Home ইসলাম শান্তি, শৃঙ্খলা ও ত্যাগের নাম ইসলাম

শান্তি, শৃঙ্খলা ও ত্যাগের নাম ইসলাম

।। আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

[রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, উত্তরা জামেয়াতুন নূর আল-কাসেমিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতীব আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) জুমায় মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে বয়ানের হুবহু অনুলিপি উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল -সম্পাদক]

হামদ ও সালাতের পর-

الم، ذلك الكتاب لا ريب فيه، هدى للمتقين. انما يخشى الله من عباده العلماء.(القرآن)

الصدقة تطفئ البلٱء (الحديث)

ইসলাম শান্তির ধর্মে। মুসলিম সম্প্রদায় শান্তিকামি জাতি। আর তার মাঝে যারা ধর্ম পরায়ণ, তারা হয়ে থাকেন সহনশীল। এই যে এখন কোভিড-১৯ এর প্রকোপে সারাদেশ লকডাউনে বিচ্ছিন্ন। দেশে জারি হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মানার আইন, মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা এসেছে। প্রত্যেককে সামাজিক দুরত্ব মানার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ পরিবহন খাতে ব্যর্থ, রাস্তাঘাটে ব্যর্থ, বাজারে ব্যর্থ, সব জায়য়গায় ব্যর্থ। এই আইনের কার্যকারিতা প্রকাশ পাচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ঘর মসজিদে। মসজিদে এই আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ হচ্ছে এবং তা ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও হচ্ছে। কারণ, ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা হয় সহনশীল, শান্ত। তারা কখনো সংঘাত চায় না, তারা শান্তি চায়। তারা নিয়ম-কানুন মেনে চলতে অভ্যস্ত।

রোজা: প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত থাকাবস্থায় হরেক রকম খাবার সামনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও না খেয়ে আজানের অপেক্ষা করার নাম ত্যাগ। এছাড়া খেতে কোন বাধা আছে? কিন্তু তারপরও তারা আজানের জন্য অপেক্ষা করেন। কারণ, ইসলাম ত্যাগের শিক্ষা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় আজান হয়ে যায়, কিন্তু মুসলমান তার মহল্লার মসজিদে আজান হওয়া পর্যন্ত খাবার মুখে উঠায় না।

যাকাত: নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে কে চায় কোন লাভ ছাড়া সম্পদ ব্যয় করতে? বাংলাদেশে ২০কোটি মুসলমানের মাঝে শতাধিক লোক রয়েছেন, যারা হাজার কোটি টাকার মালিক। সহস্রাধিক লোক আছেন, যারা শত কোটি টাকার মালিক আছেন। প্রত্যেকেই যাকাত আদায় করেন, আলহামদুলিল্লাহ!

যার কাছে এক হাজার কোটি টাকা রয়েছে, তার যাকাত আসে পঁচিশ কোটি টাকা। আর যার কাছে একশত কোটি টাকা আছে তার যাকাত আসে আড়াই কোটি টাকা। এই যে নিজের কামাই করা এতোগুলো টাকা আল্লাহর রাস্তায় যাকাতের ফান্ডে খরচ করা কি ত্যাগ নয়?

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে বলেন যে, তোমরা যে টাকা কামাই করো তা তোমাদের নিজস্ব সম্পত্তি নয়, বরং আমি তোমাদের সৃষ্টি করে তোমাদের কে সে সম্পদের মালিক বানিয়ে দিয়েছি। তোমাদের পর তোমাদের সেই সম্পত্তির মালিক তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বানিয়ে দেয়া হবে। ومن ما رزقناهم ينفقون (القرآن) ‘তোমরা সেখান থেকে খরচ করো যা আমি তোমাদের দান করেছি। ‘ (আল-বাক্বারাহ্)।

সাদাকাহ: রাসূলে কারীম সা. হাদীসে পাকে ইরশাদ করেন- الصدقة تطفئ البلٱء ‘দান-সাদাকাহ্ বালা-মুসিবত দূর করে’।

দান-সাদাকাহ্ জীবনকে বরকতময় করে। এই লকডাউনে অনেক পরিবার এমন আছে যারা গরীব নয় তবে নিম্নবিত্ত। লকডাউনের আগে খেয়ে-পরে চলতে পারতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন ঘরে আগুন জ্বলে না, ঈদে নতুন জামা কেনার টাকা নেই, সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর মত কোন অবস্থা নেই।

