আতাউর রহমান খসরু: ইসলাম প্রাণীর সব মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। খাদ্য-পানীয় থেকে শুরু করে প্রাণীর চিকিৎসা-বিশ্রাম নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। যেমন—
১. সদয় আচরণ করা : ইসলাম প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ দেয়। যারা প্রাণীর প্রতি নির্দয় আচরণ করে তাদের নবী (সা.) হুঁশিয়ার করেছেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (সা.)-এর কাছ দিয়ে মুখমণ্ডলে দাগ দেওয়া একটি গাধা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বলেন, তোমরা কি জানতে পারোনি আমি সে ব্যক্তিকে অভিশাপ করেছি যে তার পশুর চেহারায় দাগ দেয় বা চেহারায় প্রহার করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫৬৪)
২. বিনা প্রয়োজনে প্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ : ইসলাম ‘তাইয়িব’ তথা মানুষের দেহের জন্য উপকারী ও হালাল প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ করেছে। তবে বিনা প্রয়োজনে একটি চড়ুইও হত্যা করতে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে একটি চড়ুই বা তার চেয়ে বড় কিছু হত্যা করে, তবে কিয়ামতের দিন তারা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩৯৯৬৯)
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
৩. গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা : গবাদি পশুর মধ্যে যেন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অসুস্থ পশুকে যেন সুস্থ পশুর মধ্যে নিয়ে যাওয়া না হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৭১)
৪. পশু-পাখির যত্ন নেওয়া : সাহাল ইবনে হানজালিয়্যা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যার পেট পিঠের সঙ্গে লেগে গেছে। তিনি বললেন, তোমরা এসব বোবা চতুষ্পদ প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কোরো। তোমরা তাতে আরোহণ করলে সুন্দরভাবে কোরো এবং তা আহার করলেও ভালোভাবে কোরো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)
৫. পশু-পাখিকে মানসিকভাবে কষ্ট না দেওয়া : ইসলাম পশু-পাখির মানসিক সংবেদনশীলতার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) তার পিতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজনে অন্যত্র গেলেন। আমরা দুটি বাচ্চাসহ একটি পাখি দেখতে পেয়ে বাচ্চা দুটি ধরে নিয়ে এলাম। মা পাখিটা সঙ্গে সঙ্গে এলো এবং পাখা ঝাঁপটে বাচ্চার জন্য অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিরে এসে বলেন, কে পাখির বাচ্চা নিয়ে এসে তাকে অস্থিরতায় ফেলেছে? বাচ্চাগুলো তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। তিনি আমাদের পুড়িয়ে দেওয়া একটা পিঁপড়ার ঢিবি দেখতে পেয়ে বলেন, কে এগুলো পুড়িয়েছে? আমরা বললাম, আমরা। তিনি বলেন, আগুনের প্রভু ছাড়া আগুন দিয়ে কিছুকে শাস্তি দেওয়ার কারো অধিকার নেই।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৬৭৫)
৬. গবাদি পশুর খাদ্য সংরক্ষণ করা : ইসলাম গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দূর করতে খাদ্য সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানের ঘোড়ার জন্য তৃণভূমি সংরক্ষণ করেছিলেন।’ (মাউসুআতুল কুবরা, পৃষ্ঠা : ২১৯)
প্রাণীর প্রতি মমত্বে পরকালীন মুক্তি
ইসলাম পশু-পাখির অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি শুধু মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের ওপর ছেড়ে দেয়নি; বরং তার সঙ্গে পরকালীন জবাবদিহির বিষয়টি যুক্ত করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছিল। সে তাকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩১৮)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম