Home ইসলাম হিজাব নিষেধাজ্ঞায় জার্মানির মুসলিম নারীদের দুর্ভোগ

হিজাব নিষেধাজ্ঞায় জার্মানির মুসলিম নারীদের দুর্ভোগ

২৪ বছর বয়সী শিলান আহমদ সিরিয়ান বংশোদ্ভূত একজন হিজাবি মুসিলম নারী। জার্মানির এরফুর্টের একটি নার্সারিতে চাকরির আবেদন করেন। ছবিসহ রেজুমি দিয়ে তিনি আবেদন করেন। ফোনযোগে নার্সারি প্রধান তাকে সাক্ষাতের জন্য আসতে বলেন। কিন্তু সরাসরি সাক্ষাতে শিলান আহমদের দিকে তাকিয়ে সেই পরিচালক নিজের সহকর্মীকে বলেন, ‌‘তুমি কীভাবে এই নারীকে আমার সঙ্গে কথা বলার অনুমোদন দিয়েছ?’ 

ইন্টারভিউতে হিজাব নিয়ে এমন সমস্যা হতে পারে তা আহমদ শিলান ভাবনায় ছিল না। কারণ নিয়োগকারী দল আগেই হিজাবসহ তার ছবি দেখেছে। এরপর তিনি বাড়ি গিয়ে মায়ের কাছে কান্না করে বলেন, ‘আমি আমার হিজাব খুলে ফেলব। আমি আর পারছি না। চাকরির ইন্টারভিউ থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি আর পারছি না।’ 

জার্মানির আদালতের রায়

জার্মানির সংবিধান মতে কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈষম্য বেআইনি। তা ছাড়া অফিসের সব কর্মীর মধ্যে সমান অধিকার নিশ্চিত করাও সাংবিধানিক আইন। কিন্তু দেশটির সংবিধানে বর্ণিত ধর্মীয় বৈষম্যের পরিচয় ও সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০১৭ সালের জুলাই মাসে দি ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস (ইসিজে) নিয়োগকর্তাদের ‘নিরপেক্ষতা নীতি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধের অনুমোদন দেয়। তবে নিয়োগকর্তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, ‘নিরপেক্ষতা নীতি’ (নিউট্রালিটি পলিসি) তাদের ব্যবসার জন্য অপরিহার্যতা প্রমাণ করতে হবে। 

অবশ্য ২০১৭ সালের আইনের আগে নিরাপত্তা ছাড়া অন্য কোনো কারণে ধর্মীয় পোশাকে বিধি-নিষেধ আরোপের অনুমতি ছিল না। একটি ডে-কেয়ার সেন্টারের শিক্ষক ও একজন ক্যাশিয়ারকে নিয়োগকর্তারা অফিসে মুসলিম স্কার্ফ পরতে নিষেধ করার ঘটনার পর ইসিজে-এর কাছে মামলাটি আসে। 

২০১৬ সালে সেই মুসলিম নারী অফিসে দায়িত্ব পালনকালে হিজাব পরা শুরু করেন। এর আগে আরো দুই বছর তিনি সেখানে কাজ করেছেন। ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান। কর্মক্ষেত্রে ফেরার দুই মাস আগে সেন্টারের সব কর্মী জন্য ‘রাজনৈতিক, দার্শনিক ও ধর্মীয় প্রতীক’ পরায় নিষেধ করে ‘নতুন নিরপেক্ষতা নীতি’ চালু করে, যা বাবা-মা, সন্তান ও তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে দৃশ্যমান থাকে। 

সেই মুসলিম নারী ফেরার পর হিজাব পরার সিদ্ধান্ত অটল থাকে। আর অফিসের নতুন নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আরেকজন সহকর্মীকে ক্রস নেকলেস পরা বাদ দিতে বলা হয়। একইভাবে হিজাব পরা বাদ না দেওয়ায় জার্মান চেইন ফার্মেসির একজন মুসলিম ক্যাশিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়। 

