Home ওপিনিয়ন আসুন! নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করে ঐক্যের কথা বলি

আসুন! নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ করে ঐক্যের কথা বলি

।। নূর মোহাম্মদ ।।

চরমোনাই পীর সাহেবের দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা, নায়েবে আমির সাহেব হজ্ব থেকে বরিশালে ফিরে ২,১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিয়েছেন।

এই ঘটনায় অনলাইন দুনিয়া উত্তাল। শোডাউনের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক লেখালেখি চলছে। স্ট্যাটাস, মন্তব্য, ট্রল দেখে আমিও দু’কলম লেখার তাগিদ অনুভব করছি।

শোডাউন ঠিক-বেঠিক; সেই তর্কে যাচ্ছি না। আমার চোখ এই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষের ভাইদের প্রতিক্রিয়াতে। অবাক চোখে দেখছি, ইসলামপন্থী মানুষগুলো কতটা প্রতিক্রিয়াশীল, কতটা রিএক্টিভ, কতটা প্রান্তিক। এই ঘটনায় ক্ষমতার রাজনীতি করা দলগুলো কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে না, প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ইসলামি দল দাবি করা সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক। হায় আল্লাহ!

পক্ষের লোকজনের যুক্তি শুনে হাসি, বিপক্ষের লোকজনের প্রতিক্রিয়া দেখে কাঁদি। আমার ভাবনা জাগে, সেক্যুলার শক্তি অযথাই ইসলামি দলগুলোর পেছনে শক্তি ব্যয় করছে। এক ইসলামি দলের পাঞ্জাবি টেনে ছিঁড়ে ফেলার জন্য আরেক ইসলামি দলই তো যথেষ্ট। কোনো সুযোগে যদি কোনো ইসলামি দল ক্ষমতায় আসীন হয়, পরেরদিন তাকে লাত্থি মেরে ক্ষমতার মসনদ থেকে সমূদ্রে ডুবানোর সকল আয়োজন আরেক ইসলামি দল করেই ছাড়বে।

হজ্ব থেকে ফিরে রাজনৈতিক শোডাউন দিতে হবে কেন রে ভাই? আপনি কি এটা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারি নেতা। আপনার তো অজানা থাকবার কথা নয়- এটা নিয়ে বিতর্ক উঠবে? দেশ চালানোর স্বপ্ন দেখেন, স্টেজে গলা উঁচিয়ে অন্য অনেককে বাতিল বলে উড়িয়ে দেন, এমন একজন বড় নেতা হয়ে আপনার এতটুকু প্রজ্ঞা না থাকলে চলবে? রাজনৈতিক শোডাউন দেয়ার সময় পেলেন না?

আর ভাইসব, শোডাউন দিয়ে কি পীরসাহেব কবিরা গুনাহ করে ফেলেছেন? তার হজ্ব কি বাতিল হয়ে যাবে? আমি তো খুব খুশি। বরিশাল শহরে ২,১০০ মোটরসাইকেল হুজুরদের! মাশাআল্লাহ। এটা তো ইসলামি চিন্তাধারার লোকদের কলিজা বড় হওয়ার মতো ব্যাপার! পাঞ্জাবি-পাগড়ি পরা লোকজন বরিশাল শহর হোন্ডা নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে- দেখে আপনার অবশ্যই ভালো লাগা উচিত। এই শোডাউনটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির কেউ দিলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতেন, আহা! ইসলামিষ্টরা যদি রাজনীতি বুঝত!

আমি সকল ইসলামি দলকে শক্তিশালী দেখতে চাই। পারস্পরিক কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি বন্ধ করুন। ছোটখাটো মতপার্থক্য ভুলে থাকার চেষ্টা করুন। প্রত্যেকেই কলিজাটা বড় করুন। নেতৃত্ব দিতে হলে বিরাট হৃদয়ের অধিকারী হতে হয়। তাই আসুন, ঐক্যের কথা বলি।

সবচেয়ে হতাশার ব্যাপার হলো, তরুণ ইসলামিষ্টরাও কী অবলিলায় প্রান্তিকতার চাষাবাদ করছে। আল্লাহর দাসত্ব করতে গিয়ে কখন যে আমরা নির্দিষ্ট দলের ভুলত্রুটির দাসত্ব করে ফেলি, বুঝতে পারি না।

দলবাজী বন্ধ করুন। চিন্তার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন, অনেক তারা একসাথে খেলা করছে।

– নূর মুহাম্মদ,  তরুণ প্রকাশক, লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।