Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পেট জ্বালা কমায় কামরাঙা ফল ও পাতার রস

পেট জ্বালা কমায় কামরাঙা ফল ও পাতার রস

স্কুলের ছুটির পর বেরিয়েই গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা করিমচাচার ভ্যানের দিকে রোজ পা চলে যায় ফতিমার। করিমচাচা নুন-লঙ্কা দিয়ে টক-ঝাল কামরাঙা-মাখা বিক্রি করে রোজ। করিমচাচার থেকে একঠোঙা কামরাঙা-মাখা কিনে বাড়ির পথে পা বাড়ায় সে। রোজ কামরাঙা খেলে পেটব্যথা করবে, আম্মির কড়া বকুনির দাওয়াইও ফতিমাকে কামরাঙা কেনা থেকে আটকে রাখতে পারে না।

স্কুল বা কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা চাচার থেকে আম্মিকে লুকিয়ে কামরাঙা ফল কিনে খাওয়ার স্মৃতি আপনাদের অনেকের মনেই জাজ্জ্বল্যমান। কামরাঙা দামে সস্তা, উপরন্তু ভাল করে মাখলে টক এই ফলটি খেতে মুখরোচক। শুধু তাই নয়, কামরাঙা ফলের উপকারিতা প্রচুর। আজ আমরা কামরাঙার গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করব।

কেন খাবেন কামরাঙা ফল 

কামরাঙা কাটলে তাকে দেখতে অনেকটা তারার মতো লাগে। তাই ইংরাজিতে একে ‘স্টারফ্রুট’ বলে। কামরাঙা কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে, পাকলে এতে লালচে-গোলাপি বা হলদেটে আভা দেখতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরক্ষীয় জলবায়ুর দেশগুলিতে, ভারত, বাংলাদেশে এই ফল প্রচুর পরিমাণে হয়। কামরাঙা কাঁচা অবস্থায় মেখে খাওয়া ছাড়াও এই ফল দিয়ে আঁচার, মোরব্বা, জেলি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

কামরাঙা টক ফল, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়া ভিটামিন এ, বি৫, ফোলেটের সঙ্গে-সঙ্গে কামরাঙায় সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার এবং পটাশিয়াম থাকে। কোয়েরসেটিন, গেলিক অ্যাসিড, প্রোঅ্যান্থোসায়ানিন, এপিক্যাটেকিনের মতো একাধিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এই ফল শরীরের নানা রোগকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়তে পারেন-

ভিটামিন সি-এ ভরপুর কামরাঙা ফল

দিনে মাত্র একটি কামরাঙা খেলেই কিন্তু আপনি আপনার প্রাত্যহিক চাহিদার ৫২-৫৭% ভিটামিন সি গ্রহণ করে ফেলতে পারেন। ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সাধারণ সর্দিকাশি, ইনফেকশনকে দূরে রাখে। শরীর থেকে টক্সিন দূর করতেও ভিটামিন সি-র জুড়ি নেই। সুন্দর উজ্জ্বল ত্বক ও চুলের জন্য ভিটামিন সি অপরিহার্য। এছাড়া শরীরে ক্যালশিয়াম ও আয়রনের শোষণে ভিটামিন সি সাহায্য করে। ফলে যারা হাড়ের অসুখ বা অ্যানিমিয়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের পক্ষে কামরাঙা ওষুধের মতো কাজ করে।

কোলেস্টেরলের সমস্যায় কামরাঙা ফল

বর্তমানে ফাস্টফুড, ভাজাভুজি বা মোড়কবন্দি রেডি-টু-ইট খাবারের অভ্যেসের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোলেস্টেরলের বিপদ। কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে দূরে রাখতে ভরসা করতে পারেন কামরাঙায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা শরীর থেকে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল বের করে দেয়। ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করতে কামরাঙা কার্যকরী। কামরাঙায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, ফাইটোস্টেরল, স্যাপোনিন এবং ফাইটোকেমিক্যাল শরীরে জমে থাকা ফ্যাটকে ভেঙে শরীরে বাড়তি এনার্জির যোগান দেয় বাড়তি কোলেস্টেরল জমতে দেয় না।

ক্যানসার প্রতিহত করে

ডাক্তাররা আশঙ্কা করছেন, আগামী কয়েকবছরের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ক্যানসার মহামারির আকার ধারণ করবে। এই ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের কামরাঙার মতো প্রাকৃতিক খাদ্যোপাদানের দিকেই নজর রাখতে হবে। সমীক্ষা অনুযায়ী, পাকা কামরাঙায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যানসার প্রতিহত করে। এমনকী, কামরাঙার খোসাতেও এই ক্যানসার প্রতিরোধকারী উপাদান বর্তমান। এতে উপস্থিত ফাইবার ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায়।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

