Home পরিবার ও সমাজ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভিনদেশী টিভি চ্যানেলের ভয়াল থাবা

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভিনদেশী টিভি চ্যানেলের ভয়াল থাবা

।। জয়নব আক্তার সোহেল ।।

সুপ্রিয় পাঠক! একটু ভাবুন তো, যেহারে ভিনদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে এবং তাতে আমাদের টিনএজ ও যুবারা যেহারে মত্ত হয়ে উঠছে, তাতে আমাদের বাঙালী পরিচিতির গৌরব কতটা বাকী আছে? আমাদের বর্তমান প্রজন্মের চলনে বলনে কি আসলে বাঙালি পরিচিতি বহন করে? নাকি ভীনদেশীয়দের কেনা গোলাম? ভীনদেশীয়রা আমাদের উপর যা চাপিয়ে দিচ্ছে তাই আমাদের জন্য মঙ্গল মনে করতে শুরু করেছে আজকের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। আমরা আজ ভারত ও পশ্চিমাদের মত মর্ডান হওয়ার পাল্লায় মেতে উঠেছি। যে যত বেশী মর্ডান তাকে ততবেশী সংস্কৃতির ধারকবাহক বলা হচ্ছে। এভাবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নির্দ্বিধায় চলতে থাকলে এমন এক সময় আসবে, মর্ডান হতে গিয়ে বাঙালিরা কাপড় পরিধানও হয়তো ছেড়ে দিবে। আর সেদিনেই হবে ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি ও বাম সেক্যুলাররা সফল।

বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের অবাধ প্রবাহ আমাদের নতুন প্রজন্মকে ভারতীয় সংস্কৃতির দাসরূপে গড়ে তুলছে। আমরা যদি কুটনামি ও নগ্নপনায় ভরা ভারতীয় টিভি চ্যানেলকে প্রতিহত বা পরিত্যাগ করতে না পারি, তাহলে দেশ ভারত মাতার গর্ভে বিলীন হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় পথ খোলা থাকবে না। দিন দিন বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জিনসপত্রের আমদানি বাড়ছে, ব্যাবহার বাড়ছে। প্রযুক্তির সাথে সাথে সফলতার অগ্রযাত্রাও দিন দিন সমুন্নত হচ্ছে। আর এসব কিছু আমাদের জন্য অভিশাপ নয় বরং আর্শীবাদ। কিন্তু এই আর্শীবাদই অপব্যবহারের কারণে বাঙালিদের জন্য অভীশপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারতসহ ভিনদেশী টিভি চ্যানেলে যতটা না সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা থাকে, শিক্ষনীয় কিছু থাকে, তার চেয়ে ঢের বেশী রয়েছে যুবক যুবতীদেরকে নষ্টামির দিকে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন। স্টার জলসা, জি বাংলা, স্টার সিনেমা ও ভি চ্যানেলের মতো টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন ৭/৮টি করে কুটনামি ও পরকীয়ার মতো সমাজ বিরোধী অবৈধ সম্পর্কের দৃশ্যসহ নানা বেহায়াপনা প্রচার করা হয়। অবৈধ প্রেম, পরকীয়া আর সম্পত্তি দখল নিয়ে নানা উদ্ভট বিষয় তুলে ধরা হয় এসব সিরিয়ালে। বর্তমানে এসব সিরিয়ালের খারাপ দিক এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা কল্পনাও করা যায় না। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখার জন্য ঘরে ঘরে ঝগড়া পর্যন্ত হচ্ছে। এখনতো যাদের ঘরে ডিশ সংযোগের টিভি আছে, সেসব ঘরের সব বয়সী মহিলারা এসব ভারতীয় চ্যানেলের নিয়মিত দর্শক।

বিশেষত মহিলারা সব কাজ কর্ম ফেলে পাগলের মত ছুটে যায় এসব ফালতু সিরিয়াল দেখার জন্য। যা পরে তাদের আলোচনার খোরাক জোগায়। দিনভর চলে এসব অবৈধ সম্পর্ক ও নানা কিসিমের কূটনামির মৌখিক চর্চা। তারপর আস্তে আস্তে এসবের কুপ্রভাব পড়তে থাকে ব্যক্তি ও পরিবার জীবনে।

ভারতে বাংলাদেশের কোন চ্যানেল দেখা না গেলেও তাদের চ্যানেলের আধিপত্য যেন বাংলাদেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে বাংলাদেশের দেশীয় রক্ষণশীল সামাজিক ও পারিবারিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভয়াল থাবা পড়ছে মারাত্মকভাবে। সিরিয়ালগুলো মহিলাদের কাছে এত প্রিয় যে, অনেকের চোখে নাকি ঘুম আসে না এসব নষ্টামিতে ভরা সিরিয়াল না দেখলে। যতদিন এ দেশে ভারতীয় চ্যানেল চলতে থাকবে, এদেশের নারীদের উন্নতি নয়, বরং দিন দিন অবনতির গভীর সাগরে ডুবতে থাকবে। দেশে খুন-খারাবি, হত্যা, নারী নিগ্রহ, নারী ধর্ষণ ও অবৈধ ব্যভিচার ভয়ানক আকারে বাড়তেই থাকবে। এর প্রমান পত্রিকার পাতা খুললেই এখন এসব সংবাদে ভরা দেখতে পাওয়া যায়।

পরিশেষে বলব, আমাদের সরলমনা বাংলাদেশীদের জীবনে ভারতীয় ও পশ্চিমা চ্যানেলগুলো বেহায়াপনার সাথে সাথে বড় ধরনের সংকট তৈরি করছে। তাই সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়সহ আমজনতার প্রতি অনুরোধ, ভিনদেশী টিভি চ্যানেলগুলো এখনই নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যথায় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা আরো ভেঙে পড়ার পাশাপাশি আমাদের সুন্দর সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনসমূহও দিনকে দিন আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। পাশাপাশি ব্যক্তগত পর্যায়েও আসুন আজ থেকে, বরং এখনই শপথ করি, আমার পরিবার হবে ভারতীয় ও পশ্চিমা চ্যানেল মুক্ত। #

লেখকঃ গ্রন্থকার ও পত্রপত্রিকার কলাম লেখক। অক্সিজেন, চট্টগ্রাম থেকে।