Home ইসলাম ইবাদত থেকে দূরে রাখতেই কি শবে-বরাত নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা!

ইবাদত থেকে দূরে রাখতেই কি শবে-বরাত নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা!

।। ইয়াসীন আব্দুর রউফ ।।

বড্ড অবাক লাগে আমার! কেউ যদি আজ কোথাও চাকুরীর সংবাদ পায়, কিংবা কোনো অফারের কথা শোনে, তাহলে সে সেটার অত বেশি যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন অনুভব করে না। বরং পাগলপারা হয়ে উদ্ভ্রান্তের মত এর পিছনে ছুটতে থাকে৷ নিশ্চিত না হয়েও সম্ভাবনা যাতে হাতছাড়া না হয়, এজন্য কষ্ট করে হলেও সে ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়। এরপর সে হয় সর্বস্বান্ত।

হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে যে, শা’বান মাসের মধ্যরজনীতে (যেটাকে আমরা শবে-বরাত বলে থাকি) আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দান করেন। কেউ ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেন, আর কেউ চাইলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন৷

ওহে মুসলিম! আল্লাহর এই অফার পেয়ে তোমার মনে চায় না একটু গিয়ে দেখতে, সেখানে কিছু আছে কিনা? না তোমার এই উদ্ভ্রান্ত্রের মতো ছুটে চলা কেবল দুনিয়াবী অফারের ক্ষেত্রে? পরকালের অফারের কথা শুনলেই তখন তোমার যাচাই-বাছাই শুরু হয়ে যায়! হাদিস সহীহ না যঈফ সে বিচার করতে শুরু করো! আর দুনিয়ার অফারের সময় তুমি অন্ধের মতো কাগজপত্রের ফাইল হাতে নিয়ে পাগলপারা হয়ে দৌঁড়াতে থাক তার পিছনে!

হতে তো পারে এই রজনীতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং দুনিয়ার মানুষের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন৷ আর তুমি যদি এই রহমতের দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাও, যদি এই সম্ভাবনা আজ তোমার হাতছাড়া হয়ে যায় তোমার অতিমাত্রায় যাচাইয়ের ফলে, তবে এতে কি তোমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ হবে না? কোন আফসোস হবে না তোমার? এছাড়া ফযিলতের ক্ষেত্রে তো দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য, এটা মুহাদ্দিসীনে কেরামের স্বীকৃত বিষয়৷

ওহে মুসলিম! শুনে রাখো, হাদীসের সনদ দুর্বল হতে পারে কিন্তু হাদীস তো হাদীসই৷ তা আল্লাহর রাসূলেরই কথা৷ সুতরাং ফযীলতপূর্ণ আমলের ক্ষেত্রে কোন হাদীসকে দুর্বল/যঈফ বলে দূরে রাখবে তুমি, এই সুযোগ দেওয়া হয়নি তোমাকে৷ সাবধান! হ্যাঁ…..! বিদআ’ত হলে ভিন্ন কথা৷ আর বিদআত হল এমন কোনো নব উদ্ভাবিত আমল, যার কোন সমর্থন নেই কুরআন-হাদীসে এবং খাইরুল কুরূন তথা- সাহাবা, তাবেয়ীনও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের যুগে৷ বিদআতের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই৷ কিন্তু যে বিষয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের হাদীস বিদ্যমান, সে ব্যাপারে এত দ্বিধা, এত মতবিরোধ, এত ষড়যন্ত্র কেন…..? চৌদ্দশত বছর পরে এসে আজ তুমি এত জাদরেল মুহাদ্দিস হয়ে গেলে যে, বিশ্লেষণ করতে করতে আমলের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে তোমার। সকল সম্ভাবনা তোমার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে! আল্লাহর দরবারে কয়টি আমল নিয়ে দাঁড়াবে তুমি?! আর কেনই বা তুমি জাতিকে আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখছো? কী উদ্দেশ্য তোমার?! পরকালের কাঠাগড়ায় দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত হও৷

আল্লাহ সকলকে সুমতি দান করুন৷ আমীন!!!

লেখক: তরুণ আলেমে-দ্বীন, শিক্ষক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।