Home জাতীয় জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা’র নতুন শিক্ষাবর্ষের দরস শুরু

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা’র নতুন শিক্ষাবর্ষের দরস শুরু

আজ (৩০ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দেশের অন্যতম বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা’র নতুন শিক্ষাবর্ষ (১৪৩৯-৪০হিঃ)এর দরস শুরু হয়েছে। এতে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) জামাতে হাদীসশাস্ত্রের সর্বোচ্চ বিখ্যাত গ্রস্থ বুখারী শরীফের উদ্ভোধনী দরস দিয়েছেন জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সর্বজন শ্রদ্ধেয় শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। এ সময় জামিয়ার সুপ্রশস্ত প্রধান জামে মসজিদ, মসজিদের বারান্দা এবং সামনের চত্বর ছাত্রদের জমায়েতে ভরপুর হয়ে যায়।

উদ্ভোধনী দরস শুরু’র আগে জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আবু সালেহ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে জামিয়ার পরিচিতি ও মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এরপর সকাল পৌনে ৯টায় শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দরস শুরু করেন। এ সময় তিনি বুখারী শরীফের রচয়িতা ইমাম বুখারী (রাহ.)এর সংক্ষিপ্ত জীবনী, হাদীসের গুরুত্ব, বুখারী শরীফের বিশেষত্বের উপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি উলূমে নবুওয়াতের ফযীলত, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার উপরও বক্তব্য দেন

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দুনিয়ার সকল লোভলালসা ত্যাগ করে এখানে এসেছেন দ্বীনি ইলম অর্জন করার জন্য। সুতরাং নিয়্যাতকে খালেস করে এবং অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় নিয়ে নিজেদেরকে পড়ালেখায় আত্মনিয়োগ করবেন।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী তিনি ছাত্রদের প্রশংসা করে বলেন, আপনারা দ্বীনের বৃহৎ পরিসরে খেদমত করার মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েই দুনিয়াবী শিক্ষা ও খ্যাতির সম্ভাবনাকে পরিত্যাগ করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে সফলতা আসতে হলে অবশ্যই আপনাদেরকে পূর্ণ মনোযোগ ও কঠোর অধ্যাবসায়ের সাথে দরসে নিয়মিত হাজির থাকতে হবে এবং অন্য সময়ে কিতাব মুতালায়া করতে হবে।

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনামূলক বয়ানে আরো বলেন, জামিয়ার সকল উস্তাদ, কর্মকর্তাসহ যিম্মাদারগণের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে আপনাদেরকে চলতে হবে। আপনাদেরকে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা ও চলাফেরায় পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। দোকানপাট ও বাজারে ঘোরাফেরা করবেন না এবং কোথাও আড্ডা দিবেন না। এসব বিষয়ে জামিয়ার পক্ষ থেকে কঠোর তদারকী করা হবে। আমরা চাই, আপনারা এখানে এসেছেন সহীহ দ্বীনি ইলম অর্জন করতে এবং দ্বীনি বিষয়ে উম্মাহ’র পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে। আমরা আপনাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো ও সাহায্য করবো, ইনশাআল্লাহ।

তিনি ছাত্রদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারকে অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেন, জামিয়া ক্যাম্পাসে কারো কাছে কোন মোবাইল ফোন থাকতে পারবে না। তালেবে ইলমদের জন্য মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কারো কোন দ্বিমত নেই। ছাত্রদের জন্য নিজেদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে হলে নির্দিষ্ট সময়ে সহজ উপায়ে যাতে যোগাযোগ করা যায়, সেই পন্থা আমরা ঠিক করবো।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনারা অবশ্যই নিয়মিত জামাতে তাকবীরে ঊলার সাথে নামায আদায় করবেন, প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করবেন। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে গভীর রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়ে ফজরের আগে ১-২ ঘণ্টা কিতাব পড়বেন। চলাফেরার সবপর্যায়ে সুন্নাতের পাবন্দীর উপর গুরুত্ব দিয়ে চলবেন। এভাবে যদি মেহনত-সাধনা করে এবং জামিয়ার সকল আইন মেনে নিজেকে আদর্শ ও পরিশুদ্ধতা নিয়ে চলতে পারেন, ইনশাআল্লাহ আপনারা এখান থেকে শিক্ষাউত্তীর্ণ হয়ে কওম-মিল্লাতের যোগ্য রাহবার ও খাদেম হয়ে সম্মান-শ্রদ্ধার্জনের সাথে দ্বীনের বহুমুখী কাজ আঞ্জাম দিতে পারবেন।

