Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ‘রাখে আল্লাহ মারে কে?’: জুমার বয়ানে আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান কাসেমী

‘রাখে আল্লাহ মারে কে?’: জুমার বয়ানে আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান কাসেমী

[রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া-উত্তরা, ঢাকা’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদদের খতীব আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান শুক্রবার (২ জুলাই) জুমায় মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে বয়ানের হুবহু অনুলিপি উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল -সম্পাদক]

বয়ানের শুরুতে হামদ-সালাতের পর আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আনকাবুত-এর ৬৪নং আয়াত তিলাওয়াত করেন-

قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين

অর্থাৎ- হে নবী! আপনি বলে দিন, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ; সবই ঐ সত্ত্বার জন্য, যিনি এই নশ্বর ধরাধামের প্রতিপালক।

আল্লাহ তায়ালা এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, মানুষ বসবাসের উপযোগী করে একে প্রস্তুত করেছেন। মানুষের জন্য পরীক্ষাগার রূপে একে তৈরী করেছেন। তারপর মানুষকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন।

অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের মাঝে একটি শ্রেণিকে নিয়ামত দানে ধন্য করেছেন। অঢেল ধন-সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। স্বচ্ছলতা দান করেছেন। ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী বানিয়েছেন।

সেই মানুষ যখন ধন-দৌলতের মাধ্যমে প্রাচুর্যপূর্ণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যেতে শুরু করে, এসব নেয়ামতরাজীকে নিজস্ব উদ্ভাবন/সৃষ্টি ভাবতে শুরু করে, এগুলােতে অন্য কারাে হক্ব সে স্বীকার করতে চায় না, এমনকি আল্লাহ তায়ালারও হক্ব আছে বলে মনে করে না, তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের সে নেয়ামতপ্রাপ্ত শ্রেণিকে প্রতিকূলতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। এই প্রতিকূল পরিবেশে এসে উক্ত শ্রেণিটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়-

প্রথম ভাগ: এসব ধন-দৌলত ও ঐশ্বর্যকে সম্পূর্ণই তার নিজস্ব সৃষ্টি জ্ঞান করে। নিজেকে এসবের একচ্ছত্র অধিপতি মনে করে। এই প্রতিকূল পরিবেশকে তার এই অর্জন বা সৃষ্টির পক্ষে বাধা মনে করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত পরীক্ষা মূলক প্রতিকূলতার বিপরীতে দম্ভের সাথে ‘মােকাবিলা’ শব্দ ব্যবহারের মত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে। আল্লাহর নির্দেশে পরিচালিত মাখলুকের সাথে যুদ্ধ ঘােষণা করে। এরা খুবই উগ্র এবং ডাবল স্টান্ডার্ডবাজ হয়।

দ্বিতীয় ভাগ: এসবের বিপরীতে এই পরীক্ষামূলক প্রতিকূলতায় সে নিরাশ হয়ে যায়। সবকিছু থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। সব ভুলে সেই ক্ষুদ্রাকৃতির মাখলুককেই উপাস্য মেনে নেয়। নৈরাশ্য তাকে তুমুলভাবে পেয়ে বসে এবং একসময় এদের মন মগজ নাস্তিকতায় চরমভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয়ভাগ: এরা এসবকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত জ্ঞান করে এবং বিপরীতে এই পরীক্ষামূলক প্রতিকূল পরিবেশকেও তারা তাক্বদীর হিসেবে মেনে নেয়। ভালাে-মন্দ সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে মুতাওয়াজ্জুহ থাকে। আল্লাহকে এই প্রতিকূল পরিবেশের দাতা মনে করে। যেমনিভাবে তারা তাদের পূর্ববর্তী ঐশ্বর্যের দাতা আল্লাহকেই মনে করতাে। এবং এর প্রতিকার তারা কেবল আল্লাহর কাছেই তালাশ করে। এরাই হলাে প্রকৃত মধ্যমপন্থী বা মুমিন বান্দা।

এদের ব্যপারেই কুরআনে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- “ومن يتوكل على الله فهو حسبه” অর্থাৎ- যে ব্যক্তি সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। (সূরা তালাক -২)।

কুরআনে কারীমের অপর এক আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العلمين অর্থাৎ- হে নবী! আপনি বলে দিন; আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ; সবই ঐ সত্ত্বার জন্য, যিনি এই নশ্বর ধরাধামের প্রতিপালক।