আর কখনও কারো কাছে হাত পাতার প্রয়োজন হয়নি, তা-ই আত্মমর্যাদার কারণে কারো কাছে খুলে বলেও না। আমাদের মাঝে যারা বিত্তবান আছেন, বৎসরে আড়াই/তিন কোটি টাকা যাকাত আসে, তারা একটু কষ্ট করে সাদাকাহ্ সহ পাঁচ কোটি, আর যাদের যাকাত আসে সাত/আট কোটি তারা সাদাকাহ্ মিলিয়ে দশ কোটি করে ঐ সমস্ত ফ্যামিলিগুলোর খোঁজ নিয়ে সাহায্য করার আহ্বান জানাচ্ছি।

এখন আপনার সামান্য নেক দৃষ্টিতে ঘুরে যেতে পারে একটা ফ্যামিলির ভাগ্যের চাকা।
তাই এবার যেহেতু বালা-মুসিবতের সময় আমরা সাদাকাহ্ দিয়ে একটু দুস্থদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই, ইনশাআল্লাহ আপনাদের এই দান-সাদাকার বরকতে আল্লাহ আমাদের এই পুণ্যভূমি থেকে মহামারী দূর করে দিবেন। আমাদেরকে বালা-মুসিবত থেকে মুক্ত করবেন।

উলামায়ে কেরাম: আমরা উলামায়ে উম্মতরা হলাম নবীর ওয়ারিস। উলামায়ে কেরামগণ নবীর ওয়ারিস। ওয়ারিস সূত্রে আমাদের দায়িত্ব হলো অন্যায়-অসঙ্গতি তুলে ধরা। বাতিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বাতিলের মোকাবিলা করা।
আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন: إنما يخشى الله من عباده العلماء. (الفاطر)
‘বান্দাদের মধ্য থেকে আল্লাহকে বেশি ভয় করেন উলামায়ে কেরাম’। সুতরাং ইসলামের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ষড়যন্ত্র হলেই উলামায়ে উম্মতের দায়িত্ব হলো স্পষ্টভাবে তা প্রতিহত করা।

আমি উত্তরার এই মসজিদে এসেছি ২০০১ সনে। এই বিশাল মসজিদটি তখন ১৫ বাই ৩০ ফিটের একটা ছাপড়া ঘর। তখনকার অনেকেই এখন নেই, আর এখনকার অনেকেই তখন ছিলেন না।

সেই ২০০২-এর দিকে বাংলাদেশে ‘জমিয়তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আবির্ভাব হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ‘বাংলা ভাই’। আরবী পোশাক (টুপি, দাড়ি, জুব্বা, পাগড়ী) পড়া বাংলা ভাই কোর্ট চত্বরে রিফিল বোমা ফাটাইতেন। এছাড়াও জিহাদের নামে দেশে বিভিন্ন অরাজকতা চালাতেন। জিহাদ শব্দটার অপব্যবহার করতেন। তখন এই ছাপড়া মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছি যে, “সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে রিফিল বোম্ব ব্লাস্ট করলেই জিহাদ হয়ে যায় না”।

তখন মুসল্লী দোস্ত-আহবাব অনেকেই বলেছিলেন যে ‘হুজুর! এভাবে বললে এরা তো আপনাকে টার্গেট করবে’। আমি বললাম যে, ‘আমি মরে গেলেও তো হক্ব থেকে চুল পরিমাণ নড়বো না’। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুরুব্বী এই জুম্মায়ও মসজিদে উপস্থিত আছেন।

আমরা উলামায়ে কেরাম। আমাদেরকে হক্ব কে হক্ব বলতে হবে, বাতিলকে বাতিল বলতে হবে। আর নয়তো কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। একদিক থেকে জিহ্বা কর্তন করা শুরু হবে, অপরদিকে যাওয়ার আগেই এইদিক আবার আগের মত মিলে যাবে। আবার কাটবে!

তাই আগেও হক্ব বলে আসছি, হক্বের সাথে চলে আসছি। এখনো বলছি। দোয়া করবেন, যেনো আমৃত্যু হক্বের সাথেই থাকতে পারি! আমিন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন।

[ঢাকা, উত্তরা, বাইতুন নূর জামে মসজিদ। ২৩ এপ্রিল, ২০২১ খ্রীস্টাব্দ]

অনুলিখনে- মাহমূদ হাসান নাহিয়ান

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।