Home ইসলাম রুমির কাব্যে প্রভাবিত হয়ে ক্যাথলিক পাদ্রির ইসলাম গ্রহণ

রুমির কাব্যে প্রভাবিত হয়ে ক্যাথলিক পাদ্রির ইসলাম গ্রহণ

ছবি- সংগৃহিত।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন ক্যাথলিক পাদ্রি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ত্রয়োদশ শতাব্দির বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব, দার্শনিক ও সুফি কবি মওলানা জালালুদ্দিন রুমির কাব্যে প্রভাবিত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ক্রেগ ভিক্টর ফেন্টার ইসলাম গ্রহণের পর ইসমাইল নাম ধারণ করে ও স্থায়ীভাবে তুরস্কের কোনিয়া অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দশক যাবৎ ধর্ম বিষয়ের অধ্যাপনা করেন। 

সম্প্রতি তিনি তুরস্কের আঙ্কারা শহরের কোনিয়াতে তিনি ভ্রমণে আসেন। এ সময় আনাদোলু এজেন্সিকে নিজের দীর্ঘ যাত্রার গল্প বর্ণনা করেন। দৈনিক কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো। 

১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে ফেন্টার জন্মগ্রহণ করেন এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে বেড়ে ওঠেন। অতঃপর পরিবারের অনুরোধে একটি ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর ক্যাথলিক চার্চের একজন যাজক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

একদা ফেন্টার নিজের মনে শূন্যতা অনুভব শুরু করেন। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি প্রোগ্রামে আল্লামা রুমির ২২তম প্রজন্ম তার নাতনি এসিন সেলেবি বায়রুর সঙ্গে থাকেন। এ সময়ে তিনি আল্লামা রুমির কাব্য ও ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানতে পারেন।

২০০৫ সালে বায়রুর আমন্ত্রণে ফেন্টার তুরস্কের কোনিয়া পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি রুমির ‘শবে আরুস’ অনুষ্ঠান দেখেন। অনুষ্ঠানের সময় আধ্যাত্মিক পরিবেশে সুফি নৃত্য দেখে তিনি বেশ প্রভাবিত হন। অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করেন। 

আরও পড়তে পারেন-

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে ইসমাইল বলেন, ‘একজন ধার্মিক খ্রিস্টান হিসেবে আমি বেড়ে উঠি। আমার পরিবারে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ ছিল। আমার দাদির ইচ্ছা ছিল, আমি যেন একজন যাজক হই। তাই প্রতি রবিবার পৌরহিত্য সম্পর্কে জানতে চার্চে যেতাম।’ 

ধর্মশিক্ষায় অনাগ্রহ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সময় আমার অনেক কিছুই বোধগম্য হতো না। আমিও স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু সঠিক বলে মনে হতো না। ছাত্রদের আমি যে তথ্য শেখানোর চেষ্টা করতাম, আমার কাছে এর কোনো তাৎপর্য ছিল না। তাই আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় অনুসন্ধানে কাটে। আমি আনুষ্ঠানিক শিক্ষকতা করতাম। তবে যা শিখাতাম এর কোনো কিছুই আমি বিশ্বাস করতাম না।’ 

‘এরপর আমি গির্জা ছেড়ে দিই। পরিবার নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাই এবং সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহী হই। সংগীতে অনেক কিছুই ছিল, কিন্তু হৃদয়ে শূন্যতা বিরাজ করছিল। সংগীত শুনে মানুষ অভূতপূর্ব সাধুবাদ জানায়। কিন্তু মনে হচ্ছিল আমি কোনো কিছু হারিয়ে ফেলেছি।’

বায়রুকে ইসমাইল বললাম, ‘আমি নিজেকে সমুদ্রের অতল গহ্বরে আবিষ্কার করেছি। আমি জানি না, গুপ্তধন কোথায় রয়েছে।’ এ কথা শুনে বায়রু বললেন, ‘আপনি ইতিমধ্যে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছেন। কারণ আপনি তা চেয়েছেন।’ তাঁর এ কথা আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। এরপর ২০০৫ সালে বায়রুর আমন্ত্রণে আমি কোনিয়া অঞ্চলে যাই। সেখানে ঐতিহ্যবাহী শবে আরুস অনুষ্ঠান দেখি। তখন মনের ভেতর বিশেষ কিছু অনুধাবন করি।’ 

কোনিয়ায় অবস্থানকালে সুফি শিক্ষক নাদির নাদির কার্নিবুকের কাছে ফেন্টার ইসলাম ও সুফিবাদ সম্পর্কে দীক্ষা লাভ করেন। তাকে নামাজ পড়তে দেখে নামাজের পদ্ধতি শিখতে বলেন। এরপর তার অন্তরে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এরপর অনবরত কান্না করতে থাকেন।মনে মনে অনুধাবন করেন যে রুমি তাকে ডাকছে। তখন তিনি রুমির কাছে যাওয়ার তীব্র বাসনা অনুভব করেন। 

এরপরই ফেন্টার ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইসমাইল নাম ধারণ করেন। এরপর প্রতিবছর কোনিয়া পরিদর্শনে আসতে থাকেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে রুমির ইসলামী নির্দেশনা অনুসরণ কঠিন ছিল। তাই কোনিয়ায় স্থায়ীভাবে চলে আসার কথা ভাবেন। 

ইসমাইল বলেন, এক রাতে রুমিভক্ত এক দরবেশ আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি বললাম, ‘আমার বাবা-মা মারা গিয়েছেন’। এরপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তাহলে আমরা তোমার পরিবার।’ তাঁর এ কথা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এরপর আমি কোনিয়া এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।