Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নতুন সমীক্ষা: ডিম কতটা উপকারি, কতটা ক্ষতিকর

নতুন সমীক্ষা: ডিম কতটা উপকারি, কতটা ক্ষতিকর

বিশেষজ্ঞরা নতুন করে ভাবতে বসেছেন, স্বাস্থ্যের জন্য ডিম ভাল নাকি মন্দ। কিন্তু বিজ্ঞান এ নিয়ে কোন নির্দিষ্ট ফলাফলে এখনো আসতে পারেনি। গত বছর, দুই লাখ পনের হাজার লোকের ওপর করা হার্ভার্ডের বিশাল এক সমীক্ষায় দেখা গেছিল যে, প্রতিদিন একটি ডিম করে খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ে না। 
 
কিন্তু এখন নতুন আরেকটি সমীক্ষা পুরো উলটো বলছে! পাঁচ লাখ মানুষের ওপর পরিচালিত এ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কোলেস্টেরল বোঝাই হলুদ কুসুমসহ দিনের ভেতরে ডিমের একটু অংশ খেলেও তা কার্ডিওভাসকুলারসহ  ক্যান্সারের মত রোগের হার বাড়িয়ে তুলে। 
 
পিএলওএস মেডিসিনে প্রকাশিত এ সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন ডিমের অতিরিক্ত অর্ধেক অংশ খাওয়ার জন্যও সামগ্রিকভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে ৭ শতাংশ। 
 
বিশেষজ্ঞরাই নতুন এ সমীক্ষার ফলাফলে  ধন্দে পড়ে গেছেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট রিয়াজ পাটেল বলেন, “কয়েক বছর গবেষণার পরেও ডিমের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে কোন নিশ্চিত উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিক গবেষণায় যেসব ফলাফল উঠে এসেছে তা রীতিমত পরস্পর বিরোধী। কেউ বলছেন দিনে পরিমিত পরিমাণে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, আবার কেউ বা এটিকে খারাপ হিসেবে নির্দেশ করছেন”।
 
তিনি বলেন, “সর্বশেষ এই সমীক্ষাটি বেশ যত্নের সাথে পরিচালিত হলেও এর মাধ্যমে বিতর্ক শেষ না হয়ে বরং আরেকটু জ্বলে উঠল”।; 

হার্ভার্ড টি.এইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি এন্ড নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াল্টার উইলেট বলেন, “মানুষকে তারা শুধু একবার ডিম খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছে, এত বছরে তাদের খাদ্যাভ্যাসে কোনরূপ বদল এসেছে কিনা সে নিয়ে সমীক্ষার আগে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় নি”। 
 
ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসগোর পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার আডা গারসিয়াও বলেন, “এই সমীক্ষাটির ফলাফল অতিরঞ্জিত”। 

কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির জন্য শুধু ডিমকে দায়ী করাটা রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভীষণ একপেশে ধারণা মনে হয়েছে তার কাছে । 

ডিমের গুণাগুণ 

একটি ডিম থেকে শুধু ৭৫ ক্যালরিই পাবেন না, ৭ গ্রাম উচ্চমানের প্রোটিন, ৫ গ্রাম ফ্যাট এবং ১.৬ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পাশাপাশি আয়রন, ভিটামিন, মিনারেল এবং আরও নানান রোগ-প্রতিরোধী পুষ্টি উপাদান মিলবে।
 
ডিম সাশ্রয়ী; সীমিত বাজেটের অনেক পরিবারে ডিম প্রোটিনের প্রধান উৎস। তাছাড়া হালের জনপ্রিয় লো-কার্ব কিটো ডায়েটেও ডিমের তৈরী খাবার বহুল পরিমাণে থাকে। 
 
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি অবশ্যই কুসুমে। বড় একটি ডিমের হলুদ কুসুম প্রায় ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল সরবরাহ করতে পারে।
 
কোলেস্টেরলকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার বোধহয় কিছু নেই। এটি আমাদের যকৃতের মাধ্যমেই তৈরী হয়,  শরীরের প্রতিটি কোষে থাকে এবং বিভিন্ন হরমোন, ভিটামিন ডি, হজমের উপাদান প্রভৃতির সংশ্লেষে ব্যবহৃত হয়। কখনো কারো দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলেই বিপদ। এটি রক্তনালীগুলোতে ব্লক সৃষ্টি করতে পারে, যা একসময় কার্ডিওভাসকুলার রোগে রূপ নেয়। 
 
পুষ্টি নির্দেশিকাগুলো দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের সীমা ৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে রাখার পরামর্শ দেয়। তবে সমীক্ষা বলছে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহনের মাত্রা প্রতিদিনের গৃহীত ক্যালরির ১০ শতাংশেরও কম হওয়া উচিত। 

এভাবে ক্যালরি মেপে মেপে ক’জন খায় বলুন! উইলেট তাই পরামর্শ দেন, খাদ্যের সামগ্রিক পুষ্টিগুণ বিচার করে তা মেন্যুতে যোগ করতে। 

আরও পড়তে পারেন-

মাছের কথাই ধরুন না! মাছের মধ্যে কোলেস্টেরল রয়েছে তবে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও সরবরাহ করে মাছ ।
 
আর শুধু ডিমকে একা কেন টেনে আনা! ডিমের চাইতে অনেক বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে মাখন, দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার আর লাল মাংসে। এরা রক্তে এলডিএলের (লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। এলডিএল রক্তের ‘মন্দ’ কোলেস্টেরল হিসেবে বেশি পরিচিত। 
 
ডিমের পরিবর্তে যদি কেউ ডোনাট বা রিফাইন্ড সুগারযুক্ত অন্য কোন মিষ্টান্ন বেছে নেয় তাহলে সেটি হবে আরও খারাপ সিদ্ধান্ত। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি প্রোটিনের উৎস হিসেবে ওটস কিংবা বাদামের মত বিকল্প উৎস গ্রহণ করতে চায় তাহলে সেটি খুবই দারুণ সিদ্ধান্ত হবে বলে মন্তব্য করেন উইলেট। 

তিনি আরও বলেন, “যারা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ গ্রহণ করছেন তাদের জন্য ডিম কম গ্রহণ করাই সমীচীন। পুরনো সমীক্ষাগুলোতে সপ্তাহে দুটোর বেশি ডিম না খাওয়ার যে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, সেটি মেনে চলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলেই আমার কাছে মনে হয়”। 

যাদের টাইপ-২ ডায়বেটিস রয়েছে, তাদেরকেও হার্ভার্ডের সমীক্ষাটিতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্তের তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। 

শুধু সাদা অংশ গ্রহণে কি উপকার মিলবে? 

ডিমের কুসুমকে কি ডিমের সাদা অংশের সাথে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে? নতুন পিএলওএস সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, একটি সম্পূর্ণ ডিমের অর্ধাংশ বাদ দিয়ে বরং সমপরিমাণ শুধু সাদা অংশ গ্রহণ করলে কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩ শতাংশ কমে।
 
পাটেল জানান, কুসুম বাদ দিয়ে আসলে গবেষনাগুলো পরিচালিত হয় নি। কারণ এখনকার প্রজন্মের কাছে কুসুম ছাড়া ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার তেমন চর্চা গড়ে ওঠেনি। ডিম পুরোপুরি বাদ দিয়ে বাদাম এবং উদ্ভিজ্জ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করলেই সবচেয়ে উত্তম”। [সিএনএন হেলথ অবলম্বনে, টিবিএস এর সৌজন্যে]

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।