এখানে ‘সালাত’ শব্দ দ্বারা ঐ সকল ইবাদাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে যেগুলাে কায়িক বা শারীরীক পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। যেমন- নামায, রােযা ইত্যাদি। আর ‘নুসুক’ দ্বারা ঐসমস্ত ইবাদাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেগুলাে অর্থের সাথে সম্পর্কিত। অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে যে সমস্ত ইবাদাত সম্পাদিত হয়। যথা- যাকাত, কুরবানী ইত্যাদি। আর হজ্ব হলাে একটি ফুল প্যাকেজ ইবাদাত, যেটি সম্পাদন করতে অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি শারীরীক মানসিক, সর্বদিক থেকে সমান পরিশ্রমের প্রয়ােজন পড়ে।

কেউ পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে প্রথম সারিতে আদায় করেন। জামাতের সাথে প্রথম কাতারে নামায আদায়কারী হিসেবে তার বেশ প্রসিদ্ধি রয়েছে। রমযানের ত্রিশ রােযা সহ বছরের অধিকাংশ দিনে তিনি রােযা রাখেন, সেই কথাও অজানা নয়। কুরবানির সময় সামর্থানুযায়ী তিনি কুরবানী দেন। কুরবানির পর তার যবেহকৃত পশুর ফিনকি থেকে তীব্রবেগে রক্ত নির্গত হয়। কুরবানির গােশতের একটি অংশ গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে হিসেব করে যাকাত আদায় করেন। সামর্থ হলে হজব্রত পালন করেন। এসব নিয়ে পাড়া-পড়শিরাও অল্পবিস্তর আলােচনা করে। সামনে পেছনে কিছু আলােচনা-সমালােচনা কানে আসে।

আরও পড়তে পারেন-

এসবে যদি ইবাদতকারী ব্যক্তি তৃপ্তি লাভ করেন, তার ইবাদাতের বিপরীতে এসবকেই তিনি তার জন্য সর্বোচ্চ অর্জন মনে করেন। মূলত তার ইবাদাত যদি এসব সুনাম ও খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যেই মুখ্য হয়ে থাকে, তবে তার ষােলআনাই বৃথা!’

কেননা যেমনিভাবে কুরবানির রক্ত-মাংস এগুলাে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না, ঠিক তেমনিভাবে শারিরিক বা আর্থিক অন্য সকল ইবাদাতের ক্ষেত্রেও পরিশ্রম বা অর্থ আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। পৌঁছে হল শুধুমাত্র তাক্বওয়া!

এ ব্যপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- لن ينال الله لحومها ولادماءها ولاكن يناله التقوى منكم، القرآن
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কুরবানী করে তার কুরবানির পশুর ফিনকি থেকেও রক্ত ছুটে। আর যে ব্যক্তি লােক দেখানাের জন্য কুরবানী করে, তার কুরবানির পশুর ফিনকি থেকেও রক্ত তীব্র বেগে বের হয়। পার্থক্য হল এতটুকু- একজনেরটা মাটি স্পর্শ করার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে, অপরজনেরটা পৌঁছে না।

পক্ষান্তরে ইবাদতকারী ব্যক্তির ভূমিকা যদি এমন হয় যে, “আমার ইবাদাত যদি আল্লাহর নিকট গ্রহণযােগ্য হয়, আল্লাহ যদি আমার ইবাদাত কবুল করে নেন, তবে তােমাদের এই সমালােচনায় আমার কিছু যায়-আসে না। আর যদি আল্লাহর নিকট আমার ইবাদাত পছন্দনীয় না হয়, তবে তােমাদের এই প্রসংশাও আমার কোন কাজে আসবে না”। তবেই তিনি সফল, তার ইবাদাত সার্থক। তার জন্যই হাশরের ময়দানে রয়েছে কল্পনাতীত পুরষ্কার! কেয়ামতের দিন তার সামনে সু-সজ্জিত জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। জান্নাতের সকল দরজাতেই হুর-গিলমানরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবে।

কুরআনে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে হুর-গিলমানরা জান্নাতি বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকবে- سلام عليكم طبتم فادخلوها خالدين
(আপনাদের জন্য শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ, চিরদিনের জন্য চির ঐশ্বর্যের জান্নাতে প্রবেশ করুন। (সূরা যুমার)।