কামরাঙায় থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ফ্রুট ফাইবার কোনও কিছু খাওয়ার পরে গ্লুকোজের নিঃসরণ প্রতিহত করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ও ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাধারণত ডায়াবেটিস থাকলে অনেক ফল খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তাই যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের রোজকার খাদ্যতালিকায় অনায়াসে একটি করে কামরাঙা রাখতে পারেন।

রক্তচাপ ও হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে খান কামরাঙা

রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার আমাদের জীবনে অভিশাপের মতো। রক্তচাপের ফলে অনেককিছু খাওয়া যেমন বন্ধ হয়ে যায়, তেমনই হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কামরাঙা গাছের পাতা রক্তবাহের সঙ্কোচন কমায় এবং শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তচাপের সম্ভাবনা কমে। কামরাঙায় থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মতো খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে থাকা পলিফেনল হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়।

হজমক্ষমতা বাড়ায়

আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে কামরাঙা খেতে পারেন। এতে থাকা ফাইবার হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে, সেইসঙ্গে শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিনের যোগান দেয়। পেটে ক্ষতিকারক পদার্থ ও ব্যাকটেরিয়া থাকার ফলে অনেকসময় পেটে জ্বালা, প্রদাহ হয়। কামরাঙা পাতার রস এই প্রদাহ কমায় ও ব্যাকটেরিয়া, ক্ষতিকর পদার্থকে দূর করে। এছাড়া যেহেতু এই ফলের প্রায় ৮০% জল, ফলে গরমকালে কামরাঙা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। কামরাঙায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ব্যাকটেরিয়াজনিত আলসারকে দূরে রাখে।

ওজন কমাতে কাজে লাগান কামরাঙা

ওজন কমাতে চান যারা, তাঁদের খাদ্যতালিকায় এই ফলটিকে রাখতেই হবে। কামরাঙায় ক্যালোরি থাকে কম, তায় ফাইবারে পরিপূর্ণ। ফলে এই ফল মেটাবলিজম বাড়িয়ে দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে, শরীর থেকে কোলেস্টেরল ও ফ্যাটজাতীয় পদার্থ বের করে, এবং কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা কমায়। নিয়ম করে কামরাঙা ফল খেলে তা আপনার শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে চটজলদি আপনাকে স্লিম অ্যান্ড ট্রিম করে তুলবে।

চোখের সমস্যায়

কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করার ফলে আজকাল চোখের সমস্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কামরাঙা খান। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম চোখ জ্বালা, ব্যথা কমায়। এছাড়া চোখ ফোলার সমস্যাতে কামরাঙায় থাকা ভিটামিন বি৬ দারুণ কাজে লাগে। আপনার চোখের অপটিক নার্ভকে রিল্যাক্স করতেও কামরাঙার গুণ অনস্বীকার্য।

সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য

আজ্ঞে হ্যাঁ। নিয়ম করে দিনে একটি মোটে কামরাঙা খেলেই আপনি কিন্তু সুন্দর ত্বক ও চুলের অধিকারী হতে পারেন। কারণ এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি ও সি ত্বক ও চুলের কোষকে সারিয়ে তোলে এবং উজ্জ্বল ত্বক, চুল পেতে সাহায্য করে, বয়সজনিত ছাপ দূর করে। আপনার ত্বকে ব্রণ ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের সমস্যা থাকলেও কামরাঙা খেতে পারেন।

কামরাঙা খেলে সতর্ক থাকতে ভুলবেন না

তবে কামরাঙা অনেক সমস্যায় অনেক উপকার দিলেও যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে কামরাঙা খাওয়া কিন্তু বিষ। কারণ এতে থাকা অক্সালেট কিডনিকে আরও ক্ষতগ্রস্ত করে। এছাড়া কামরাঙা অনেকসময় শরীরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে, যার ফলে খিঁচুনি থেকে শুরু করে মৃত্যুও হতে পারে। ফলে শারীরিক কোনওরকম অসুবিধা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কামরাঙা খান। আর যারা নির্দিষ্ট কোনও রোগের ওষুধ নিয়ম করে খান, তাঁদের ক্ষেত্রে কামরাঙা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।