Home ইসলাম জশনে জুলূসে ঈদ-এ-মীদুন্নবী যৌক্তিক না অযৌক্তিক? – মাহমুদ মুজিব

জশনে জুলূসে ঈদ-এ-মীদুন্নবী যৌক্তিক না অযৌক্তিক? – মাহমুদ মুজিব

১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন হিসেবে পরিচিত। এ দিনে কেউ কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন, আবার কেউ কেউ জশনে জুলূসে ঈদে মিলাদুন্নবী করেন। মোটকথা  বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে এই দিনে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বার্ষিকী পালন করে থাকেন। “ঈদে মিলাদুন্নবী” অর্থ নবীর জন্ম উপলক্ষে খুশী বা নবীর জন্ম দিবসের উৎসব। আর “জশনে জুলূসে ঈদে মিলাদুন্নবী” অর্থ জন্ম উৎসব উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মিছিল করা।

১২ই রবিউল আওয়াল রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম বার্ষিকী পালন এবং এসব উৎসব ও অনুষ্ঠান করা হবে কি-না এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় সামনে রাখা যেতে পারে।

১-  সপ্তম হিজরী শতকের আগে তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। আর বাংলাদেশে তার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। সুতরাং সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝতে সক্ষম হবেন যে,- ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী এটা নবআবিস্কার। ইসালামের ইতিহাসে তার কোন অস্তিত্ব নেই।  সুতরাং নবআবিস্কৃত বিষয়কে শরীয়তের পরিভাষায় “বিদআত” বলা হয়ে থাকে। যা ইসলাম সম্মত পরিভাষা “সুন্নাত” এর বিপরীত শব্দ,  পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিকও বটে।

২-  রবিউল আওয়াল মাসে সোমবার সোবহে সাদেকের সময় রাসূলের জন্ম; এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই। তবে ১২ই রবিউল আওয়াল রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। এ ব্যপারে  রয়েছে ইখতেলাফ।  কেউ ৮ ই রবিউল আওয়াল সোমবার। আবার কেউ ৯ই রবিউল আওয়াল সোমবার।  আবার কেউ ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবারের কথা বলেন।

৩- ১২ই রবিউল আওয়াল রাসূলের এর জন্মতারিখ কি-না; বিষয়ট বিতর্কিত ও অনিশ্চিত। মুহাক্কিক আলেমদের মতে ৮ই রবিউল আওয়াল রাসূলের জন্মদিন। অতএব, মুহাক্কিক আলেমের মতানুসারে ১২ই রবিউল আওয়াল জন্মদিবস করা হলে তা হবে বাস্তবতা বিরোধী এবং অনিশ্চিত বিষয়ে কোন কিছু করা।

৪- ১২ ই রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মতারিখ কি-না; এ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও এ তারিখটি যে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের তারিখ; তা নিয়ে কোন মতবিরোধ নেই।  অতএব, যে তারিখটি রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের নিশ্চিত তারিখ,  সে তারিখ মুসলিম উম্মাহর জন্যে এক বেদনাময় স্মৃতি বিজড়িত তারিখ হতে পারে; আনন্দ বা উৎসবের নয়। তাহলে এ দিনে উৎসব করা হবে অসঙ্গত ও অনুচিত।

৫- যদি মেনেও নেয়া হয় যে, ১২ ই রবিউল আওয়াল রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ,  তবুও ইসলামে জন্মদিবস বা মৃত্যদিবস; জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যু বার্ষিকী পালনের কোন নীতি রাখা হয়নি। তা মানুষের সৃষ্টি। স্বয়ং সাহাবায়ে কেরামও রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস পালন করেননি। যদি সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিবস পালন করতেন, তাহলে রাসূলের জন্মতারিখ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ হওয়ার কোন অবকাশ ছিল না।

৬- রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত মোবারক নিয়ে আলোচনা করা এবং এরূপ আলোচনার মজলিস অত্যন্ত বরকতময়। রাসূল (সা.)এর প্রতি মহব্বত এবং ইশক নিয়ে এরূপ মজলিস না করে অন্য যে কোন দিন ও যে কোন মাসে করা হলে একদিকে যেমন রহমত ও বরকত লাভ করা যাবে, অপরদিকে অসঙ্গতি ও রছমের অনুসরণ করা থেকেও নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।

৭- রাসূল সাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত সারা বছর আলোচনার বিষয়। কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত সমুদয় আদর্শই রাসূলের সীরাত।  অতএব সারা বৎসরই রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত নিয়ে আলোচনা বা ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্হা হওয়া অপরিহার্য ও প্রয়োজনীয়। শুধু রবিউল আউয়াল মাস নির্ভর কিছু করা; এটা রছম ও বিদআত। এ রছমও ভেঙ্গে দিয়ে সারা বছর জুড়ে সীরাত নিয়ে আলোচনার মাহফিল করতে হবে।

৮- রাসূলের ইশক ও মুহাব্বাত ঈমানের অপরিহার্য অংশ। রাসূলের অনুসরণ প্রত্যেক মুমীনের ওপর আবশ্যিক।  রাসূলকে দিন কেন্দ্রিক স্বরন না করে পুরো জীবন জুড়ে রাসূলকে আদর্শ হিসেবে মেনে নিন। তাতেই ব্যাক্তিকে রাসূলের প্রকৃত আশেক বলা হবে।

৯- যারা ১২ ই রবিউল আউয়ালকে বিভিন্নভাবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তার মর্যাদা ও গুরুত্ব বুঝিয়েছেন, জান্নাতের গ্র্যান্টির হাদীস শুনিয়ে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত ও বিভ্রান্ত করছেন, তারা নিশ্চয় সাধারণ মানুষকে গোমরাহ করছেন। প্রতারিত করছেন।  এ ক্ষেত্রে কিছু হাদীসের বর্ণনা উপস্থাপনা করা হয়, যার ব্যাপারে হাদীস বিশারদগণ বলে থাকেন, তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যে বর্ণনা।

১০- কুরআন হাদীসের বর্ণনায় দুটি ঈদের কথা পাওয়া যায়। তৃতীয় কোন ঈদের কথা নেই।

১১- মিলাদুন্নবীকে বিশ্বাস করতে হবে, আর সীরাতুন্নবীকে মানতে হবে,  নিজের জীবনে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, মিলাদুন্নবী আর ঈদ এ মিলাদুন্নবী এক বিষয় নয়।

লেখক: সহকারী সম্পাদক- মাসিক আল হেরা, সেক্রেটারি জেনারেল- অরাজনৈতিক ও সেবামূলক সংগঠন “মশাল” এবং শিক্ষক- জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রাম।