বর্তমানে বিশ্ব উপভোগ করছে প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ। আর এই প্রযুক্তির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রযুক্তি হচ্ছে স্মার্টফোন। এই স্মার্টফোন এখন সাধ্যের মধ্যে অনেকেরই। আট থেকে আশি সকলেই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বুঁদ । বহুবিধ উপকারিতা আছে সন্দেহ নেই । তবে, অতিরিক্ত আসক্তি সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ভার্চুয়াল জগতে অবারিত সুযোগ নিসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। কারণ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বড়দের তুলনায় শিশুদের রেডিয়েশন শোষণ শতকরা ৬০ ভাগ বেশি। আর এই রেডিয়েশন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ।
সম্প্রতি সুইডেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের বয়স ২০ বছরের কম অন্যদের তুলনায় ব্রেন ক্যান্সারের আশংকা ৫ গুণ বেশি তাদের। এছাড়াও অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তি অ্যটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি নামক মানসিক রোগের সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্টের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্টোল এন্ড প্রিভেনশানের সমীক্ষানুযায়ী ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি প্রায় ৬০ লক্ষ শিশু এই এডিএইচডি নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত ।
এই ধরনের শিশুদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন তারা আত্মকেন্দ্রিক, অসহনশীল ও অসামাজিক আচরণ করে। বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে চায় না। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- মাথা ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্টোকসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখিও হয়ে পড়তে পারে। ভার্চুয়ালের সাথে বাস্তবতার মিল ঘটাতে না পেরে এক সময় সামাজিক জীবনেও ক্রমশ একাকী হয়ে পড়ে তারা। জীবনের গুণগত মান নামতে থাকে। এক সময় সমাজ জীবন থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুরা।
অতিরিক্ত বা হাইপার ইন্টারনেট আসক্তির পিছনে অভিভাবকদের অসচেতনমূলক মানসিকতা অনেকটাই দায়ি। অনেক সময় সন্তানকে শান্ত রাখতে বা নিরাপত্তার খাতিরে গৃহবন্দী রাখতে ব্যস্ত পিতা মাতারা বাচ্চাদের হাতে তুলে দেন মুঠোফোন বা অন্য কোন মাধ্যম, যা পরবর্তী কালে শিশু-কিশোরদের জন্য বড় রকমের ক্ষতির কারণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
সুতরাং আপনার শিশুকে সময় দিন। তার সাথে বন্ধুর মত মিশুন। ই_মাধ্যম থেকে সাধ্যমত দূরে রাখুন। প্রতিদিন সময় করে তার সাথে গল্প করুন। হালকা খেলাধূলার সুযোগ করে দিন। নিয়ম করে দৈনিক কিছু সময় তার সাথে নৈতিক ও আদর্শিক বিষয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা করুন।