আর যদি ইবাদাত ‘লিল্লাহিয়্যাতের’ জন্য না হয়, তার ব্যপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘােষণা- هو في النار (সে জাহান্নামী)।

ওহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলমানরা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন একজন যােদ্ধা খুবই বীরদর্পে লড়াই করে যাচ্ছিলেন। এমন বীরদর্পে তিনি লড়ছিলেন যে, অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) সামনে-পিছনে ডানে-বাঁয়ে কেবল তাকেই দেখতে পাচ্ছিলেন। সে যুদ্ধে কাফিরদের আক্রমণের তীব্রতায় এক পর্যায়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাঁর দান্দান মােবারক শহীদ হয়। শিরণাস্ত্র ভেঙ্গে মাথায় আঘাত পান। মুজাহিদদের মাঝে তাঁর শাহাদাতের ‘ভুয়া’ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাহাবায়ে কেরামের এক জামাত হতবিহ্বল হয়ে যুদ্ধ ছেড়ে দেয়ার মনস্থীর করলেন। সেই কঠিন মুহূর্তে সেই বীর যােদ্ধা ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার সাথে পরিস্থিতি মােকাবিলা করেন। একাই যুদ্ধের মােড় পাল্টে দেন।

যুদ্ধ শেষে সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) রাসূলের (সা.) সাথে আলােচনাকালে তার কথা বলছিলেন যে, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আমাদের সামনে-পিছনে ডানে-বায়ে কেবল তার তরবারীর ঝলকানীই দেখতে পাচ্ছিলাম।

রাসূল (সা.) বলে উঠলেন, “সে জাহান্নামী”! সাহাবায়ে কেরাম আশ্চর্য হয়ে ছুটলেন তার খোঁজে। তাকে এক স্থানে আঘাতে জর্জরিত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাতরানাে অবস্থায় পাওয়া গেলাে। তাকে তার ব্যপারে জিজ্ঞেস করা হলে সে বললাে, “তােমরা আমার ব্যপারে ধােকায় পড়াে না, আমি মুসলিম নই। আমি মুনাফিক! তবে আমার গােত্রের অধিকাংশ লােক ইসলাম গ্রহণ করে মাুহাম্মদের (সা.) সাথে যুদ্ধে এসেছে। আমাদের গােত্রের শত বছরের ইতিহাসে আমরা কোনদিন পরাজয় বরণ করিনি। আমরা এক অপরাজিত অপ্রতিরােধ্য গােত্র ছিলাম। আমার গােত্রের লােক যুদ্ধে পরাজয় বরণ করবে এটা আমি মানতে পারিনি। তাই আমি তােমাদের সাথে যুদ্ধে শরীক হয়েছিলাম। আমি ইসলামের জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হইনি, বরং স্বীয় গোত্রের সম্মান রক্ষার্থে আমার এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ!”

এই বলে সে কষ্টের অতিসহ্যে কোমর থেকে খঞ্জর বের করে নিজের বুকে নিজেই চালিয়ে দিলাে। আত্ম-আঘাতের মাধ্যমে সে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করলাে । “আত্মহত্যার মাধ্যমে চির জাহান্নামী হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলাে”। রাসূল (সা. )এর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হলাে।

(অন্য সব মৃত্যুতে জাহান্নাম থেকে বাঁচার সুযােগ থাকলেও আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির কোন সুযােগ নেই জাহান্নাম থেকে বাঁচার। কারণ, সে তাে তার কাছে মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আমানত স্বরূপ গচ্ছিত জানটাই দিয়ে দিলাে। যদ্দরূণ তার আর তওবা করার সুযােগ রইলাে না!)

তাই আমাদেরকে আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রাখতে হবে । এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে ‘আল্লাহ তায়ালা নিতে চাইলে কেউ রাখতে পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালা রাখতে চাইলে কারাে সাধ্য নেই যে নিবে! এক কথায় “রাখে আল্লাহ মারে কে? মারে আল্লাহ রাখে কে?”