দরসদান শেষে জামিয়ার সহকারী পরিচালক মাওলানা হাফেজ নাজমুল হাসান ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন। তিনি বলেন, মুসলমানদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করার জন্য এবং দ্বীনি বিষয়ে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য ইসলাম নির্মূলবাদি চক্র বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু করেছে। নতুন নতুন নানা ফেরকার উদ্ভব ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব ফেরকা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হলে যোগ্য আলেম হয়ে আপনাদেরকে গড়ে ওঠতে হবে। এই জন্য পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইলমে ফিক্বাহ’র মৌলিক জ্ঞানসহ অন্যান্য সকল বিষয়েও পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। ইলমে দুর্বলতা থেকে গেলে এটা উপকারীর চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ বিষয়ে সকলকে সযত্ন ও সতর্ক থাকতে হবে।

এরপর জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হাবীবুল্লাহ কাসেমী দীর্ঘ এক ঘণ্টার বেশী সময় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কুরআন-হাদীস ও ইসলামের মৌলিক ইলম হাসিল করার জন্য আমাদের আকাবির ও পূর্বসূরীগণ সীমাহীন মেহনত-পরিশ্রম ও সাধনা করে গেছেন। নানা বিভ্রান্তি, অপব্যাখ্যা চিনতে ও বুঝার যোগ্যতা অর্জন করে সহীহ ইলমে দ্বীন হাসিল করতে হলে অক্লান্ত মেহনত- পরিশ্রম ও সাধনা করতে হবে। আর ইলম অর্জনের পাশাপাশি এখন থেকেই নিজেদের আমল-আখলাকের মধ্যেও তার অনুশীলন শুরু করে দিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের নানামুখী সংকট ও দুর্দিনে কওম আপনাদের নেতৃত্বের অপেক্ষায় আছে। আর আপনারা যোগ্য আলেম রূপে গড়ে ওঠতে সক্ষম হলে তবেই কওমের পীপাসা নিবারণ করতে পারবেন।

এরপর জামিয়ার শিক্ষা পরিচালক মাওলানা মকবুল হোসাইন জামিয়া’র নিয়ম-নীতি ও আভ্যন্তরীন আইন-কানুন সম্পর্কে ছাত্রদেরকে অবহিত করে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, সকল শিক্ষার্থীদের জামিয়ার আভ্যন্তরীণ সকল আইন ও নিয়ম-শৃঙ্খলা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে কোন শিথিলতা করা যাবে না। যথারীতি দরসে সকল ছাত্রকে হাজির থাকতে হবে এবং দরসের বাইরে সময়ের উত্তম ব্যবহার করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে।

উদ্ভোধনী দরসে উপস্থিত ছিলেন, জামিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা আবুল হাসান, সহকারী পরিচালক হাফেজ নাজমুল হাসান, শিক্ষাপরিচালক মুফতী মকবুল হোসাইন, মুহাদ্দিস মাওলানা হিদায়াতুল্লাহ, মুফতী ইকবাল হোসাইন, মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা হাবীবুর রহমান, মাওলানা আবু সালেহ, মাওলানা মাসুদ আহমদ, মুফতী আমজাদ হোসাইন, মুফতী জাকির হোসাইন, মাওলানা হাসসান মাহমূদ, মুফতী আল-আমীন কাসেমী, মাওলানা মিনহাজ, মাওলানা ইয়াসীন, মাওলানা জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।