Home ইসলাম মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধে কোরআনের নির্দেশনা

মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধে কোরআনের নির্দেশনা

-প্রতীকি ছবি।

আতাউর রহমান খসরু:‘মানবজাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ বার্তা দিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাস্কো শহরে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ব্যাপারে নানা ধরনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধন প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ‘মানবসৃষ্ট’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা নিজেরাই কবর খুঁড়ছি।’ মূলত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ, উন্নয়নের নামে বনভূমি ধ্বংস, পাহাড়-নদীসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংসকরণ পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং ক্রমেই মানবজাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। মানবসৃষ্ট এই দুর্যোগের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কোরো না। তোমরা সৎকাজ কোরো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

আরও পড়তে পারেন-

কোরআনে মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ব্যাখ্যা

প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে কোরআনের বক্তব্যের নির্যাস হলো—আল্লাহ প্রকৃতিকে সুনিপুণভাবে ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষই তার কাজের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে, তাদের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তৈরি হচ্ছে। মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ব্যাপারে কোরআনের বক্তব্যের তিনটি দিক—

১. প্রকৃতি ভারসাম্যপূর্ণ : আল্লাহ প্রকৃতি ও পরিবেশকে মানুষের উপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি নেই। যদি না মানুষ বিপর্যয়কর কাজ না করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফেরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ৩-৪)

২. প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের কামাই : আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন তথা পৃথিবীর প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে মানুষের হাতের কামাই বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৪১)

৩. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরোক্ষ কারণ : ইসলামের ভাষ্যমতে, গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ, বনভূমি ধ্বংস ও নদী-নালার দূষণের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ কারণ ছাড়াও আরো কিছু পরোক্ষ কারণ আছে। তা হলো মানুষ যখন তার স্রষ্টার অবাধ্য হয় এবং পৃথিবীতে পাপাচার, অন্যায়, অবিচার ছড়িয়ে পড়ে তখন সৃষ্টি জগতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত প্রকৃতি তার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অবাধ্য হলো। ফলে আমি তাদের ওপর প্রবাহিত করলাম বাঁধভাঙা বন্যা। তাদের উদ্যান দুটি পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুটি উদ্যানে, যাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ ও কিছু কুলগাছ।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৬)

মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধে করণীয়

প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে কোরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদিস দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া যায়। এমন কিছু আয়াত ও হাদিস এবং এগুলোর শিক্ষা তুলে ধরা হলো—

১. মানুষের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে : পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত মানুষের আচরণই দায়ী। তাই পৃথিবীকে রক্ষা করতে মানুষের আচরণেই পরিবর্তন আনতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেছেন তা পরিবর্তন করবেন এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৫৩)

২. ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার : পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় মানুষকেই প্রথম ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার করতে হবে। এটাই আত্মরক্ষার প্রথম সোপান। আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না। তোমরা মুমিন হলে তোমাদের জন্য এটাই কল্যাণকর।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৮৫)

৩. সচেতনতা তৈরি : প্রকৃতি ও পরিবেশ যে মানুষের সেবক ও বন্ধু এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। যেন তারা ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রাকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন?’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ২০)

৪. সামগ্রিক কল্যাণচিন্তা লালন : ইসলাম ব্যক্তিগত ও আঞ্চলিক চিন্তা থেকে বের হয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশকে সামগ্রিক জায়গা থেকে বিবেচনা করতে শেখায়। যেন কোনো ব্যক্তি বা দেশের কাজ দ্বারা সমগ্র পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সমগ্র সৃষ্টিজগৎ আল্লাহর পরিবারভুক্ত। আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সৃষ্টি যে তাঁর পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী।’ (সুনানে তিবরানি)

৫. প্রতিনিধিত্বের ধারণা প্রয়োগ : মানুষ পৃথিবীতে মহান স্রষ্টার প্রতিনিধি। আর এই প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যে আছে পৃথিবীর জন্য কল্যাণকামিতা ও তা রক্ষার দায়। যদি কেউ পৃথিববীতে কল্যাণময় জীবনধারণ করতে না পারে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহর যথার্থ প্রতিনিধি বিবেচিত হবে না। পবিত্র কোরআনে যেমনটি বলা হয়েছে, ‘স্মরণ কোরো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি প্রেরণ করছি। তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে, রক্তপাত করবে?’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩০)

মানুষ পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে যতটা অসংযত ও অপরিণামদর্শী আচরণ করবে, ভবিষ্যতে তাকে সে পরিমাণই দুর্যোগ পোহাতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে সে তা (তার পরিণতি) দেখবে।’ (সুরা জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন