Home ওপিনিয়ন অপরাধপ্রবণতা ও রাষ্ট্রের দায়

অপরাধপ্রবণতা ও রাষ্ট্রের দায়

।। সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা ।।

দেশে অপরাধ ও অপরাধপ্রবণতা প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে শাসন বিভাগের কোন ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকতা নেই। রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সমন্বয়হীনতা এর অন্যতম কারণ। মূলত, রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সম্পর্কটা খুবই নিবিড়। রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি যেমন আত্মপরিচয়হীন, তেমনিভাবে নাগরিক ছাড়া রাষ্ট্রও অকার্যকর। রাষ্ট্র যেমন নাগরিক জীবন অর্থবহ, সুন্দর ও গতিশীল করে তোলে, ঠিক তেমনিভাবে সুনাগরিকও রাষ্ট্রকে সফল ও সার্থক করে তোলার ক্ষেত্রে পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ বিষয়ে মনীষী তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য খুবই চমকপ্রদ। তার ভাষায়, ‘Taxation is theft when the taxes are used for things that do not serve our interests.’ তার এ বক্তব্যে রাষ্ট্র ও নাগরিকের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের বিচ্যুতিটাই জাতীয় বিপত্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই দায় রাষ্ট্র কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

মূলত, ‘রাষ্ট্র’ বলতে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে বোঝায়। যেখানে একটি সংগঠিত সরকার থাকে এবং নাগরিকরা সে সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। রাষ্ট্রও জনগণের জানমালের নিরাপত্তাসহ সব ধরনের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উডো উইলসন রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়ে বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মধ্যে আইনের মাধ্যমে সংগঠিত জনসমূহকে রাষ্ট্র বলে’। সঙ্গত কারণেই নাগরিক যেমন রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে, তেমনিভাবে নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তাসহ সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন যৎসামান্যই বলতে হবে।

রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারছে কি না সে প্রশ্ন  আমাদের দেশে একেবারে নতুন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সে প্রশ্নের পরিসরটা আগের তুলনায় বেড়েছে। দেশে সুশাসন বা আইনের শাসনের পারদটা বেশ নিম্নমুখী। সঙ্গত কারণেই দেশে অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতা এখন লাগামহীন। আইনের শাসনের অনুপস্থিতিই আমাদের এই অধঃপতনের জন্য দায়ি। এমনিতেই রাষ্ট্রের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, আত্মপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত রয়েছে। একই সাথে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে নানাবিধ অপরাধ প্রবণতা। নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে নারী নিগ্রহের ঘটনা সে দিকেই অঙ্গলী নির্দেশ করে। ফলে দেশের নারী সমাজ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। রাষ্ট্রযন্ত্র এসব আতঙ্কিত নারীদের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

দেশে যে নারী নির্যাতনের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তার প্রমাণ মেলে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান থেকে। সংগঠনটি সাম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯শ ৭৫ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী।

এখানেই শেষ নয়। গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১শ ৬১ নারী। এদের মধ্যে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় দেশে যৌন হয়রানি ও  নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষপ সহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। আসক জানিয়েছে, গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪শ ৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২শ ৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১শ ৬৮ নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। এ সময়ের মধ্যে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যা এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। এছাড়া এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। গত ৯ মাসের শিশু নির্যাতন ও হত্যার পরিসংখ্যানও খুবই ভয়াবহ। এ সময়ে ১ হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে ৪শ ৪৫ শিশু। এছাড়া ৬শ ২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।

জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হলেও সে ক্ষেত্রে তাদেরও ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মূলত একশ্রেণির অসৎপ্রবণ সদস্যের কারণেই গোটা বাহিনীই এখন ইমেজ সংকটে পড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৯ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এবং তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ২শ ১৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে কথিত এনকাউন্টারে  নিহত হন ১শ ৮৫ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন ২৭ জন। গত ৯ মাসে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত খবরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের শিকার হন ৪ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

ক্রয়ফায়ার বা এনকাউন্টার যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, ঠিক তেমনিভাবে গণপিটুনীতে হত্যাও মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৯ মাসে গণপিটুনীতে মারা গেছেন ৩০ জন বনী আদম। চলতি বছরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার  ঘটনা; বিশেষ করে ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক নির্যাতনের সংখ্যা এবং ঘটনার ধরনে ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সাভারে স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে গণধর্ষণের পাশাপাশি তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনাগুলো নিয়ে মামলা হলেও উল্লেখ করার মত কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

