Home ইসলাম সৎ কাজের প্রতিযোগিতা

সৎ কাজের প্রতিযোগিতা

সময়ের পরিবর্তন এবং দ্রুততার মধ্যে এই নশ্বর পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। দুনিয়া একটি অস্থায়ী ছায়া, যা প্রস্থানকারী মরীচিকার ন্যায়। যার আধুনিকতা সেকেলে হয়, ক্ষমতা ও রাজত্ব নিঃশেষ হয় এবং যাবতীয় বিলাসিতা ও আনন্দ ফুরিয়ে যায়। ফেরাউনের বংশের জনৈক মুমিন ব্যক্তির উক্তি মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমে এভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় পরকাল হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস।’ সুরা আল মুমিন : ৩৯

খলিফা হজরত উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘হে মানুষ! প্রত্যেক সফরের প্রস্তুতি রয়েছে। কাজেই তোমরা দুনিয়া থেকে আখিরাত অভিমুখী সফরের জন্য তাকওয়া অবলম্বন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করো।’ এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করো; নিশ্চয়ই সেরা পাথেয় হলো তাকওয়া।’ সুরা আল বাকারা : ১৯৭

নববর্ষের আগমনে রয়েছে উপদেশ; কাজেই আমাদের উচিত এ থেকে আত্মপর্যালোচনার উপযুক্ত উপলক্ষ গ্রহণ করা এবং আখিরাতে উপকৃত হওয়া যায় এমন আমলের মাধ্যমে এর প্রতিটি অবস্থাকে মূল্যায়ন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ দিন ও রাতের পরিবর্তন ঘটান, নিশ্চয় এতে শিক্ষা রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য।’ সুরা আন নুর : ৪৪

আরও পড়তে পারেন-

মুমিন বান্দার উচিত স্বীয় আত্মা ও কর্মের তদারকি করা এবং দেখা, আগামী দিনের (পরকালের জন্য) জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে? সে কী আল্লাহর আনুগত্যে অবিচল অবস্থায় রয়েছে? তাহলে সে আরও ভালো কাজ করবে। নাকি সে উদাসীন ও সীমালঙ্ঘনকারী অবস্থায় রয়েছে? তাহলে সে সময় ফুরানোর আগেই তওবা করে ফিরে আসবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।’ সুরা আল হাশর : ১৭

হিজরি নতুন বর্ষ শুরু হয়েছে। এই নতুন বছরে নিজের আত্মার তদারকি করুন এবং যাবতীয় পাপ ও বেহায়াপনা থেকে তাকে বারণ করুন। কল্যাণ, ন্যায়পরায়ণতা ও ইবাদত-বন্দেগিতে ধৈর্যধারণ করুন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ করো তোমাদের কাছে শান্তি আসার আগে।’ সুরা আয যুমার : ৫৪

ইমাম আহমাদ (রহ.) উল্লেখ করেছেন, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব নাও এবং পরিমাপের সম্মুখীন হওয়ার আগেই তোমরা নিজেদের আমল পরিমাপ করে নাও; সেদিন উপস্থিত করা হবে তোমাদের এবং তোমাদের কোনো গোপনই আর গোপন থাকবে না। কল্যাণ ও সৌভাগ্যের গুপ্তধন হলো ব্যক্তির আত্মপর্যালোচনা; যদি সে বিচ্যুত হয় কিংবা ভুল করে তাহলে সে যেন আল্লাহর এই আহ্বানে সাড়া দেয়, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা আয যুমার : ৫৩

কাজেই আপনি আপনার দ্বীনকে হেফাজত করুন। কেননা এটিই প্রত্যেক কল্যাণের ভিত্তি। আপনার স্রষ্টার বিধি-বিধান ও নির্দেশের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা থেকে সতর্ক হোন; কেননা এগুলো যাবতীয় ক্ষতি, মসিবত ও অকল্যাণের মূল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে তাদের হৃদয় কী আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে তার জন্য বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? আর তারা যেন তাদের মতো না হয়, যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল অতঃপর বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে পড়েছিল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক।’ সুরা আল হাদিদ : ১৬

বিগত বছরের তুলনায় নতুন বছরকে অধিক কল্যাণময় ও সৎ কাজের ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করুন এবং ভালো ও কল্যাণমূলক কাজে প্রতিযোগিতা করুন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং আমলগুলোকে সুন্দর করেছে।’তিরমিজি

অতএব, সুখবর তার জন্য; যে তার জীবনে নেক আমল করে, নিষিদ্ধ কাজ এড়িয়ে যায় এবং মন্দ ও বিপথগামী পথ অনুসরণ থেকে সতর্ক থাকে। এই শ্রেণির মানুষ দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ লাভ করবে এবং মৃত্যুর পরে সে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করবে। এর বিপরীতে ধিক তার জন্য, যে তার কামনা-বাসনার অনুসরণ করে, ইবাদত-বন্দেগিতে অবহেলা করে, নানাবিধ পাপাচার-অনাচারে লিপ্ত থাকে। সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন গভীরতায় ধ্বংস হবে, এখানেই সে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। তার খাদ্য হবে জাক্কুম, তার পানীয় হবে ফুটন্ত গরম পানি।

মহররম মাস সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে অন্যতম। মহররমের রোজা অন্যান্য নফল রোজার মধ্যে উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর রাতের নামাজই (তাহাজ্জুদ) শ্রেষ্ঠ এবং ফরজ রোজার পর মহররমের রোজা উত্তম।’ সহিহ্ মুসলিম

তাছাড়া বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত যে, দশই মহররমের রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়। সুন্নত হলো মহররমের দশ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে নয় তারিখেও রোজা পালন করা। সম্ভব না হলে এগারো তারিখেও রোজা রাখা যায়। এর বাইরে আশুরা উপলক্ষ্যে বর্তমান যুগে যেসব ইবাদত ও কর্মকাণ্ড করা হয় তা প্রমাণিত নয়; কাজেই সেগুলো কোরআন-সুন্নাহর প্রমাণবিহীন বিদআত। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। দ্বীনের যে বিষয়গুলো সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত তাতেই যাবতীয় কল্যাণ নিহিত। আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীর জন্য হিজরি নতুন বছরকে বরকতময় করুন। যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করুন।

১৩ আগস্ট মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ করেছেন – মুহাম্মদ আতিকুর রহমান।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।