আমাদের চোখের সামনেই আমরা দেখেছি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিদের একজন, হাজার কোটি টাকার মালিক। করােনা পজিটিভ হওয়ার পর বিশ্বের নামী-দামী চিকিৎসকদের তার বাসায় ডেকে নিয়ে বাের্ড বসিয়ে বলেছেন- আমাকে শুধু সুস্থ করে তােল, তােমাদের কত কোটি টাকা লাগে আমি দেবাে! কিন্তু এতাে নামী ডাক্তারগণ বাের্ড বসিয়েও তাকে বাঁচাতে পারলাে না। আর আমার এই সেক্টরের মুসল্লী এই জুমায় উপস্থিত আছেন, করােনা পজিটিভ হয়েছিলেন! তার ভাষ্যমতে ঘরের লােকজনও স্বাস্থবিধি মেনে তার থেকে দুরত্ব বজায় রাখেনি। এখন তিনি দিব্যি সুস্থ এবং তার পরিবারের সকল সদস্যও আলহামদুলিল্লাহ সুস্থই আছেন! আল্লাহর বাণী সত্য বাণী!

( ومن يتوكل على الله فهو حسبه )

প্রতিকূল পরিবেশে আমলের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যায়! এখনি আমাদের জন্য সুযােগ, আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার।

খন্দক যুদ্ধের পূর্বে পরিখা খননের এক পর্যায়ে নিচ থেকে বড় একটি পাথর বেরিয়ে আসলাে। সাহাবায়ে কেরাম শাবলের আঘাতে তা ভাঙতে পারছিলেন না। রাসূল (সা.) এগিয়ে এলেন। শাবল দিয়ে আঘাত করলেন। লােহায়-পাথরে ঘর্ষণ লেগে আগুনের ফুল্কি ছুটলাে। সে ফুল্কির আলােকচ্ছটায় তাঁর (সা.) চোখের সামনে শামের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলাে! আরেকটি আঘাত করলেন, এবারে ভেসে উঠলাে ইয়ামানের প্রতিবিম্ব।

তিনি বললেন, আল্লাহ শাম ও ইয়ামান আমাকে দিয়ে দিলেন।

মুনাফিকেরা দূরে দাঁড়িয়ে টিটকারী মারতে লাগলাে- ‘মােহাম্মাদ (সা.) নিজের ঘর রক্ষার জন্য গর্ত খুড়ে, আর শাম/ইয়ামানের স্বপ্ন দেখে!

পরবর্তীতে রাসূলের (সা.) এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের মুজাহিদ দল পৃথিবী জয় করে কৃষ্ণ সাগরের তীর পর্যন্ত তাদের তেজী ঘােড়া দৌড়ে নিয়ে গেছেন। সাগর তীরে দাঁড়িয়ে অপর প্রান্তে দৃষ্টি নিক্ষেপের চেষ্টা করলেন। কিন্তু যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। অত:পর সাগরকে উদ্দেশ্য করে বলেলেন- আমি যদি জানতে পারতাম তােমার অপর প্রান্তে জনবসতি রয়েছে, প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তাহলে আমি এই সাগরের উপর দিয়ে আমার ঘােড়া চালিয়ে দিতাম।

বিখ্যাত কবি আল্লামা ইকবালের ভাষায়-

دشت تو دشت هے، صحرا به‍ى نه چه‍وڑے هم نے. بحر ظلمات ميں دوڑائے گه‍وڑے هم نے.

“স্থল তাে স্থল, মরুভূমিও আমরা ছাড়ি নাই ॥ প্রলয়ংকারী সাগর ঢেউয়ের মাঝেও আমরা ঘােড়া দৌড়াই।”

রাসূল (সা.) প্রতিকূল পরিবেশেই এত বড় পুরষ্কারের সু-সংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। আমাদের জন্যও এখন মােক্ষম সময়। আসুন! এই পরিস্থিতিতে ধৈৰ্য্যহারা না হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি! আল্লাহর কাছেই সমাধান চাই! আল্লাহ চাইলে এক সেকেন্ডও লাগবে না। আল্লাহ চাইলে আজ আমরা মসজিদ থেকে নামায শেষে বের হওয়ার পূর্বেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দিতে পারেন! আল্লাহ কাছেই প্রাণঘাতী ভাইরাস করােনা থেকে মুক্তি পেতে করুণা ভিক্ষা চাই।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমিন।

– আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া-উত্তরা, ঢাকা, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- উত্তরা রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, খতীব-  উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদ এবং উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডট কম।

অনুলিখনে- মাহমূদ হাসান নাহিয়ান

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।