অন্যদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্থানীয় ছাত্র নামের কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড তো কোন ভাবেই থামছে না। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে ৩১ জুলাই পুলিশের পরিদর্শক ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীর গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। এ ঘটনায় তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’-এর নামে  ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড’ ঘটে চলেছে বলে গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীরা দাবি করে আসছেন। পাশাপাশি কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন ও নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা কোন সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে কাঙ্খিত নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনাও আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে রাজা ফকির নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার পল্টন থানা হেফাজতে মাসুদ রানা নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। একই তারিখে রংপুরের গঙ্গাচড়া থানা হেফাজতে নির্যাতনের কারণে এক যুবকের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া মত প্রকাশের অধিকার সঙ্কুচিত করাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাত্রাতিরিক্ত অপব্যবহার, সাংবাদিক নিগ্রহ ও হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন ও হত্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময়কালে নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলা, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, নজরদারি ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘আসক’। কিন্তু এসব অপরাধ প্রতিবিধানে রাষ্ট্র তেমন সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেনি। ফলে সারাদেশেই অপরাধ প্রবণতার বিস্তৃতি ঘটছে।

সার্বিক দিক বিবেচনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের সকল সময়ের চেয়ে খারাপ পর্যায়েই মনে হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের ঘটনায় জনমনে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে; ঠিক তেমনিভাবে  চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিও মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি যশোরে টহল পুলিশের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা ফাটিয়ে ও ছুরিকাহত করে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে। অপরাধীরা যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তা এসব ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়। এখনকি খোদ রাজধানীতেও বেড়েছে অপরাধ পরিক্রমা। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজী ও  মাদক চোরাচালানসহ সকল অপরাধই সংঘঠিত হচ্ছে ঢাকা নগরীতে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর কোন কুলকিনারা করতে পারছে না। একশ্রেণির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও এসব অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।  শুধু তাই নয়, রাজধানীর অনেক এলাকা থেকে কিশোর অপরাধীদের সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য মিলেছে। কোথাও কোথাও প্রকাশ্যে মাদক সেবন চলছে। কোনো কোনো এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সহিংস ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীতে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, রাজধানীর মুগদা থানার মানিকনগর একটি গলি এখন কিশোর অপরাধীদের অভয়ারণ্য। অনেক সময় পুলিশের টহলগাড়ি অথবা মোটর সাইকেলের পাশে বসেই মাদক সেবন করতে দেখা যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। প্রকাশ্য দিবালোকেই রাজধানীর অনেক এলাকায় জুয়া খেলতে দেখা যায় শিশু-কিশোরদের। ভূক্তভোগীরা বলছেন, উঠতি বয়সী মাস্তানদের আনাগোনায় সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। কিশোর অপরাধীরাও এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে যতই দিন যাচ্ছে পরিস্থিতির ততই অবনতিই হচ্ছে। এসব অপরাধীদের সাথে এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যের  ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এরা প্রতিনিয়তই পথচারীদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেই ছিনতাইকারী সাজিয়ে হয়রানি করে পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানীর ডেমরা এলাকার এক কলেজ ছাত্রকে এভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে পুলিশ সদস্য। যা পরবর্তীতে প্রকাশ পেয়ে যায়।

ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই  রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। রাজধানীর পল্টন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের ঢাকা বিভাগের গোয়েন্দা শাখার হেলাল উদ্দিন। যা দেশের দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের নারী নিগ্রহের নারকীয় ঘটনা অতীতের সকল বর্বরতা ও নির্মমতাকে হার মানিয়েছে। যা বিবেকবান মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। স্বামীকে আটকে রেখে দুর্বৃত্তরা নববধুকে গণধর্ষণ করে নারকীয় তান্ডবে মেতে উঠেছে। তা শুধু দেশেই নয় বরং বহির্বিশ্বেও রীতিমত চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এতো বড় ঘটনার পরও সারাদেশে ধর্ষকর্মে ভাটা পড়েনি বরং তা চলছে অবলীলায়। এমনকি এর মধ্যেই সিলেটে আবারও নতুন করে ১৩ বছরের কিশোরী নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এমতাবস্থায় দেশের নারী সমাজ ও তাদের অভিভাবকরা এখন চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় তারা খুবই শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। কিন্তু আইশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থা ও বিভাগগুলো দেশের অপরাধ  প্রবণতা দমন সহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, নাগরিকরা রাষ্ট্রের সেবা পাওয়ার বিপরীতেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। আর এই আনুগত্য কখনোই নিঃশর্ত নয়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদাসীনতা মোটেই কাঙ্খিত ও গ্রহণযোগ্য নয়।

মূলত গণমানুষের কল্যাণকামীতার ধারণা থেকেই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তাই অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ সহ জনগণের সকল সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাব বিস্তারকারী সজ্ঞানুযায়ি রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইনানুগ বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী, নাগরিক, সমাজ, আমলাতন্ত্র, আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রয়োজনে জনমনে স্বস্তি ফিরে আনতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল কিছুকেই একযোগে ব্যবহার করতে হবে। কোন অজুহাতেই রাষ্ট্র এ দায় এড়াতে পাড়ে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি  করবে ততই মঙ্গল।

– সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা, কবি, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।