।। মালেকা ফেরদৌস ।।
লেখার টেবিলে বসতেই বুয়া এসে খবর দেয়, কেউ একজন দেখা করতে চায়।
কে, বলতেই খুন্তি হাতে ব্যস্ত বুয়া বলে ওঠে, চিনিনা খালাম্মা। আমনের পুরান কাজের বুয়াই অইব।
– কেন দেখা করতে চায়, জেনে আস।
বিরক্ত বুয়া দরজা খুলে উঁকি দেয়- এই বেডি! কই গেলা, ভেতরে আহো।
গেল কই?
নাই, চইলা গেছে খালাম্মা।
গতকালও এসেছিল। দেখা না করে চলে গেছে।
নীচে দারোয়ানদের ইন্টারকমে জিজ্ঞেস করলাম, কোন মহিলাকে দু’ দিন ধরে আমার বাসায় পাঠায় কিনা।
ওরা বলল, না, খালাম্মা, কোন মহিলাকে পাঠাইনি আমরা।
অবাক হলাম! রিসিভার রেখে ফিরতেই দেখলাম, একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পরিচিত মনে হল, কিন্তু চিনতে পারছি না।
– কে তুমি?
– আমি শয়তান।
পায়ের নীচের মাটি দুলতে লাগলো। গায়ে চিমটি কাটলাম। হয়তো ভুল শুনেছি।
আবার জানতে চাইলাম।
একই উত্তর। সহজ, স্বাভাবিক- ‘আমি শয়তান’।
কিছু বলার আগেই ও বলে ওঠল- ‘অনেক দিন থেকেই আমি আপনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। আজ সুযোগ পেলাম’।
আমি যেন আর আমার মধ্যে নেই। এসব কি হচ্ছে! রান্নাঘরে বুয়া কাজ করছে। ওর নড়াচড়ার শব্দ পাচ্ছি। কিন্তু ওকে ডাকতে পারছি না। কেমন যেন ঘোরের মধ্য তলিয়ে যাচ্ছি।
জানি দরুদ পড়লে বা আজান দিলে এসব কাছে ঘেষতে পারে না।কিন্তু পড়তে যে পারছি না।
সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে বললাম- কেন আমার সাথে কথা বলতে চাও?
– আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না, শুধু কিছু দৃশ্য দেখাতে চাই।
– আমাকে কেন দেখাবে?
– আপনি লিখতে পারেন বলে।
– আমি অনেক ছোট লেখক। অনেক বড় বড় লেখকরা আছেন। তাদের কাছে যাও।
– তাদের অনেকের সাথেই আমার চলাফেরা সখ্যতা আছে। কিন্তু এ মুহূর্তে যে আপনাকেই আমার দরকার।
-তুমি তো অভিশপ্ত। তোমার দেখানো দৃশ্য আমি দেখব কেন?
এ কথা বলে ওর দিকে তাকালাম।
কিন্তু সেখানে শয়তান মেয়েটি নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার কলেজের বন্ধু জুলি হাসছে।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি। কানে শব্দ ভেসে আসছে। চারদিকে অন্ধকার। আমার শরীর বোধশূণ্য হয়ে যাচ্ছে।
অন্ধকারে যেন তলিয়ে যাচ্ছি আমি। [চলবে]
উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