। তাকে এ কাজের জন্যই নিযুক্ত করা হয়েছে। কাজেই লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ তার জন্য যে সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন সে সময়ের বাইরে যদি তিনি এ ধরনের কাজ করেন, তবে তার বিনিময়ে উল্লিখিত খাতে অর্থ গ্রহণ বৈধ হবে। কারণ তার অফিস সময় বহির্ভূত উক্ত কাজের কোন ভাতা সরকার প্রদান করেন না। তাই এটাকে তার জন্য ওভারটাইম হিসেবে ধরা যেতে পারে। কিন্তু এগুলো যদি অফিস টাইমের ভিতরে করা হয় এবং তজ্জন্য কর্তৃপক্ষ খরচ বহন করেন। যেমন এক অফিসের কাজগপত্র অন্য অফিসে পৌঁছানো বা সরকারী অর্থ ব্যাংকে জমা দেওয়া ইত্যাদি বাবদ খরচ প্রদান করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট লোকদের নিকট থেকেও এ বাবদ অর্থ গ্রহণ বৈধ হবে না। ঘুষ বলেই গণ্য হবে। আর যদি অফিস সময়ের মধ্যে এসব কাজ করার জন্য খরচ বাবদ অর্থ বরাদ্দ না থাকে, তাহলে যে পরিমাণ টাকা-পয়সা খরচ হয় সে পরিমাণ টাকা-পয়সা সংশ্লিষ্টের নিকট থেকে গ্রহণ করা বৈধ হবে। খরচের অতিরিক্ত গ্রহণ বৈধ হবে না।

একাধিক হাদীসে ঘুষের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার উপর আল্লাহ্র অভিশাপ বর্ষিত হয়। কাজেই উক্ত পেশায় থেকে হালাল উপার্জনে যদি সংসার পরিচালনা সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প কোন হালাল পন্থা বেছে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ্ সবাইকে ঘুষের আদান-প্রদান থেকে হিফাযত করুন। (সূত্র- মিশকাত শরীফ- ২/৩২৬, মিরক্বাত- ৭/৩২২, তিরমিযী শরীফ-১/২৪৮, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ্- ৫/১১৭)।

তাবিজ-কবজ ও তদবীর করে টাকা গ্রহণ প্রসঙ্গে

জনাব মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ্, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা।

প্রশ্নঃ জনৈক পীর সাহেব বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও সমস্যা দূরিকরণে তা’বীজ-তদবীর দিয়ে থাকেন। এ জন্য তিনি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ নিয়ে থাকেন। গ্রহীতার সুবিধা-অসুবিধা কিংবা ধনী-গরীবের দিকে খেয়াল করেন না। এটা কি তার জন্য জুলুম হবে? এ জন্য তাকে খাঁটি পীর বলা যাবে কি?

উত্তরঃ শরীয়ত সমর্থিত পন্থায় তা’বীজ-তদবীর করা এবং তার বিনিময় গ্রহণ করার বৈধতা রয়েছে। রুগীর রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে ডাক্তার যেমন ব্যবস্থাপত্র দিয়ে নির্দিষ্ট ফি গ্রহণ করতে পারেন তেমনি তিনিও পারেন। তবে গরীব-অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা এবং মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায় না করা উচিত।

উল্লিখিত পীর সাহেব যদি শরীয়ত পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না থাকেন, বরং শরীয়ত অনুসারে চলেন, তাহলে কেবল তা’বীজ-তদবীরের নির্দিষ্ট ফি গ্রহণ করার জন্য তাকে অখাঁটি পীর বলা যাবে না। (সূত্র- তিরমিযী শরীফ-২/২৬, মিশকাত শরীফ-২/৩৮৮, ৩৮৯, ৩৯০)।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্দা প্রসঙ্গে

জনাব মুছাম্মৎ মরিয়ম, ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর।

প্রশ্নঃ আমি বোরকা পরে মাদ্রাসায় যাই। মাদ্রাসায় ক্লাস করার সময় চোখ খোলা নেকাব পরে থাকি। অনেক সময় পাঠ্য বিষয় বোঝার জন্য হুজুর বা স্যারদের দিকে তাকাতে হয়। এতে আমার কোন গুনাহ্ হবে কি?

উত্তরঃ শরীয়তের বিধান মতে বেগানা পুরুষের দিকে মহিলার এবং বেগানা মহিলার দিকে পুরুষের তাকানো বৈধ নয়। তবে ঘটনাচক্রে দৃষ্টি পড়ে গেলে যদি সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে দোষণীয় নয়। আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেনঃ হে নবী! আপনি মু’মিনদের ও ঈমানদার নারীদেরকে বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ হিফাযত করে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মে সালমা এবং মাইমুনা (রাযি.)কে অন্ধ সাহাবী হযরত ইব্নে উম্মে মাকতুম (রাযি.)এর সামেন পর্দা করতে বলেছেন। ইব্নে উম্মে মাকতুম অন্ধ থাকা সত্ত্বেও এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজেই শ্রেণী পাঠ বোঝার জন্য হলেও বেগানা পুরুষ শিক্ষকের দিকে দৃষ্টিপাত করা জায়েয হবে না। (সূত্র- সূরা নূর- ৩০, ৩১, ইব্নে কাসীর- ৩/২৯১, মিশকাত শরীফ-২/২৬৯)।

মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী

ফাযেলে- দারুল উলূম দেওবন্দ (দাওরা ও ইফতা), সিনিয়র মুহাদ্দিস- জাময়িা মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং উপদেষ্টা সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ডটকম

 

নোটঃ উম্মাহ ২৪ডটকম এর প্রশ্ন-উত্তর বভিাগে আপনিও চাইলে ধর্ম সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। প্রশ্নের পরিধি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত হতে হবে এবং একক বষিয়বস্তুর উপর হতে হব। একটি একাধিক বিষয়ের অবতারণা করা যাবে না।

প্রশ্ন পাঠানোর জন্য editor@umah24.com এই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।