আরও পড়তে পারেন-

হিজাব পরা নারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছে ইউরোপীয় আদালত। আদালত এর কারণ হিসেবে জানায়, নিরপেক্ষতা নীতিগুলো ‘সাধারণ এবং অভিন্নভাবে’ সবার জন্য প্রণনয় করা হয় এবং তা সরাসরি ‘বৈষম্য’ বলে বিবেচিত হতে পারে না। 

হামবুর্গের নাগরিক অধিকার আইনজীবী তুগবা উয়ানিক জানান, গত জুলাইয়ের ইসিজে-এর নির্দেশনা অনুসারে কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতীক সুস্পষ্ট আর্থিক ক্ষতি বা ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে তা দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করতে পারে। তা ছাড়া সংবাদ মাধ্যমে এ ঘটনার বিবরণের অনেক প্রভাব থাকতে পারে। 

উয়ানিক আরো বলেন, ‘ইউরোপীয় আদালতের রায়টি নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন কর্মক্ষেত্রে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আইনসম্মত। আমি মনে করি, নিয়োগকর্তারা শর্তগুলো না বুঝে এসব শিরোনাম শুনেছেন। আবার অনেকে বিষয়টি না পড়ে বিচার-বিবেচনা না করেই বলে ফেলে, আমাদেরও এখন নিরপেক্ষতা নীতি আছে।’

বাস্তবজীবনে জার্মানির আইনের প্রভাব

উয়ানিক জানান, বাস্তব জীবনে জার্মানির বিভিন্ন আইনের প্রভাবগুলো এখনও পরিমাপ করা সহজ নয়। বেশির ভাগ চাকরিতে মাথাসহ সিভির প্রয়োজন হয়, সম্ভবত বেশির ভাগ নারীরা জানেন না যে হিজাব বা অন্য কোনো কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। 

অথচ জার্মানিসহ ইউরোপে হিজাব পরিহিত অনেক নারীর কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের ভালো অভিজ্ঞতা আছে। তা ছাড়া ক্যাশিয়ার, ফার্মাসিস্ট বা নারী বিক্রয়কর্মীদের হিজাব পরতে দেখা এখন আর অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তদুপরি হিজাবি মুসলিম নারীদের অনিশ্চয়তায় জীবন পার করতে হচ্ছে। 

জার্মানিতে রবিবারের নির্বাচনে আগের প্রচারণায় দেশটির অধিকাংশ রাজনীতিবিদরা ‌’নিরপেক্ষতা আইন’-এর ব্যাপারে গুরত্ব দেননি। তাই তাদের নির্বচনী এজেন্ডায় তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। একমাত্র বামপন্থী দলটি হিজাবের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। এমনকি তারা কর্মক্ষেত্রে এর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতাও করেছে। তাদের অবস্থান ডানপন্থী জার্মান দলের বিপরীত। ডানপন্থী দলগুলো ফ্রান্সের মতো জার্মানির স্কুল ও সরকারি চাকরিতেও হিজাবকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে চায়। 

সিরিয়ান তরুণীর দৃঢ় মনোভাব

সর্বশেষ কথা, সেই সিরিয়ান হিজাবি নারী শিলান আহমদ অদ্যবধি নিজের হিজাব ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। হিজাবের কারণে চাকরির ইন্টারভিউ থেকে বরখাস্ত হয়ে তিনি এ বিষয়ে অনলাইন ম্যাগাজিনে একটি আর্টিকেল লেখেন। এরপর জার্মানির গ্রিন পার্টিতে যোগ দেন। 

বর্তমানে শিলান নারী অধিকার নিশ্চিত করতে একজন অধিকারকর্মী বা সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে চান। তিনি বলেন, হিজাব নারীর ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। কেউ কাউকে কোনো বিষয়ে বাধ্য করতে পারে না। কে কোন পোশাক পরবে তা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এতে কোনো পোশাক পরতে বাধ্য করা বা পরিহারে বাধ্য করার অধিকার কারো নেই।

সূত্র : আলজাজিরা।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।